সুস্বাদু ফল জাম ক্যান্সার, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

প্রাণ-মন আনন্দে ভরে উঠুক পাকা জামের রসালো স্বাদে। পাঁকা জামের মধুর রসে রঙ্গিন করি মুখ। আসলেই গ্রীষ্মকালে আম, কাঁঠালের মত আরেকটি রসালো ও পুষ্টিকর ফল হল জাম বা কালোজাম।

দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। জাম সাধারণত প্রথমে সবুজ এবং পেকে গেলে কালো রঙের হয়।

গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি বাজারে উঠতে না উঠতেই ফুরিয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে হালকা লবণ দিয়ে জাম মাখা দেখলে জিভে পানি চলে আসে।

সব বয়সী মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় এই কালো জাম। জাম ভারতবর্ষ থেকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়েছে।

জাম এর ইংরেজি নাম: Malabar plum, Java plum, black plum। এর বৈজ্ঞানিক নাম “Syzygium cumini”। পরিবার- মির্টাসিয়া, গণ- সিজিজিয়াম, প্রজাতি- এস. ক্যুমিনি।

জাম নানা দেশে নানা নামে পরিচিত যেমন- জাম্বুল, জাম্ভুল, জাম্বু, জাম্বুলা, জাভা প্লাম, জামুন, কালোজাম, জামব্লাং, জাম্বোলান, কালো প্লাম, জাম্বোলান প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম ইত্যাদি।

ভারতবর্ষে এই ফলটিকে জামুন (Jamun) বলে। ফিলিপাইনে একে বলা হয় ডুহাট। জামে প্রচুর পরিমানে উপকারী উপাদান যেমন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, এছাড়াও ভিটামিন “এ”, “সি”, বি-6 ইত্যাদি আছে।

জামের ছবি দেখেই লোভ লাগছে খুব, খেতে ইচ্ছে করছে তো। যেমন দেখতে তেমনি পুষ্টিতে। ডায়াবেটিস, মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা, বদহজম, ক্যান্সারসহ আরো অনেক রোগ থেকে ভালো থাকার জন্য জাম প্রতিদিন দরকার।

শুধু ফলই নয়, এর পাতা ও বীজ বিভিন্ন চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়।

জাম খেলে কি ওজন কমে?

হ্যা, জাম খেলে ওজন কমে। জামে একটি পরিমিত পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, প্রতি কাপে প্রায় ৭৫ ক্যালোরি। ওজন হ্রাস ডায়েটের জন্য জাম উপযুক্ত কারণ এতে কোনও ফ্যাট থাকে না।

জামের স্বাস্থ্য উপকারীতা

আয়ুর্বেদী, হেকিমী, এবং ইউনানী চিকিৎসাতে জাম ব্যবহার করা হয়। জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”, জিংক, কপার, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অসংখ্য উপাদান। যা স্বাস্থ্যের বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে:

ঐতিহ্যগতভাবেই জাম ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো বলে বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত।

একটি গবেষণা পর্যালোচনায় জানা যায় যে, জামের ডায়াবেটিস বিরোধী গুণ আছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের বীচ রক্তের সুগার লেভেল ৩০% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে। এই ফলটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

জামে এলাজিক এসিড বা এলাজিটেনিন্স, এন্থোসায়ানিন এবং এন্থোসায়ানিডিন্স থাকে যা প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে।

এই উপাদানগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে এবং হৃদরোগ সৃষ্টিকারী প্লাক গঠনে বাধা দেয়।

এছাড়াও হাইপারটেনশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে জাম। কারণ এতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম জামে ৫৫ গ্রাম পটাসিয়াম থাকে।

ত্বককে ভালো রাখে:

ত্বকের যত্নে জাম গুরুত্বপূর্ণ। জাম রক্ত পরিষ্কার রাখে ফলে ত্বক ভালো থাকে। ত্বকের নানান সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। জাম চোখের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জাম অতুলনীয়ভাবে কাজ করে। এছাড়াও শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে জাম।

প্রচুর আয়রন থাকে:

জাম আইরনে পরিপূর্ণ অত্যন্ত উপকারী একটি ফল এবং এটি রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সুপারিশ করা হয়। জাম বা জামুনে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে আয়রন রক্তকে বিশুদ্ধ করতে প্রাকৃতিক খাবারগুলির মধ্যে একটি।

রক্তের লোহিত কোষ এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন গণনা বাড়িয়ে তোলে। প্রচলিতভাবে রক্তের ক্ষয়ক্ষতির বিশাল পরিমাণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ঋতুতুস্রাবের সময় বা গর্ভাবস্থায় জামুনগুলি অবশ্যই মহিলা এবং মেয়েদের জন্য উপযুক্তযুক্ত।

এটি শরীরকে দুর্বলতা এবং ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।

সংক্রমণের চিকিৎসায়:

ঐতিহ্যগতভাবেই জাম গাছের বাকল, পাতা ও বীজ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ম্যালিক এসিড, গ্যালিক এসিড, অক্সালিক এসিড এবং ট্যানিন থাকে জাম উদ্ভিদে।

একারণেই জাম উদ্ভিদ ও এর ফল ম্যালেরিয়া রোধী, ব্যাকটেরিয়ারোধী এবং গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ হিসেবে কাজ করে।

পরিপাকে সাহায্য করে:

আয়ুর্বেদিক ঔষধে জাম পাতা ব্যবহার করা হয় ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে। এছাড়াও মুখের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহার হয় জামপাতা।

জাম খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত ও মাড়ি শক্ত ও মজবুত করে এবং দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে:

বিভিন্ন গবেষণায় জামের কেমোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয়েছে। জাগেতিয়া জিসি এন্ড কলিগস এর করা এক গবেষণা মতে জানা যায় যে, জাম ফলের নির্যাসে রেডিওপ্রোটেক্টিভ উপাদান আছে।

এতে আরো বলা হয় জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেলের কাজে এবং বিকিরণে বাধা দেয়।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

জাম ব্রেইনের জন্য ভালো এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও জামে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার থাকে বলে হাইড্রেটেড থাকতে ও ত্বককে স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও জাম ত্বকের টিস্যুকে টান টান রাখতে সাহায্য করে, যা ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত হতে সাহায্য করে।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্তান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর যান তাহলে অবস্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: