শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বরে সতর্কতা। হেমোরেজিক থেকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।

ডেঙ্গুজ্বরের যে ভাইরাস এই ভাইরাসের ভেক্টর বা বাহক হলো স্ট্রাইপড এডিস এজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবপিকটাস। এই প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যা আগে একটি সংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড়েছিল।

বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব বাড়লেও সারা বছর জলে ভরা ফুলপট, টায়ার, প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং ক্যানগুলিতে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। একটি মশার কামড় রোগের কারণ হতে পারে।

ভাইরাস বহনকারী মশার দ্বারা কামড়ানোর পরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সময়কাল ৩ থেকে ১৫ (সাধারণত ৫ থেকে ৮) দিন অবধি ডেঙ্গুর লক্ষণ ও লক্ষণগুলি পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়।

প্রবীণ বা বৃদ্ধ মানুষ এবং বাচ্চাদের দিকে বিশেষ খেয়াল না রাখলে ভবিষ্যতে খারাপ কিছু ঘটতে পারে। বাচ্চাদের ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের বিষয়টা অত্যন্ত সংবেদনশীল।

এছাড়া কোনো রোগে আক্রান্ত বা সবে রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন এমন কেউ যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাও বাচ্চাদের মতো সংবেদনশীল।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও শক সিনড্রোমের লক্ষণ ও তীব্রতা :

ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (ডিএইচএফ)- ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে একটি সিন্ড্রোম যা ১০ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের বেশি প্রভাবিত করে। পেটে ব্যথা, রক্তক্ষরণ (রক্তপাত) এবং রক্ত সঞ্চালন (শক) সৃষ্টি করে। গলা ব্যাথা, কাশি, বমি বমি ভাব, অনবরত বমি এবং পেটে ব্যথা সহ উচ্চতর ক্রমাগত জ্বর এবং মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং অন্ত্রের লক্ষণগুলি দিয়ে হঠাৎ করে ডিএইচএফ শুরু হয়।

শক ২ থেকে ৬ দিন পরে হঠাৎ আকাশ ভেঙে মাথায় এসে পড়ার মতো দেখা দেয়। cool clammy extremities অর্থাৎ হঠাৎ করে চরম খারাপ অবস্থা, দুর্বল নাড়ীর স্পন্দন এবং মুখের চারদিকে নীলতা (টেরোরিয়াল সায়ানোসিস)।

সহজে রক্তক্ষরণ, ত্বকে রক্তের দাগ (পেটেশিয়া), থুতুর সাথে রক্ত (hematemesis), মলের সাথে রক্ত (melena), মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং নাকফোঁড়া (এপিস্ট্যাক্সিস) নিউমোনিয়া এবং হার্টের প্রদাহ (মায়োকার্ডাইটিস) উপস্থিত হতে পারে। মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বেশিরভাগ মৃত্যু শিশুদের মধ্যে ঘটে। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের বিশেষত মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

আপনার শিশুটিকে ডেঙ্গু জ্বরের হাত থেকে দূরে রাখতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেওয়া হলো :

 

  • ডিহাইড্রেশন ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনার বাচ্চাকে প্রচুর পরিমানে জল খেতে দিন। অনেক বাচ্চাই জল খেতে চাই না। তাই আপনার বাচ্চাটি সারা দিন প্রচুর পরিমাণে জল খায় কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • এডিস মশা সাধারণতঃ সূর্যোদয়ের আধা ঘন্টার মধ্যে ও সূর্যাস্তের আধা ঘন্টা আগে কামড়াতে পছন্দ করে। শিশু বাইরে বা বাড়ীর ভিতরে যেখানেই চলাফেরা, খেলাধুলা বা সময় ব্যায় করে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন বিশেষতঃ ভোরবেলা ও সন্ধ্যার এক ঘন্টা আগে।
  • গাঢ় রঙের পোষাক মশাদের আকর্ষণ করে।তাই হালকা রঙের পোশাক পরিধান করুন।
  • সবথেকে ভালো এবং বুদ্ধিমানের কাজটি হলো শিশুকে নিয়মিত প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, শস্যদানা ও অন্যান্য খাবার শিশু সঠিক পরিমানে খেলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকবে।
  • ঘাম এবং আর্দ্রতাও মশাকে আকর্ষণ করে তাই আপনার সন্তানের ত্বক সর্বদা পরিষ্কার এবং শুষ্ক থাকে তা নিশ্চিত করুন।
  • সকালবেলা এবং বিকালবেলা আপনার সন্তানকে ফুল প্যান্ট ও ফুল শার্ট পরিধান করান। অর্থাৎ এই সময়টা শরীর আলগা রাখবেন না।

 

ভাইরাস সংক্রামক নয় এবং সরাসরি ব্যক্তি থেকে অন্যে ছড়িয়ে যেতে পারে না। এটি মশা বাহিত, সুতরাং অবশ্যই একজন ব্যক্তি থেকে মশা, এবং মশা থেকে অন্য ব্যাক্তি এভাবে পথ চলতে হবে।

একটি এডিস মশা একটি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানোর পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং সেই মশা যখন অন্য একজনকে কামড় দেয় তখন সেই ব্যক্তির মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়।

ভাইরাসের পূর্ণ জীবনচক্রটির ভেক্টর (ট্রান্সমিটার) হলো মশা এবং মানুষ অর্থাৎ মানবদেহ সংক্রমণের source বা উৎস হিসাবে পুরোপুরি জড়িত। এজন্য বলা হয়, কেবল সংক্রামিত মশার কামড়ই ডেঙ্গু সংক্রমণ করতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য মশা এড়ানো জরুরি। ডেঙ্গু- গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একটি রোগ। এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে আপনার হালকা রঙের দীর্ঘ-হাতা শার্ট এবং লম্বা প্যান্ট বা ট্রাউজারগুলি পরা উচিত।

মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করা উচিত।সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনে ঘরে থাকা ভালো। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। জানালাতেও নেট লাগাতে পারলে ভালো হয়।

যদি আপনি আপনার সন্তানের ত্বকে
ফুসকুড়ি দেখেন এবং
গত কয়েক দিন থেকে তার জ্বরের পাশাপাশি শরীরে ব্যথা হয় তবে
তাৎক্ষণিক নির্ণয়ের জন্য আপনার চিকিৎসকের সাথে দেখা করাই সবথেকে ভালো।