ডিমের গল্প।

হাঁসের চারটে ডিম। পাশাপাশি বসে আছে রান্নাঘরের তাকে। সেখানে বসে বসে গল্প করছিল। চারটে ডিমের মধ্যে একটা ডিম আকারে বেশ ছোট। কিন্তু বয়সে সবার চেয়ে বড়। কেন জানো? বলছি শোনো-

প্রতিদিন একটা করে ডিম আসে ঝুড়িতে। কোথা থেকে আসে ওরা জানে না। বাড়ির কর্তামা রাখেন। আবার উনিই একটা একটা করে নিয়ে যান।

কোথায় নিয়ে যান, তাও ওরা জানে না। রাখার সময় তেমন খেয়াল করেন না।

কিন্তু নেয়ার সময় দেখে দেখে নেন। বেছে বেছে বড়টা নেন।

ফলে প্রথমে আসা ছোট ডিমটা আর নেয়া হয় না। রয়ে গেলো দিনের পর দিন। রাতের পর রাত।

এজন্য ছোট ডিমটার বয়স সবার চেয়ে বেশি।

তো ডিমগুলো বসে বসে গল্প করছিল। একটা ডিম ধবধবে সাদা। সবার থেকে ফর্সা। একটা ডিম আকারে বেশ বড়। একটু লম্বাটে।

একটার শরীর নোংরা। আর আরেকটা ছোট, একেবারে পিচ্চি।

সাদা ডিম বললো, এখানে খুব গরম। গরমে গায়ের রং কেমন বাদামি হয়ে যাচ্ছে!

বড় ডিম বললো, আর বলো না! আমি তো গরমে কেমন লম্বু হয়ে যাচ্ছি। এতো গরম আর ভালো লাগে না।

নোংরা ডিম বললো, ময়লা থাকার কারণে আমার সুবিধেই হয়েছে। রোদ-গরম টেরই পাই না!

এমন সব নানামুখী কথা বলছিল ডিম তিনটে। কিন্তু একটা ডিম চুপ করে আছে। কে সে, বলতে পারবে? বলছি শোনো-

আকারে ছোট ডিমটা বললো, তোমরা একটু চুপ করবে! আমি এখন ঘুমাবো।

অন্য তিনটে ডিম হো হো করে হেসে উঠলো।

সাদা ডিম বললো, এই গরমে তুমি ঘুমাবে কী করে। আমরা তো জেগে থেকেই অস্থির।

বড় ডিম বললো, পুচকের আবার গরম কিসের? শরীর থাকলে তো গরম লাগবে!

ডিমগুলো আবারও হো হো করে হাসতে লাগলো।

ছোট ডিম মন খারাপ করে চুপ হয়ে গেলো। আস্তে করে বললো, ছোট হয়েছি বলে কতো কথা!

ছোট বড় বলে কিছু নেই। একদিন সবাইকেই কর্তামা নিয়ে যাবেন।

গরম পানিতে সিদ্ধ করে খাবেন। নয়তো গরম তেলে ভেজে।

তখন দেখা যাবে কার কতো বাহাদুরি!

এই কথা শুনে অন্য তিনটে ডিমের মুখ শুকিয়ে গেলো।

ছোট তো ঠিকই বলেছে! দু’দিনের জন্য এসেছি এখানে। একদিন সবাইকেই চলে যেতে হবে। বাহাদুরির কিছু থাকতে নেই।

বড় ডিম বললো, ভাই, আমরা বুঝতে পারিনি। তাই তোমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেছি।

সাদা ডিম বললো, ঠিক তাই। আমাদের ভুল হয়ে গেছে।

নোংরা ডিম সেও ছোট ডিমের কাছে ক্ষমা চাইলো।

ছোট ডিম সবাইকে ওদের ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিল।

এমন সময় কার যেন পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো। নিশ্চয় কর্তামা আসছেন। কার যে বিদায়ের পালা এসেছে! সবাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো।

না, কারও যেতে হলো না। এ যাত্রায় সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ওদের দলে নতুন এক অতিথি এসেছে। ওকে সবাই স্বাগত জানালো। তারপর আবার একসঙ্গে গল্পে মেতে উঠলো। আর মায়ের অপেক্ষা করতে থাকলো। কোন মা? নিশ্চয়ই কর্তামা নয়; তাদের মা! হ