কীভাবে অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করবেন।

বিষন্নতা এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা যেমন আমাদের মানসিক মৃত্যু ঘটায়, তেমনি আমাদের শারীরিক মৃত্যুর কারণও হতে পারে। হতাশা এবং দুশ্চিন্তার কারণে আপনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে পারেন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিষন্নতা এবং উদ্বেগ বর্তমান যুগে একটি খুব সাধারণ মানসিক ব্যাধি। বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগী হয়ে উঠেছে। এখন অনেকেই হাইপোকন্ড্রিয়াসিসে ভুগছেন যার অন্যতম বড় কারণ অতিরিক্ত চিন্তা করা।

তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে আমরা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।

কীভাবে অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করবেন

অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করার কিছু পদক্ষেপ নিচে আলোচনা করা হল:-

নেতিবাচক অনুমান না করা:

যেমন ধরুন আপনি একটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন এবং তার ফলাফল এখনও ঘোষণা হয়নি। এই সময় আপনি ফলাফল নিয়ে চিন্তা করছেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবো নাকি ফেল করবো। আপনি এটা সম্পর্কে যত বেশি চিন্তা করবেন, ততই এটি মনে নেতিবাচক ধারনা তৈরি করবে।

ভয় সম্পর্কে লিখুন:

বেশি চিন্তা করা বন্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নোটবুক নিন এবং আপনার সমস্ত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতাগুলি লিখুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি মনে করেন এমন কিছু ঘটতে চলেছে যার থেকে আপনার ক্ষতি হতে পারে। এই অবস্থায় আপনাকে ভয়ের সমাধান লিখতে হবে এবং ভয়কে জয় করার কৌশল তৈরি করতে হবে।

শুধু বর্তমানের উপর ফোকাস করুন:

এটিই অতিরিক্ত চিন্তার মূল কারণ বলা যায়। অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করতে বর্তমানের উপর ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মানুষ যারা অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা চিন্তা করে এবং কিছু মানুষ যারা ভবিষ্যতে কি হবে এটা নিয়ে চিন্তা করে। এই উভয় অবস্থাই মানসিক ত্রুটির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

একসাথে একাধিক কাজ করা এড়িয়ে চলুন:

মস্তিষ্ক একই সময়ে একটি কাজের উপর ফোকাস করতে পারে। যদি আপনি আপনার মস্তিষ্ককে মাল্টিটাস্ক করতে বাধ্য করেন এবং যখন প্রত্যাশিত ফলাফল পান না তখন আপনি খারাপ বোধ করেন এবং নিজেকে হেরে যাওয়া মানুষ হিসাবে ধরে নিতে শুরু করেন। আপনি যখন মস্তিষ্ককে একবারে একাধিক কাজ করতে বাধ্য করেন তখন এটি কাজের উপর ফোকাস করতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত চিন্তার জন্ম হয়।

সুখের মুহূর্ত পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করুন:

অতিরিক্ত চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সুখের মুহূর্ত পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করুন। যখন আমরা ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করি না, তখন মস্তিষ্ক দু:খিত থাকে এবং স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। যখন আনন্দের ছোট মুহূর্তগুলিকে উপভোগ করা হয় না তখন মস্তিষ্ক সুখের হরমোন নিঃসরণ করে না।

সর্বদা বলুন “এটা ঠিক আছে”:

সম্পর্কে আঘাত পাওয়ার পর মানুষ অতিরিক্ত চিন্তা করা শুরু করে। দ্বিতীয়ত, অ্যাগোরাফোবিক রোগে আক্রান্ত লোকেরা অতিরিক্ত চিন্তাশীল হয়। প্রতিটি কাজের আগে বা পরে তারা ভাবতে শুরু করে যে লোকেরা তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলছে।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে লোকেরা মানসিকভাবে সেই সম্পর্কের সাথে আটকে থাকে যা শেষ হয়ে গেছে। এটা তাদের অতিরিক্ত চিন্তা করার কারণ হয়ে থাকে। তাই যাই হোক না কেন “এটা ঠিক আছে” বলতে শিখুন।

নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করুন:

অতিরিক্ত চিন্তা করা সম্পূর্ণরূপে আপনার মন এবং আবেগের সাথে সম্পর্কিত, তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি মানসিকভাবে ছোট ছোট মন্তব্য এবং ঘটনা আপনাকে দুঃখ দিয়ে থাকে তাহলে আপনি মানসিকভাবে খুব দুর্বল এবং এর ফলে অতিরিক্ত চিন্তা হয়। অতিরিক্ত চিন্তা এবং নেতিবাচক চিন্তা বন্ধ করতে আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ছোটখাটো বিষয় দু:খিত হওয়া উচিত নয়।

নেতিবাচক মন্তব্যে কান দিবেন না:

সুখ আমাদের ভেতর থেকে আসে। কিন্তু যখন কেউ আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলে তখন আপনার খুব খারাপ লাগে। আপনি তখন মনে করতে শুরু করেন যে তারা সঠিক। এই ভুল ধারণাটি অবচেতনে আপনার মনে প্রবেশ করে এবং অতিরিক্ত চিন্তা করতে বাধ্য করে।

রেফারেন্স: