ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কি? রক্তে প্লাটিলেট বাড়ে যেসব খাবার খেলে।

প্লাটিলেট কি?:

প্লেটলেটগুলি হল কোষ যা আমাদের রক্তের মধ্যে সঞ্চালিত হয় এবং যখন তারা ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালীগুলি সনাক্ত করে তখন একত্রে আবদ্ধ হয়।

উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনার শরীরের কোথাও কেটে যাই প্লাটেলেটগুলি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় আবদ্ধ হয়, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধে। তারা কেন সেখানে যাই তার একটি বিবর্তনীয় কারণ রয়েছে। এটা আমাদের রক্তপাত থেকে রক্ষা করে।

আপনার শরীরের কোথাও কেটে গেলো। ব্যাস সাথে সাথে প্লাটিলেট সেখানে হাজির। আপনার রক্তপড়া বন্ধ। প্লাটিলেট না থাকলে রক্তপড়া কখনোই বন্ধ হতো না। ভাবুনতো- কি ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।

রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা:

একটি সাধারণ প্লাটিলেট গণনা প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে 150,000 থেকে 450,000 প্লেটলেট থাকে। এই পরিমাপের চাইতে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি দেখা দেয়।

২০ হাজারের নিচে প্লাটিলেটের সংখ্যা নেমে আসলে কোনো প্রকার আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে।

450,000 এরও বেশি প্লেটলেট থাকা থ্রোম্বোসাইটোসিস নামে পরিচিত; 150,000 এর কম থাকার থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া হিসাবে পরিচিত।

প্লাটিলেট বাড়ে যেসব খাবারে

কোনো কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই প্লাটিলেটের সংখ্যা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

কিছু খাবার আছে যেগুলো প্লাটিলেট বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আসুন জেনে নিই, সেসব খাবারের নাম-

ব্রকলি:

ব্রকলি ভিটামিন ও মিনারেলে পূর্ণ। এতে ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “k” এর পাশাপাশি প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস(লুটেনিন, zeaxanthin, beta-carotene, সালফোরাফেন) এবং ফাইবার রয়েছে।

রক্তক্ষরণ কমাতে এবং প্লাটিলেট বাড়াতে ব্রোকলির কোনো তুলনা হয় না। এই পুষ্টিকর উপাদানগুলি শরীরকে ভেতর থেকে এতটাই শক্তিশালী করে যে অসুস্থ্য হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়।

পালং:

ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ পালং শাকে এক ডজনের অধিক এন্টি -ইনফ্লামেটরি ও এন্টি ক্যান্সার কম্পোনেন্ট রয়েছে। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

প্লাটিলেট দ্রুত বৃদ্ধি করে। পালংশাকে ভিটামিন k বিদ্যমান। এটি রক্তক্ষরণ কমায়।

ডাব:

কম ক্যালোরিযুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে চর্বি ও কলেস্টেরল মুক্ত, কলা থেকে অধিক পটাশিয়ামযুক্ত- এক কথায় অমৃত।

স্পর্শমনি বা divine elixir যেটাই বলি না কেনো ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, কপার, ফান্ডামেন্টাল অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রয়োজনীয় দুটি লবন- সোডিয়াম ও পটাশিয়াম- এতো পুষ্টি উপাদানের মিলনমেলা।

এককথায় অসাধারণ এবং প্লাটিলেট বাড়াতে দারুন কার্যকর।

পেঁপে:

প্রায়শই আমরা অতিরিক্ত তেল ও মশলা দিয়ে তৈরি হোটেল-রেষ্টুরেন্ট খাবার খেয়ে থাকি যা আমাদের পাচক সিস্টেমের জন্য ভালো না।

দৈনিক একটি পেঁপে খেলে পাচক যন্ত্রনা নিরাময় করতে পারে, কারণ এটিতে একটি পাচক এনজাইম রয়েছে যা পেপাইন নামে পরিচিত, যা আপনার পাচক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়তা করে।

পেঁপেতে ক্যালরির পরিমাণ কম কিন্তু ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ খুব বেশি।  পেঁপেতে ভিটামিন সি, ফাইবার, ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিন এর মত এন্টিঅক্সিডেন রয়েছে।

পেঁপে খুব দ্রুত রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, ডেঙ্গু জ্বরের কারণে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে পেঁপে পাতার রস তা দ্রুত বৃদ্ধি করে।

রক্ত প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে প্রতিদিন পেঁপে পাতার রস কিংবা পাকা পেঁপের জুস পান করুন।

মিষ্টি কুমড়া এবং কুমড়া বীজ:

মিষ্টি কুমড়া রক্তের প্লাটিলেট তৈরি করতে বেশ কার্যকরী। এছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে ভিটামিন ‘এ’রয়েছে যা প্লাটিলেট তৈরি করতে সহায়তা করে।

তাই রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া এবং এর বীজ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

লেবুর রস:

লেবুতে থাকা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ফলে প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পায়। ভিটামিন সি রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতেও সহায়তা করে।

আমলকি:

আমলকী রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান ঠিক রাখতে ও চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমলকী লিভারের স্বাস্থ্যর জন্য ভালো।

এটি লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে ও লিভারের কার্যক্ষমতা ভালো করতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন সকালে আমলকীর জুস খেলে পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।

আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়। মোদ্দাকথা হলো -ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ আমলকী। 

এছাড়া আমলকিতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। ফলে আমলকি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

অ্যালোভেরার রস:

মানবদেহের জন্য যে ২২টা এমিনো এসিড প্রয়োজন তার ৮টি অ্যালোভেরাতে রয়েছে।

এছাড়াও আছে ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E আপনি যদি নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করেন তাহলে আপনার ক্লান্তি দূর হবে এবং দেহ সতেজ ও সুন্দর থাকবে।

ডায়রিয়া সারাতেও অ্যালোভেরা রস দারুণ কাজ করে। অ্যালোভেরা জুস হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।তাই প্লাটিলেট বাড়াতে এলোভেরা জুস খান।

ডালিম:

ডালিম রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর আয়রন রয়েছে যা প্লাটিলেট বৃদ্ধি করে।

খুব বেশি খেতে হবে এমন নয়। অল্প করে হলেও নিয়মিত কিছুদিন ডালিমের রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। ডালিমের রসের ভিটামিন দুর্বলতা দূর করে কাজে শক্তি দেবে।