বেকিং সোডা অ্যাসিডিটি নিরাময়ে, মুখের ঘা ও কিডনি রোগের মাত্রা কমাতে কার্যকরী।

বেকিং সোডা, কেক মাফিন জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয়। শুধু খাবার তৈরিতে নয়, ব্যবহার করা যাবে নিত্যদিনের গৃহস্থালি কাজে, শারীরিক সুস্থতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়ও।

বেকিং সোডা আসলে কি?

আসলে বেকিং সোডাতে থাকে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট। এতে নাহকোলাইট থাকে যা প্রাকৃতিক খনিজ ন্যাট্রন। ইজিপ্সিয়ানরা প্রাচীন কালে এটিকে সাবান হিসাবে ব্যবহার করতেন যা বর্তমানে রান্নার একটি সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে।

বেকিং সোডার উপকারিতা

প্রাকৃতিক দুর্গন্ধনাশক, হাত ও দাঁত পরিষ্কারের জন্যও বেকিং সোডা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিচে বেকিং সোডার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

চুলকানি ও ত্বকের জ্বালাপোড়া দুর করে:

ত্বক রোদে পুড়ে গেলে যে জ্বালাপোড়া হয় তা দুর করতে, অ্যালার্জি, কোন পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যথা কমাতে ১ চা চামচ সোডার পেস্ট তৈরি করে নিন। ত্বকের যেখানে সমস্যা সেখানে লাগিয়ে নিন। এই পেস্ট দিনে ২ থেকে ৩ বার লাগালে উপকার পাবেন।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের মাত্রা কমাতে:

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে (CKD) আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। কিডনি অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ কিডনি রক্ত থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য এবং পানি অপসারণ করতে সহায়তা করে। একই সাথে, কিডনি পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

কিডনি রোগে আক্রান্ত ১৩৪ জন প্রাপ্তবয়স্কদের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (বেকিং সোডা) গ্রহণকারীদের কিডনির ক্ষতির মাত্রা হ্রাস পায়। তবে বেকিং সোডা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

অ্যাসিডিটি নিরাময়ে:

অম্বল, অ্যাসিডিটি, বুকে জ্বালাপোড়া খুবই বেদনাদায়ক। অ্যাসিডিটির কারণ হল অত্যধিক খাওয়া, স্ট্রেস এবং চিটচিটে বা মশলাদার খাবার খাওয়া। বেকিং সোডা অ্যাসিডিটির নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।

এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা দ্রবীভূত করুন এবং মিশ্রণটি ধীরে ধীরে পান করুন। বেকিং সোডাতে সোডিয়ামে খুব বেশি। এটির অতিরিক্ত ব্যাবহারে হার্টের সমস্যা হতে পারে।

মাউথওয়াশ হিসাবে:

দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা ও মুখের কোণে যেসব স্থানে ব্রাশ পৌঁছায় না যেসব স্থানে বেকিং সোডা পৌঁছায় পরিষ্কার করে। তাই অনেকে মাউথওয়াশের পরিবর্তে বেকিং সোডা ব্যবহার করেন।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি নিঃশ্বাসকে সতেজ করে এর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্টের কারণে। এক্ষেত্রে আধা গ্লাস হালকা গরম পানিতে ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলকুচি করুন।

মুখের ঘা কমাতে:

মুখের ভেতরে ঠোটের নীচে ও মাড়িতে মুখের ঘা হয়ে থাকে। এটা দেখতে চারপাশে লাল আর মাঝখানে সাদা। আকারে ছোট হলেও বেশ যন্ত্রনাদায়ক এটা। বেকিং সোডা মুখের ঘা কমাতে কার্যকরী। এক চামচ বেকিং সোডা ১-২ কাপ পানিতে মিশিয়ে নিন। তারপর বেকিং সোডা মেশানো পানি মুখে নিয়ে ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড কুলকুচি করে ফেলে দিন।। এটি দিনে কয়েকবার করুন।

দাঁত সাদা করতে:

দাঁত সাদা করার জন্য বেকিং সোডা একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে বেকিং সোডাযুক্ত টুথপেস্টগুলি দাঁত সাদা করতে এবং দাঁতের ফলক দূর করতে কার্যকর ছিল। কারণ বেকিং সোডায় অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা মুখে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া সাথে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে।

অনুশীলনের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে:

বেকিং সোডা, যা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট নামেও পরিচিত, ক্রীড়াবিদদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় পরিপূরক। কিছু সমীক্ষা দেখায় যে বেকিং সোডা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করতে সহায়তা করতে পারে।

তীব্র ব্যায়ামের সময় আমাদের পেশীর কোষগুলি ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপাদন করতে শুরু করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড কোষের ভিতরে থাকা পিএইচ (pH) কমিয়ে দেয় যা পেশীগুলিকে দুর্বল করে দেয়।

এতে একটি উচ্চ পিএইচ থাকে, যা ক্লান্তি বিলম্বিত করতে সহায়তা করতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যারা বেকিং সোডা গ্রহণ করে নাই তাদের তুলনায় যারা বেকিং সোডা গ্রহণ করেছিলেন তারা ৪.৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করেছিলেন।

নির্দিষ্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা উন্নত করতে পারে:

ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। কিছু গবেষণা দেখায় যে বেকিং সোডা কেমোথেরাপির ওষুধগুলিকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করতে পারে। বেকিং সোডা পরিবেশকে টিউমারগুলির জন্য কম অ্যাসিড তৈরি করতে পারে যা কেমোথেরাপি চিকিৎসা উপকার করে।

ফ্রিজের গন্ধ দূর করে:

ফ্রিজ থেকে দুর্গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডা দারুণ কাজে দেয়। এতে আছে দুর্গন্ধ প্রতিরোধী উপাদান। একটি ছোট পাত্রে বেকিং সোডা নিয়ে তা ফ্রিজে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিন। এতে ফ্রিজের গন্ধ কমে যাবে।

জামা কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে:

জামা কাপড় ভালো করে পরিষ্কার করার জন্য বেকিং সোডা খুবই কার্যকরী. এটি একটি ক্ষার- যা ময়লা এবং দাগ দূর করতে সহায়তা করতে পারে। কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য বেকিং সোডারও জুড়ি নেই।

কাপড়ের দাগের উপর লাগিয়ে নিন। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এটি শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আধা কাপ বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে।

রান্নাঘর ক্লিনার:

রান্নাঘরকে ঝকঝকে পরিষ্কার করতে চাইলে পুরো রান্নাঘরে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন। এবার কোন স্পঞ্জ (sponge) দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষে মুছে ফেলুন। এটি কেবল শক্ত দাগ অপসারণ করতে পারে না তবে এটি দুর্গন্ধযুক্ত দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে।

ফল ও সবজি কীটনাশক মুক্ত করতে:

অনেকে খাবারে কীটনাশক নিয়ে চিন্তা করেন। কৃষকরা পোকামাকড়, জীবাণু, ইঁদুর এবং আগাছা দ্বারা ফসলের ক্ষতি থেকে রোধ করতে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কীটনাশক দূর করতে বেকিং সোডা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেকিং সোডার পানিতে ১২-১৫ মিনিটের জন্য আপেল ভিজিয়ে রাখার ফলে কীটনাশক দূর হয়েছে।

জুতার গন্ধ দূর করতে:

বাইরে থেকে আসার পর জুতা খুলতেই যে দুর্গন্ধ বের হয় তা দূর করতে পারছেন না? জুতার ভিতর অল্প বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন। দুর্গন্ধ চলে যাবে।

শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে:

ঘামের গন্ধ নিয়ে খুব ঝামেলায় আছেন? খুব সহজেই দূর করতে পারেন। ১ চা চামচ বেকিং সোডার সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার পেস্টটি আন্ডারআর্ম ও পায়ে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ হালকাভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। ব্যাক্টেরিয়া মরে যাবে সাথে ঘামের গন্ধ দুর হবে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: