কিডনি সুস্থ্য রাখার উপায়।

আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল বৃক্ক বা কিডনি। কোনও কারণে কিডনি আক্রান্ত হলে বা কিডনিতে কোনও রকম সংক্রমণ হলে শরীরে একের পর এক নানা জটিল সমস্যা বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই শরীরের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে কিডনির যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর কিডনি ভাল রাখতে আমাদের কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ।

মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে। কিডনি ভালো রাখতে পারলে হার্ট ও ফুসফুস ভালো থাকবে। তাছাড়া কিডনি শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন ধরনের দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই কিডনি বিকল হলে বা ঠিকমত কাজ না করলে ঘটতে পারে নানা বিপত্তি। তাই কিভাবে কিডনি সুস্থ্য রাখা যায় এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনি সুস্থ রাখার উপায়

আসুন জেনে নেওয়া যাক, কিডনি সুস্থ রাখার উপায় সম্পর্কে-

পর্যাপ্ত পানি পান:

কিডনি সুস্থ রাখতে হলে পানি পানের বিকল্প নেই। পানি আপনার কিডনি থেকে সোডিয়াম এবং টক্সিন পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এটি ক্রনিক কিডনি রোগের ঝুঁকিও কমায়। পানি কিডনিকে সচল রাখতে ও কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপে সাহায্য করে।

প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে কিডনি ভালো থাকবে। অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে:

উচ্চ রক্তচাপ কিডনিতে ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বা উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো স্বাস্থ্যের অন্যান্য সমস্যার সাথে যদি উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় তবে আপনার শরীরে প্রভাব লক্ষণীয় হতে পারে।

রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরী।

ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে:

কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য সব সময়ই হুমকিস্বরূপ। নিয়ম না জেনে বা নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে অজান্তেই কিডনির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লবণ কম খেতে হবে:

খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করতে হবে।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যখন আপনার দেহের কোষগুলি আপনার রক্তে গ্লুকোজ (চিনি) ব্যবহার করতে পারে না তখন আপনার কিডনি আপনার রক্ত ফিল্টার করতে অতিরিক্ত কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়।

তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন:

মাংস বা এই ধরনের প্রাণিজ আমিষ খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দূর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে খাবার তালিকায় ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখতে হবে। এছাড়া মাছ খাওয়া যেতে পারে।

ব্যায়াম:

নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীরের জন্য খুবই ভাল এর পাশাপাশি এটি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকিও কমাতে পারে। এটি আপনার রক্তচাপকে হ্রাস করতে এবং আপনার হার্ট এর স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা কিডনির ক্ষতি রোধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটাচলা, দৌড়, সাইকেল চালানো এবং এমনকি নাচ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত।

ধূমপান না করা:

ধূমপান আপনার কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান দেহের রক্তনালীর ক্ষতি করে। অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপানের কিডনিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও মদপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই এগুলোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবে:

অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন।

সাইট্রাস ফল খেতে হবে:

লেবু কিডনি পাথর প্রতিরোধে বেশ কর্যকরী। কারণ, সাইট্রিক এসিডের লবণ সাইট্রেট ক্যালসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’ পাথর গঠনে বাধা দেয়। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড কিডনি পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অনেক সময় কিডনিতে জমে থাকা পাথর ভাঙ্গতে সাহায্য করে।

রেফারেন্স: