বাচ্ছাদের গায়ে হাত তোলা কি ভালো কাজ? উচিৎ কি অনুচিৎ জেনে নিন।

নিজের সন্তানকে সকল পিতামাতাই ভালোবেসে থাকেন। সর্বদাই তাদের উন্নতির জন্য কাজ করে যান।

কিন্তু তাদের ভালোর জন্য আদরের পাশাপাশি একটু শাসন না করলেও হয় না, এটা আবার অনেক পিতামাতা বিশ্বাস করেন।

বাচ্চাদের শাসন করা বা চাপে রাখা অনেক সময় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

অনেক পিতামাতাই তাদের সন্তানের গায়ে প্রায়শ হাত তুলে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা যদি অতিরিক্ত দুষ্টামি করে বা কথা না শোনে তাহলে অনেক বাবা-মা ই রেগে গিয়ে চড় বসিয়ে দেই।

তীব্রভাবে বকাবকি করি। এটা  ঠিক না বেঠিক এটা একটা আলোচনার বিষয়। মনোবিদরা সাধারণত বাচ্চাদেরকে এই কঠিন শাসনের আওতায় রাখার বিষয়টাকে পুরোপুরিভাবে অনুৎসাহিত করে।

আপনি যদি মনে করেন কোনও শিশুকে কাঁপানো বা চাপে ফেলা এবং caning বা আঘাত করা তার উপর স্থায়ী মানসিক চিহ্ন বা মানসিক ক্ষতি করে না তাহলে বিষয়টি আবার চিন্তা করুন।

পেডিয়াট্রিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি নিয়ে থাকে।

কানাডিয়ান গবেষকদের মতে, এগুলি বাচ্চাদের অতিরিক্ত শাসন ও চাপের কুপ্রভাবের কারণে হয়ে থাকে।

আঘাত বা চড়-থাপ্পড় বা শারীরিক শাস্তি কখনোই আচরণের উন্নতি করে না।

খারাপ আচরণ ভালো আচরণটাকে খারাপ করে দেয়। চড়-থাপ্পড় অল্প সময়ের জন্য ভালো মনে হলেও এটার দীর্ঘমেয়াদী খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে। কঠিন শাসনে থাকার ফলে অনেক পরে এটা ক্ষতিকর ও অকার্যকর হিসাবে প্রমাণিত হয়।

বাচ্চারা কিন্তু তাদের সাথে যে আচরণটা করা হয় সেটা সহজেই দেখে শিখে যায়। পরবর্তীকালে বাচ্চা যখন নিজে রেগে যাচ্ছে সেও বকাবকি করছে এবং অন্যকে মেরে বসছে। ঐ আচরণেরই পুনরাবৃতি করছে।

বাচ্চাদের গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি ?

শাসন বা বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকটি হলো বাচ্চার আত্নবিশ্বাস ও আত্নসম্মান কমে যাওয়া।

আত্নবিশ্বাস বা আত্নমর্যাদা কমে যাওয়া মানে বাচ্চার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাওয়া। আত্নবিশ্বাস আমাদের চলার পথে সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্বল একাডেমিক কর্মক্ষমতা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সন্তানের মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হতে পারে এবং এটি একাডেমিকভাবে তার দক্ষতা অর্জনের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।

বাচ্চা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। কম আত্মমর্যাদা = নেগেটিভ চিন্তাভাবনা + উচ্চ উদ্বিগ্নতা + কম কনফিডেন্স + পরাজয় ইত্যাদি। মানসিকভাবে সে বিপর্যস্ত হবে।

এছাড়া প্রথমেই বলেছি বাচ্চা নিজেই খারাপ আচরণ শুরু করে দেবে অন্যদের সাথে। অন্য বাচ্ছাদের সাথে মারামারি করবে। অনাকাঙ্খিত শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে যাবে।

তাহলে বাচ্চা দুস্টুমি করলে বা কথা না শুনলে কি করবো?

  1. মনোযোগ কমিয়ে দিন বা বিষয়টিকে সাময়িকভাবে উপেক্ষা করুন।
  2. প্রাপ্য সুবিধাগুলো কমিয়ে ফেলুন।

মনোযোগ কমিয়ে দিন বা সাময়িকভাবে উপেক্ষা করুন।

বাচ্চারা যে আচরণে বাবা-মার মনোযোগ পাচ্ছে সেই আচরণটাই বারবার করার প্রবণতা দেখা যাই। বাচ্চারা সবসময় বাবা-মা ও পরিবারের আপনজনদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে থাকে।

মনোযোগ কমিয়ে তাকে অন্য বিষয়ে বলুন বা দক্ষতার সাথে তাকে কোনো লোভ দেখিয়ে তার ফোকাস অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিন। দেখবেন দুষ্টামি কমে গেছে।

প্রাপ্য সুবিধাগুলো কমিয়ে ফেলুন।

সাময়িকভাবে কিছু সুবিধা প্রত্যাহার করুন। স্বাভাবিকভাবে যে সুবিধাগুলি সে পেয়ে থাকে সেগুলি কমিয়ে দিন। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।

একজন চাকুরীজীবি প্রায়ই দিন অফিসে দেরি করে যাই। অনেক বলার পরেও কিছু হলো না। মাসিক স্যালারি তুলে দেখলো যে, যেটা সে পেয়ে থাকে তার থেকে কম।

পরে যখন জানলো যে, প্রায়ই অফিসে দেরি করে আসার কারণে তাকে জরিমানা করা হয়েছে। এরপর বিদ্যুৎগতিতে তার আচরণ পাল্টে যায়। ঠিক একই জিনিস বাচ্চা যখন দেখবে, বাবা-মা-এর এই আচরণটা কাঙ্খিত না তাহলে সে কিছুটা হলেও দুস্টুমীটা কমিয়ে ফেলবে।

আদরও একটু কমিয়ে দিন। আদর যেটা সে পেয়ে থাকে সেটা যদি সে না পাই এবং যদি দেখে তাকে অবহেলা করা হচ্ছে তাহলে দেখবেন সে কথা শুনছে এবং দুষ্টমি কমিয়ে দিচ্ছে।