পানিশূন্যতা দূর করতে কোন খাবারগুলো কার্যকরী।

সঠিক হাইড্রেশন অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খেলে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ডিহাইড্রেশনের ফলে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।

পানিশূন্যতা দূর করতে হলে যে সবসময় পানি খেতে হবে এমন টা নয়। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এসব খাবার পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করে।

আমাদের শরীরকে তরতাজা ও প্রাণবন্ত রাখতে এই খাবারগুলি খুবই উপকারী।

পানিশূন্যতা দূর করার খাবার সমূহ:

নিচে পানিশূন্যতা দূর করতে পারে এমন কিছু খাবার দেওয়া হলো –

তরমুজ:

তরমুজে ৯২% পানি আছে যা আমাদের শরীরের পানিশুন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। এই ফলটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ক্যালোরির পরিমাণ কম। পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি তরমুজ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে, ত্বককে সজীব রাখতে ও চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

শসা:

শসার উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে আসে পানিশূন্যতা দূর করার কথা। অতিরিক্ত গরমে শরীরের ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায় এবং দেখা দেয় পানি শূন্যতা। কখনও কখনও প্রচন্ড গরমে কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হয় না অনেকেরই। এই পানির ঘাটতি পূরণের জন্য শসা অতুলনীয়। কারণ শসার ৯৫% পানি। তাই শসা শরীরে প্রয়োজনীয় পানির অভাব দূর করে আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।

ডাবের পানি:

ডাবের পানি একটি সুপার স্বাস্থ্যকর পানীয় যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে। ডাবে ৯৫% পানি। এটি ডাবের পানির প্রথম উপকারি দিক। অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীর ঘামের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। ডাবের পানি এই ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে।

পালংশাক:

পালংশাকে ৯১.৪% পানি থাকে। যেকোন শাক সবজিই পানিশূন্যতা দূর করে আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। শাকসবজিতে ক্যালোরি কম থাকে এবং প্রচুর পুষ্টি উপাদান ও ফাইবার থাকে। পালংশাক ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস এবং এতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “কে” এবং ফোলেট রয়েছে।

বাঙ্গি:

ডিহাইড্রেশনের কথা ভাবলেই, প্রথমে যে বিষয়টি মনে আসে তা হল পানি। বাঙ্গিতে প্রায় ৯০% পানি এবং এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়াম তাই এটি একটি ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়। পানি এবং পুষ্টির সংমিশ্রণের এই ফলটি ব্যায়ামের পরে, অসুস্থ্যতার সময় বা পানিশূন্যতা দূর করার জন্য বাঙ্গি দুর্দান্ত।

জাম্বুরা:

এক কাপ জাম্বুরাতে প্রায় ৯০% পানি থাকে। ফাইবার রয়েছে ২ গ্রাম, যা অনেক্ষণ ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। জাম্বুরাতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকায় এটি ক্যান্সারের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন “সি” বেশি থাকায় মুখের ভেতরে ঘা, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

টমেটো:

টমেটোর ৯৪% পানি। টমেটোর একটি চিত্তাকর্ষক পুষ্টি প্রোফাইল রয়েছে এবং পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। টমেটোতে থাকা লাইকোপেন হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিকাশ রোধ করতে সাহায্য করে।

স্ট্রবেরি:

স্ট্রবেরীতে ৯১% পানি আছে। এছাড়া স্ট্রবেরী ভিটামিন “সি”, ফোলেট এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ প্রচুর ফাইবার সরবরাহ করে। নিয়মিত স্ট্রবেরি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের পানিশুন্যতা দূর হওয়ার পাশাপাশি হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, আলঝাইমার এবং বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার হওয়ার সভাবনা কমে যাবে।

ফুলকপি:

ফুলকপিতে ৯২% পানি থাকে যা আমাদের দেহকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। ফুলকপির মধ্যে কোলিন সহ ১৫ টিরও বেশি ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। এটা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

কমলালেবু:

কমলালেবুতে ৮৮% পানি আছে যা পানিশূন্যতা দূর করতে সহায়তা। কমলা অবিশ্বাস্যভাবে স্বাস্থ্যকর এবং বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে। রোগ-প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কমলালেবু, যা প্রদাহ হ্রাস করে কোষের ক্ষতি রোধ করতে পারে। নিয়মিত লেবু জাতীয় ফল খাওয়ার কিডনিতে পাথর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সতর্কতা

কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো নয়। তাই যা খাবেন পরিমিত পরিমাণে খাবেন। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: হেলথলাইন, ndtv