ত্বকের শুষ্কতা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।

শীতকাল আসলেই ত্বকের রুক্ষতা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। তাই এই সময়টা ত্বকের যত্নে একটু বেশিই সচেতন হতে হয়। তবে শুধু শীতকালেই নয়, গরমের সময়েও অনেকে ত্বকের শুষ্কতা নিয়ে সমস্যায় ভোগেন।

কিন্তু ঠিকমতো যত্ন না নিলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়ে যায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায়, ত্বকের উপরিভাগ কালো হয়ে আসে এবং ত্বক ফেটে যায়। এছাড়া ভিটামিন ‘এ’,‘বি’,জিংক ও ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।

ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে চেহারার লাবণ্যতাটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই শীতের এই সময়টাতে ত্বককে সজীব ও মসৃণ রাখতে দরকার একটু বাড়তি যত্ন ও সর্তকতা। রোজকার ব্যবহৃত কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের মাধমে আমরা আমাদের ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে পারি। নিচে এমন কয়েকটি উপাদান দেওয়া হলো যেগুলো ত্বকের শুস্কতা দূর করতে পারে –

বেসন, দুধ ও হলুদ:

প্রাচীন শাস্ত্রে মসৃণ ও নরম ত্বকের রহস্য কিন্তু এই তিনটি উপাদানই। এর নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বকের রুক্ষতা, শুষ্কতা দূর করে। আপনার মুখের সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রুক্ষতা দূর করতে এই মিশ্রণ সমান ভাবে উপকারী।

কাঁচা হলুদবাটা ১ চামচ, বেসন ২ চামচ ও পরিমাপ মতো দুধ নিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করুন। এবার এই পেস্টটি মুখে বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট পরে হালকা গরম জল হাতে নিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের মসৃণতা আপনি নিজেই ছুঁয়েই বুঝতে পারবেন।

শসা

১ চা চামচ ওটমিল এবং পরিমাণ মত শশা পেস্ট একসাথে মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। মুখে এবং ঘাড়ে মিশ্রণটি ভালো মত মেখে ২০ মিনিট রাখুন। চাইলে এর সাথে মধুও যোগ করতে পারেন। মধু ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখবে।

টমেটো:

১ টেবিল চামচ শসার রস ও ১ চা চামচ টমেটোর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত মুখে ব্যবহার করুন। এটি শুষ্ক ত্বককে মসৃণ ও সুন্দর করে তুলবে। শসা চাকা চাকা করে কেটে চোখের উপরে লাগিয়ে রাখুন এতে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হবে এবং ডার্ক সার্কেল চলে যাবে।

পেঁপে:

আমাদের ত্বকের মসৃণতা বাড়িয়ে তুলতে পাকা পেঁপে অত্যন্ত বেশি মাত্রায় কার্যকরী। পেঁপেতে পেক্টিন থাকে যা আমাদের রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বক থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি দিতে পারে। এজন্য ৩ বা ৪ টুকরো পেঁপে, ১টি কলা, ২ চামচ মধু দরকার।

প্রথমে পেঁপে ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে এবার তার সাথে মধু ও কলা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন ১৫ মিনিট ধরে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি মুখ ধুয়ে নিন। ভালো ফল পেতে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন এই ভাবে ম্যাসাজ করুন।

অলিভ অয়েল:

সাধারণত সব ধরণের ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল খুবই উপকারী। গোসলের আগে মুখে ও শরীরে অলিভ অয়েল লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর গোসল করে ফেলুন। এছাড়া অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে হালকা মিশ্রণ তৈরী করে মুখে লাগান। এতে আপনার মুখের মৃত কোষ উঠে যাবে।

শীতে বিশেষ করে ছেলেদের ত্বক হয় বেশি রুক্ষ ও খসখসে। ফলে ত্বক ফেটে যায়। বাইরের ধুলাবালি আর ত্বক তৈলাক্ত হওয়ায় অনেকেরই মুখে ব্রণ উঠে। এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকার ফলে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ত্বক অনেক বয়স পর্যন্ত মসৃণ ও টানটান থাকে।

গোলাপজল

আপনার ত্বক কি খুব রুক্ষ আর শুকনো? তা হলে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করার আগে গোলাপজল ব্যবহার করুন। স্প্রে বোতলে গোলাপজল ভরে রাখুন। স্নানের পরে ও আগে সারা শরীরে স্প্রে করে নিন, তারপর সঙ্গে সঙ্গে ময়শ্চারাইজার মেখে ফেলুন। গোলাপজল ময়শ্চারাইজারের আর্দ্রতা ত্বকের গভীরে ঢুকতে সাহায্য করবে।

মধু:

ত্বক মসৃণ করার সবথেকে সহজ উপায় হলো মধু। ত্বক যদি খুব বেশি পরিমাণে শুষ্ক হয় তবে তা দূর করতে মধুর সাহায্য নিন। এই কাজটি রাতে করলে সব চাইতে ভালো ফল পাবেন। এক টেবিল চামচ মধু হাতে নিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন ২০-২৫ মিনিট। পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন পানি দিয়ে।

পানি ও শাকসবজি:

আমাদের ত্বকের শুষ্কতা অনেকটাই বেড়ে যায় খাদ্যাভ্যাসের কারণে। তাই ত্বকের আদ্রর্তা বজায় রাখতে পানিযুক্ত খাবার খাওয়া অনেক বেশি জরুরি। পানি, সবজি ও ফলমূল খান। এগুলো দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখে ও ত্বক শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়াও পরিমাণমতো পানি পান না করলে ত্বক পানিশূন্য হয়ে পরে। এতে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পরে। তাই দিনে ১২ গ্লাস পানি পান করুন।

ওটমিল ও দারচিনি:

ওটমিল আমাদের ত্বকের মৃত কোষগুলিকে খুব সহজেই পরিষ্কার করে এবং ত্বককে মসৃণ করে। দারচিনি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমদের ত্বকের রুক্ষতা বা যেকোনো ইনফেকশন, বলিরেখা এগুলি দূর করে ত্বকের মসৃণতা বাড়িয়ে তোলে।

২ বড় চামচ ওটমিল, ১/২ চামচ দারচিনি পাউডার ও ১ বড় চামচ দুধ ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর আপনার আঙুলের সাহায্যে মুখে ৪-৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে ১ সপ্তাহের মধ্যেই আপনি পার্থক্য লক্ষ্য করবেন।

গাজর:

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে গাজর দুর্দান্ত কারণ গাজর পটাসিয়ামযুক্ত। শরীর এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখতে নিয়মিত গাজরের জুস পান করুন।

নারকেল তেল:

নারকেল তেলে প্রাকৃতিকভাবে পরিপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি ত্বককে হাইড্রেট এবং মসৃণ করতে পারে। নারিকেল তেলে রয়েছে লাউরিক অ্যাসিড, যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷

কারণ এই ফ্যাটি অ্যাসিড এবং আদ্রতা মিশে যা তৈরি হয়, তা মুখের শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী৷ তাই এটি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে৷ এ কথা জানান জার্মান ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা.হান্স-গিয়র্গ ডাওয়ার৷