চোখের নিচে কালো হয়ে যাওয়ার কারণ কি?

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল এখন খুব সাধারণ একটি সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়ের চোখেই এটি দেখা যায়। অনেকের দুই চোখের নিচের অংশটুকু কালচে হয়ে থাকে। কারও বা হয়তো একটু ফুলেও থাকে। মুখের বাকি অংশের রঙের সঙ্গে এটি তখন বেমানান দেখায়। এটি ঢাকতে অনেকে বাধ্য হয়ে প্রসাধনী, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে যাই হোক, চোখের নিচে কালো হয়ে গেলে কেবল সৌন্দর্যহানিই ঘটে না, ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্তও দেখায়।

সাধারণত বয়স্ক লোক, সাদা চামড়া নয় এমন জনগোষ্ঠী এবং যাদের জিনগত এই প্রবণতা রয়েছে তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

চোখের নিচে যে কালো দাগ, একে আন্ডার আই ডার্ক সার্কেল বলা হয়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় পেরিঅরবিটাল অথবা আনফ্রাঅরবিটাল বা পিগমেন্টেশন বা ডার্কেনিং বলে। ত্বকের রঙের গাঢ়ত্ব নির্ভর করে মেলানিন নামক একটি রঞ্জকের উপর। যার যতবেশি মাত্রায় মেলানিন থাকবে তার ত্বক তত কালচে হবে।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, চোখের নিচে কালো হয়ে যাওয়ার কারণ গুলো কি?

অপর্যাপ্ত ঘুম ও দেরিতে ঘুমানো:

অপর্যাপ্ত ঘুম, চরম অবসন্নতা বা স্বাভাবিক শোবার সময় থেকে কয়েক ঘণ্টা বেশি জেগে থাকার অভ্যাসের কারণে আপনার চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার ত্বককে নিস্তেজ ও ফ্যাকাসে করে তোলে, এতে করে আপনার ত্বকের নীচের কালো টিস্যু ও রক্তনালীগুলি দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। এছাড়াও ঘুমের অভাবে আপনার চোখের নিচে এক প্রকার তরল পদার্থ জমা হতে পারে, যাকে চোখের নিচের থলে বলা হয়।

অ্যালার্জি:

অ্যালার্জির ও চোখে শুষ্কতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় ত্বককে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষার করতে আপনার দেহ হিস্টামিন নিঃসরণ ঘটায়। এর ফলে চোখে চুলকানি, চোখ লাল হওয়া প্রভৃতি অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়াও হিস্টামিন আপনার রক্তকণিকা সমূহকে প্রশস্ত করে দেয় এবং তা আপনার ত্বকের নিচে আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট চুলকানির ফলে চোখের চারপাশে ত্বক ঘষা বা চুলকানোর ইচ্ছা জেগে ওঠে। যা করলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। জ্বলুনি, ফোলাভাব ও রক্তনালীগুলি ভেঙে যেতে পারে। যার ফলে চোখের নিচে কালো দাগ তৈরি হতে পারে।

ডিহাইড্রেশন:

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূণ্যতা চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার একটি অন্যতম কারণ। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির সরবরাহ না থাকলে চোখের নীচের ত্বক নিস্তেজ হতে শুরু করে এবং চোখ ভেতরের দিকে ডেবে যায়।

চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ:

টেলিভিশন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই অতিরিক্ত ধকলের কারণে আপনার চোখের চারপাশের রক্তনালীগুলি বড় হয়ে যেতে পারে। ফলস্বরূপ, আপনার চোখের চারপাশের ত্বক কালো হয়ে যায়।

বয়সের প্রভাব:

চোখের নিচের কালো দাগের আরও একটি বড় কারণ হল বয়স বেড়ে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক আরও পাতলা হতে থাকে। বয়সের সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় চর্বি ও কোলাজেনের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। ফলস্বরূপ ত্বকের নীচের অন্ধকার রক্তনালীগুলি আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং চোখের নিচের অঞ্চলটি কালো হয়ে যায়।

রোদ:

অতিরিক্ত সময় রোদে পুড়লে আপনার শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ মেলানিনের সৃষ্টি হয়। এটি রঞ্জক, যা আমাদের ত্বককে রঙিন করে তোলে। খুব বেশি রোদে পুড়লে তা থেকে চোখের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রঞ্জকতা বৃদ্ধি পায়। যা চোখের নিচের অংশে কালো দাগের মতো মনে হয়।

জিনগত কারণ:

জিনগত কারণেও অনেক সময় চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। অর্থাৎ, পারিবারিক ইতিহাসও চোখের নিচের কালো দাগের জন্য দায়ী হতে পারে। শৈশবে শুরুর দিকে এটি দেখা দিলে তা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য হবার সম্ভাবনা বেশি। যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। অন্যান্য কারণ যেমন- থাইরয়েড রোগের পূর্বাভাস হিসেবেও চোখের কালো দাগ সৃষ্টি হয়।

চোখের মেকআপ:

এটি আরেকটি বিষয় চোখে ডার্ক সার্কেল তৈরি করার। চোখের মেকআপ ঠিকমতো না পরিষ্কার করলে কালো দাগ পড়তে পারে। তাই মেকআপ করার পর ঠিকমতো চোখ পরিষ্কার করুন।

খুব বেশি চোখ ঘষা:

এটি আরেকটি প্রচলিত অভ্যাস চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার। কারণ, এই অভ্যাস ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চোখ ঘষার কারণে ত্বকে প্রদাহ হয়ে কালো দাগ তৈরি হয়।

দুশ্চিন্তা:

চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার খুব প্রচলিত কারণ হলো কোন কারণে খুব বেশি মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত কাজের চাপ।

মুক্তি পেতে করণীয়-

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখুন।
  • রোদে চলাফেরা করার সময় চশমা ব্যবহার করুন।
  • রাতের ঘুমটি হওয়া চাই একটানা। তাই আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমের আগে রিলাক্স মুডে চলে যান।
  • যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা কখনোই কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করবেন না।
  • যাদের শুষ্ক ত্বক তারা ক্লিনজিং ক্রিম এভয়েড করবেন।
  • মানসিক স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন। মনকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করুন সবসময়।
  • প্রতিদিন দিনের এক ফাঁকে ১০ মিনিট চোখ বুজে শবাসন করুন।