হার্টের জন্য ক্ষতিকর যেসব খাবার।

হার্ট আমাদের দেহের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই হার্ট কি করে সুস্থ্য রাখা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তার জন্য সবার আগে খাদ্য তালিকায় অর্থাৎ ডায়েটে নজর দিতে হবে।

কিন্তু এই লভনীয় ফাস্ট ফুডের দুনিয়াই নিজেকে সামলিয়ে রাখাই কষ্ট। শুধু যে ফাস্ট ফুডের তেল আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর তা কিন্তু নয় ফাস্ট ফুডে থাকা অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও মসলাও ক্ষতিকারক।

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হার্টের রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। আমরা একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে দিয়ে আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট, হার্টের রোগের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। নিচে এমন কিছু খাবার দেওয়া হলো যেগুলো আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর –

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

রেস্তোঁরা এবং ফাস্টফুডের দোকানে ভাজা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট এবং লবণ থাকে যা আপনার হার্টের জন্য খারাপ।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে ব্যক্তিরা সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়েছিলেন তাদের প্রারম্ভিক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল।

তাই জলপাই তেল দিয়ে ঘরে বসে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরি করে খেতে পারেন।

সব থেকে ভালো হয় যদি মিষ্টি আলু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খান।

চিকেন ফ্রাই

চিকেন ফ্রাই খাওয়া মানে শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালোরি, ফ্যাট এবং সোডিয়াম যুক্ত করা। গবেষণায় দেখা গেছে ভাজা খাবার টাইপ-2 ডায়াবেটিস, স্থূলত্ব এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ।

স্থূলত্ব এবং উচ্চ রক্তচাপ এগুলো হার্টের রোগের কারণ।

আইসক্রিম

আইসক্রিমে চিনি, ক্যালোরি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। অতিরিক্ত ফ্যাট এবং চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যায়।

ফলে ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

আলুর চিপস

খুবই মুখরোচক একটি স্নাক্স আলু চিপস। কিন্তু আলু চিপস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। কারণ এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং লবণের পরিমাণ বেশি থাকে যা হার্টের জন্য ভালো না।

চিনি, লবণ, ফ্যাট জাতীয় খাবার

খাবারের সাথে উচ্চ পরিমাণে লবণ, চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

আপনি যদি আপনার হার্টকে সুস্থ্য রাখতে চান তাহলে ডায়েটে ফল এবং শাকসবজি, আস্ত শস্যদানা এবং কম ফ্যাটযুক্ত খাবার রাখুন।

লাল মাংস

অতিরিক্ত পরিমাণে লাল মাংস গ্রহণের ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাই।

কারণ এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা খারাপ (LDL) কোলেস্টেরলকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। খারাপ (LDL) কোলেস্টেরল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সোডা বা কোমলপানীয়

অল্প পরিমাণে চিনি খাওয়া ক্ষতিকর নয়, তবে সোডায় বা কোমলপানীয়তে চিনি পরিমাণে বেশি থাকে। এতে যারা সোডা পান করেন তাদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং স্থূলতার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এছাড়া টাইপ-2 ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগেরও ঝুঁকি রয়েছে।

বেকড খাবার

কুকিজ, কেক এবং মাফিন এসব খাবারগুলোতে প্রচুর চিনি ব্যবহার করা হয়. তাই এসব খাবার ওজন বৃদ্ধি করতে পারে এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

কুকিজ, কেক এবং মাফিন এসব খাবারগুলো প্রধান উপাদান হল সাদা ময়দা, যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা করতে পারে।

সাদা ভাত, রুটি এবং পাস্তা

সাদা ভাত, সাদা আটার রুটি, পাস্তা এবং সাদা ময়দা থেকে তৈরি খাবারগুলোতে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ অনুপস্থিত কম থাকে।

আমাদের শরীর পরিশোধিত আটা বা ময়দা দ্রুত চিনিতে রূপান্তর করে, যা দেহ ফ্যাট হিসাবে সঞ্চয় করে।

পরিশোধিত শস্যগুলিতে উচ্চমাত্রার ডায়েট পেটের চর্বি সৃষ্টি করতে পারে, যা হার্টের রোগ এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিসের সাথে যুক্ত।

পিজ্জা

আপনি যদি ঘরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে পিজ্জা তৈরি করেন তবে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা বাইরে থেকে পিজ্জা খেয়ে থাকি।

যেটা আমাদের শরীরের পক্ষে স্বাস্থ্যকর না। কারণ এতে বেশি পরিমাণে সোডিয়াম, ফ্যাট এবং ক্যালোরি থাকে যা আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর।

এলকোহল

আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যা না থাকে তাহলে পরিমাণ মতো এলকোহল গ্রহণ হার্টের ক্ষতি করবে না। অতিরিক্ত মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোক এবং ওজন বাড়তে পারে।

মাখন

মাখনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে যা খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং হার্টের রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তাই মাখন পরিমান মতো খেতে হবে। আর যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা মাখন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

এসব খাবার গুলো হার্টের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি এই খাবার গুলো কখনই খেতে পারবেন না। অবশ্যই পরিমান মতো খেতে হবে।

তবে আপনার যদি হার্টের সমস্যা থাকে বা ডায়াবেটিস কিংবা কোন মেডিকেল কোর্সের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

রেফারেন্স: