শসার জুস পানিশূন্যতা দূর করে, শরীর ঠান্ডা রাখে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

শসাকে সবজি হিসাবে বিবেচনা করা হলেও এটি আসলে একটি ফল। শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং কম পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে শসা খুবই উপকারী। এছাড়াও এতে ভিটামিন “কে”, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, সিলিকা, ক্লোরোফিল থাকে বলে শসাকে দারুণ উপকারী সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম শসায় আছে ১৫ ক্যালরি। এছাড়াও শসাতে দ্রবণীয় আঁশ থাকায় এটি আমাদের পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে যা ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্বকের যত্নে ও বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রসাধনীতে শসার জুড়ি মেলা ভার।

প্রচন্ড গরমে শসা বা শসার তৈরি সালাদ আমাদের ক্লান্তি ও তৃপ্তি দুটোই মেটায়। শুধু সালাদ নয়, শসার তৈরি জুস বেশ উপাদেয় একটি পানীয়। নিয়মিত শসার জুস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, নিয়মিত শসার জুস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-

ওজন কমাতে:

যারা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসার জুস দারুণ কার্যকর। শসা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। এতে ক্যালরি কম থাকে এবং প্রচুর পানি থাকে, যা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

নিয়মিত শসার জুস খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। শসাতে যে উপাদান থাকে, সেই সব উপাদান বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি দেয়:

ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের মাথা ধরে। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “বি” ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস শসার জুস খেয়ে নিলে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা আর থাকবে না।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:

শসা পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। শসাতে ১৩% পটাসিয়াম থাকে। তাই নিয়মিত শসার জুস পান করলে আমাদের শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। এর ফলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

ঘুম ভালো হয়:

শসার জুস আমাদের স্নায়ুগুলিকে শান্ত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং স্ট্রেস হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে। যা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য দায়ী।

পানিশূন্যতা দূর করে:

শসার উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে আসে পানিশূন্যতা দূর করার কথা। অতিরিক্ত গরমে শরীরের ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায় এবং দেখা দেয় পানি শূন্যতা। কখনও কখনও প্রচন্ড গরমে কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হয় না অনেকেরই। এই পানির ঘাটতি পূরণের জন্য শসার জুস অতুলনীয়। কারণ শসার জুসে ৯৫ ভাগই পানি। তাই শসার জুস শরীরে প্রয়োজনীয় পানির অভাব দূর করে আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।

হজম ভালো হয়:

ডায়েটারি ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকায় শসার জুস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পরিপাকতন্ত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে হজমে সাহায্য করে শসার জুস।

শরীরকে আর্দ্র রাখে:

কখনো কখনো আপনি শরীরের ভেতর বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করেন। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এমন অবস্থায় এক গ্লাস শসার জুস খেয়ে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন। এতে প্রচুর পানি থাকার কারণে এটি শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে। এছাড়া প্রতিদিন এক গ্লাস করে শসার জুস খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদানও বের হয়ে যায়।

ত্বক ভালো রাখে:

শসার জুস পান করলে আমাদের ত্বক ভিতর থেকে স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ থাকে যা ত্বককে সবসময় চাঙ্গা করে রাখে। আর এটি সম্ভব হয়েছে শসার উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তরের কারণে যা শরীরে প্রদাহকে শান্ত করে, লালচেভাব, ঝাপসা এবং দাগের সম্ভাবনা হ্রাস করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করে দিতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর রঙ বজায় রাখতে এটি সহায়তা করে থাকে।

হাড় মজবুত রাখে:

শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “কে” থাকে। এক কাপ কাটা শসায় প্রায় ৬২% থাকে। স্বাস্থ্যকর হাড় এবং টিস্যু তৈরির পাশাপাশি রক্ত জমাট বাঁধতে আমাদের দেহে ভিটামিন “কে” প্রয়োজন। এই ভিটামিন পাওয়ার জন্য আর শশার জুসের থেকে ভালো উপায় আর কি হতে পারে।

চোখ ভালো রাখে:

আপনার দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করতে চান তাহলে শসার জুস পান করুন। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে এটি দৃষ্টিশক্তির চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে দরকারী প্রাকৃতিক উপায় হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে:

শসার জুস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এতে থাকা cucurbitacins ইনসুলিন নিঃসরণ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এতে থাকা ফাইবার, টাইপ-2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে। শসার জুসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মান মাত্র ১৫।

রেফারেন্স: