তালশাঁস ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। কিভাবে তা জেনে নিন।

প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে বা ঘরে ঘরে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে ডায়বেটিস। বয়সের কোনও বাছবিচার নেই। আট থেকে আশি, অনেকেই ভুগছেন এই রোগে। চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

রক্তে শর্করার মাত্রা সামলাতে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হয় রোজের খাদ্যতালিকায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফল খেতেই হবে। রক্তে গ্রুকোজের মাত্র বেড়ে গেলে রোগীর কিডনি, নার্ভের সমস্যাসহ বহু জটিল শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে ‌যায়। নিয়মিত ফল খেলে তা কিছুটা রুখে দেওয়া ‌যায়।

ইট-রডের তৈরি বহুতল ভবনের শহরে তালগাছের দেখা না মিললেও শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমি ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম পড়েছে। মধু মাসের এ ফলকে কেউ বলে তালশাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আঁটি। প্রচণ্ড গরমে তালশাঁস শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

এর ইংরেজি নাম: Asian Palmyra Palm বা Palmyra fruit বা  Palm fruit. বৈজ্ঞানিক নাম: Borassus flabellifer. এটি হচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন গাছ।এই গাছের ফলকে Ice Apple ও বলা হয়। এরা এরিকাসি পরিবারের বরাসুস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর আদিবাস মধ্য আফ্রিকা।

খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে তালশাঁস বা plum fruit ডায়েটে বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এটি ভিটামিন বি এবং সি, আয়রন, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, থায়ামিন এবং রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ উৎস।

তালশাঁস বা আইস আপেল কি ডায়াবেটিস বা সুগারের রোগীদের পক্ষে ভাল?

হ্যা, তালশাঁস বা ice apple সুগারের রোগীদের পক্ষে ভালো।  ভিটামিন ও খনিজের পাশাপাশি সুগার ও ক্যালোরি কম।  আইস আপেল হল ফাইটোনিট্রিয়েন্টস, কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালসিয়ামের পাওয়ার হাউস। এতে ন্যূনতম পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, এতে ভিটামিন এ, সি, বি 7, কে এবং আয়রন রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম সহায়ক।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য তালশাঁসের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:

এছাড়া তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস রোগীর পানিশুন্যতা দূর করে:

এই গরমে বাইরে কাজ করা কর্মজীবী মানুষ হোক বা ঘরে কাজ করা মায়েরা সকলের প্রাণ হাঁসফাঁস করতে থাকে প্রচন্ড গরমে। বার বার ঘামের কারণে আমাদের শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। সেটি দ্রুত পূরণ করতে পারে এই তালশাঁস। কচি তালশাঁসে ৯০-শতাংশের উপরে জলীয় অংশ থাকে। তাই এই গরমে তালশাঁস ডায়াবেটিস রোগীর পানিশুন্যতা দূর করে।

ডায়াবেটিস রোগীর চোখের জন্য ভালো:

তালের শাঁস খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তির অনেক উন্নতি হয়। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন এ। এটি খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর এর ফলে আমরা বিভিন্ন রকম সিজিনাল অসুখ থেকে মুক্তি পাই।

তালেশাঁসে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার,সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মত বেশ কিছু উপকারী উপাদান। যা ডায়াবেটিস রোগীর চোখের জন্য অত্যান্ত উপকারী।

ডায়াবেটিস রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখে:

Plam fruit বা তাল ফল একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক। গ্রীষ্মের সময় শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে। প্রচন্ড এই গরমে ডায়বেটিস রোগী শুধু নয়, সকলেই গরমে অস্বস্তিতে ভুগে থাকে। তালশাঁসে প্রচুর জল রয়েছে। এটি শরীর ঠান্ডা রাখে।

ডায়াবেটিস রোগীর হজমের সমস্যা দূর করে:

বেশ কয়েকটি পেটের অসুস্থতা এবং হজমজনিত সমস্যার জন্য palm fruit বা তাল ফল একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে এবং সাধারণ অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এটি হজমে উন্নতি করতে সহায়তা করে এবং হজমজনিত সমস্যা নিরাময় করে।

ডায়াবেটিস রোগীর রক্তাল্পতা দূর করে :

কচি তালশাঁসের রসে আইরন থাকে। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগতে থাকলে কিডনি দুর্বল হতে থাকে। কিডনি দুর্বল হলে রক্তের হেমোগ্লোবিন কমে যায়।  এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে রক্তসল্পতা দূর করে।

ক্যালোরি ও চিনি কম:

এটি অ্যাসিডিটি এবং পেটের আলসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। তালশাঁস একটি কম ক্যালোরি ফল। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। এটি পেট দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ রাখে। এটি ঘন ঘন খাওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধে সহায়তা করে যা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। এতে চিনির পরিমান খুব কম থাকে।

ত্বককে সুন্দর উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে চান, তাহলে তালশাঁস খান। আমরা জানি তালশাঁসের জলীয় অংশে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-সহ আইরন, ক্যালসিয়ামের মতো মিনারেল রয়েছে। এগুলো ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

এটি ঘামাচি, ডিহাইড্রেশন, শুষ্ক ত্বক, কিডনিতে সমস্যা এবং চুল পড়া তাপ সম্পর্কিত একাধিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণে সহায়তা করে।

সতর্কতাঃ

গ্রীষ্মের উপাদেয় তালশাঁস আজ যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আমরা তাল ফলকে হারাতে চাই না।

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাবেন না। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।