তরমুজের জুস পানিশূন্যতা দূর করে, দেহকে শীতল করে ও রক্তচাপ ঠিক রাখে।

গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। এই বাড়তি পানির চাহিদা পূরণে তরমুজ, বেলশসার বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস খেতে পারেন। তবে বিভিন্ন ধরনের জুসের মধ্যে তরমুজের জুস অন্যতম।

তরমুজের শতকরা ৯২% পানি। তাই তরমুজ খেলে সহজেই পানি বা জলের তৃষ্ণা মেটে। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “এ” ও বিটা ক্যারোটিন। বিটা ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে।

এছাড়া তরমুজের জুস খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে। ভিটামিন “এ” ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে ত্বকের সুরক্ষা দেয়।

ঠান্ডা এক গ্লাস তরমুজের শরবত বা জুস খেলে হাঁপিয়ে যাওয়া প্রাণটা যেন জুড়িয়ে যায়।

গরমের ফলগুলোর মধ্যে তরমুজ অন্যতম। তীব্র এই গরমে রসে টইটুম্বুর এই ফলটি কেবল আমাদের প্রাণ জুড়াতেই সাহায্য করে না, এর রয়েছে বেশকিছু গুণ। পুষ্টিতে ভরপুর তরমুজ তাই রাখতে পারেন আপনার খাদ্য তালিকায়।

তরমুজের খোসা ছাড়িয়ে বীজগুলো ফেলে দিন। এবার ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এাবর একটি ব্লেন্ডারে টুকরো করা তরমুজ, বিট লবণ, লেবুর রস, কয়েকটি পুদিনার পাতা দিয়ে ব্ল্যান্ড করে নিন। এখন এটি একটি ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। তবে না ছেকে খেলে আরো বেশি ভালো হয়। এবার বরফ কুচি দিয়ে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন।

তরমুজের জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচে তরমুজের জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

রক্তচাপ বজায় রাখে:

তরমুজে থাকা পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া তরমুজে আরেকটি গুরত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, সেটা হলো সিট্রুলিন (citrulline)। সিট্রুলিনের একটি চমৎকার উৎস তরমুজ। সিট্রুলিন আমাদের দেহে অর্জিনিনে (arginine) রূপান্তরিত হয়। এই উভয় অ্যামিনো অ্যাসিডই নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করতে সহায়তা করে।

নাইট্রিক অক্সাইড হল একটি গ্যাস অণু যা আমাদের রক্তনালীগুলির চারপাশের ক্ষুদ্র পেশীগুলি শিথিল করে এবং বিচ্ছিন্ন করে তোলে। এটি রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা এই গরমে তরমুজের জুস খাওয়ার অভ্যাস করুন।

Watermelon Mint Juice

হজমে সহায়তা করে:

তরমুজের জুস প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই এই জুস হজম সিস্টেমের উন্নতিতে সহায়তা করে। যেহেতু তরমুজে উচ্চ পরিমাণের পানি রয়েছে তাই এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিনগুলি বের করে দিতে সহায়তা করে।

তরমুজের জুস আপনি যদি বেলেন্ডারে তৈরি করেন তাহলে এর ফাইবার অক্ষুন্ন থাকবে। তবে জুস অবশ্যই ছেকে পান করবেন না।

পানিশূন্যতা দূর করে:

প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। এই সময় তরমুজ হতে পারে আমাদের পরম বন্ধু। তরমুজে প্রচুর পরিমানে পানি (৯২%) থাকে। তাই তরমুজের জুস খেলে শরীরের পানিশুন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকে। তাই গ্রীষ্মের তাপে শীতলতার পরশ বুলাতে আমরা কোল্ড ড্রিংক এর আর পরিবর্তে পাকা পেঁপের জুস খেতে পারি।

দেহকে শীতল করে:

গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতি যখন রুক্ষ হয়ে ওঠে তখন শীতলতার পরশ বুলিয়ে দিতে প্রকৃতিতে আবির্ভাব হয় তরমুজ, বাঙ্গির পাশাপাশি সহজলভ্য ফল পেঁপে। তরমুজ একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক। গরমে শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে তরমুজের জুস। এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

ভাইরাস ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদের শরীরের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ১ গ্লাস তরমুজের জুস আপনার শরীরের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।

ত্বক সজীব রাখে:

তরমুজে থাকা ভিটামিন “সি” ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে। ত্বকের যে কোনো সংক্রমণে প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গড়ে তুলে ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে। বিভিন্ন ইলেক্ট্রোলাইট, উপকারী অ্যাসিড ও লাইকোপেন সমৃদ্ধ তরমুজ নিয়মিত খেলে বার্ধক্য দেরীতে আসে। ত্বকে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না। আপনি সবসময় প্রাণবন্ত থাকবেন।

তাই এই গরমে প্রতিদিন আপনার ডায়েটে ১ গ্লাস করে তরমুজের জুস রাখুন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

তরমুজের জুসে থাকা লাইকোপেন এবং অন্যান্য প্লান্ট কম্পাউন্ড ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

ওজন কমায়:

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং খুব কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে। আর তাই তরমুজ খেলে পেট ভরে যায় সহজে কিন্তু সেই অনুযায়ী তেমন কোনো ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করে না। তাই যত ইচ্ছা তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও থাকে না।

তাই যারা ওজন কমাতে বা ওজন ঠিক রাখতে চান। তারা ডায়েটে তরমুজের জুস যোগ করুন।

চোখের জন্য ভালো:

তরমুজের রস পান করা আপনার শরীরকে ভিটামিন “এ” দিয়ে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে এই ভিটামিনটি আপনার চোখের জন্য প্রয়োজনীয়।

এছাড়া তরমুজে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড। প্লান্ট কম্পাউন্ডস ক্যারোটিনয়েড include- আলফা ক্যারোটিন এবং বিটা ক্যারোটিন, যেটা আমাদের শরীর ভিটামিন “এ” হিসাবে গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত তরমুজের জুস খেলে চোখ ভালো থাকে। চোখের নানারকম সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

watermelon juice

গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো:

গর্ভবতী মহিলারা বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বমি বমি ভাব থাকে এবং অনেকে বার বার বমি করে থাকেন। এক গ্লাস তরমুজের রস এই ব্যাধি মোকাবেলায় খুব কার্যকর। তরমুজে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি” এবং ভিটামিন “বি” রয়েছে যা মা এবং শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর।

গর্ভকালীন সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি সকালে এক গ্লাস তরমুজের রস সতেজ করে এবং শক্তি যোগায়। পানিশূন্যতাও দূর করবে।

কিডনি সুস্থ্য রাখে:

তরমুজের রস কিডনির বর্জ্য পরিষ্কার করে। তাই কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকগন তরমুজের রস খেতে বলেন।

হার্টের জন্য ভালো:

আমরা স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও জীবনধারার মাধ্যমে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারি। তরমুজের বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তার মধ্যে লাইকোপেন অন্যতম। গবেষণায় দেখা যায় যে, লাইকোপেন কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স:
এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: