গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি হয় যেসব খাবার থেকে।

খাবারে একটু অনিয়ম হলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিক আর তারপর শুরু হয় পেটে ব্যথা। অনেক সময় সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে আলসার। তাই শুরুতেই আমাদের সতর্ক হওয়া জরুরি।

ফাস্ট ফুড খাওয়া, সঠিক সময়ে না খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন না করা ইত্যাদি অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। যেসব খাবার থেকে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলোর খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

আবার সবার যে একই খাবারে গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টি হবে তা কিন্তু নয়, একেক জনের একেক খাবারে সমস্যা হয়। তবে এমন কিছু খাবার আছে যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে। নিচে এমন কয়েকটি খাবার দেওয়া হলো –

শিম:

যেসব খাবার খেলে পেটের গ্যাস্ট্রিক হয় সেসব খাবারের তালিকার মধ্যে শিম শীর্ষে। শিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রাফিনোজ (raffinose) থাকে যা একটি জটিল শর্করা। এই শর্করা হজমের সমস্যা করে।

রাফিনোজ ছোট অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে বৃহত অন্ত্রে যায়। বৃহত অন্ত্রে ব্যাকটিরিয়াগুলি রাফিনোজ ভেঙে দিয়ে হাইড্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাস তৈরি করে যা মলদ্বার মাধ্যমে বের হয়।

দুগ্ধজাত পণ্য:

Diabetes milk
ল্যাকটোজ এমন একটি চিনি যা দুধ এবং বেশিরভাগ দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতে পাওয়া যায় যেমন পনির এবং আইসক্রিম। যেসব লোকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে এনজাইম ল্যাকটাস (lactase) উৎপাদন করতে পারে না তাদের ল্যাকটোজ (lactose) হজম করতে অসুবিধা হয়, যা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা হিসাবে পরিচিত। গ্যাস্ট্রিক ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার একটি লক্ষণ।

বিশ্বের প্রায় ৭৫% লোকেরা দুধে থাকা ল্যাকটোজকে ভেঙে ফেলতে পারে না। ফলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়।

আস্ত শস্যদানা:

whole Wheat
আস্ত শস্য যেমন গম এবং ওটগুলিতে ফাইবার, রাফিনোজ (raffinose) এবং স্টার্চ থাকে। এগুলি বৃহত অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙে যায়, যা গ্যাসের দিকে পরিচালিত করে। আসলে, চাল একমাত্র শস্যদানা যা গ্যাস সৃষ্টি করে না।

শাকসবজি:

Green vegetables
ব্রকলি, পুঁইশাক, বাঁধাকপি এবং ফুলকপির মতো কয়েকটি শাকসবজি গ্যাসের কারণ হিসাবে পরিচিত। শিমের মতো, এই সবজিগুলিতেও রাফিনোজ রয়েছে। তাই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা পরিমাণ মতো শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার:

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার কারণ আঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজি বেশি খেলে পাকস্থলী তার সবটা সহজে পরিপাক করতে পারে না।

কিছু খাবার অপরিপাক অবস্থায় চলে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে। সেখানে কিছু ব্যাকটেরিয়া ওসব খাবার খায়। এসব ব্যাকটেরিয়ার আয়ু খুবই কম তাই অল্প সময়েই মারা যায় এবং মৃত ব্যাকটেরিয়াগুলো থেকে গ্যাস্ট্রিক তৈরি হয়।

কার্বনেটেড পানীয়:

এই পানীয়গুলিতে উচ্চ পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে, এটি একটি গ্যাস। এ সব পানীয় শুধু পেটই ফাঁপায় না, সেই সাথে ওজনও বাড়ায় অনেক তাড়াতাড়ি। তাই বিশেষজ্ঞরা এ সমস্ত পানীয় থেকে দূরে থাকতেই পরামর্শ দিয়েছেন।

কিছু কিছু ফল:

কিছু কিছু ফল যেমন- আপেল, নাশপাতির মতো ফলগুলিতে প্রাকৃতিক সুগার, অ্যালকোহল, sorbitol থাকে যা দেহের হজম করতে সমস্যা হয়। অনেক ফলের মধ্যে দ্রবণীয় ফাইবারও থাকে।

sorbitol এবং দ্রবণীয় ফাইবার উভয়কেই বৃহত অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে হাইড্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাস তৈরি করতে ব্যাকটিরিয়াগুলি sorbitol এবং দ্রবণীয় ফাইবারকে ভেঙে দেয়। তাই এসব ফল থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

পেঁয়াজ:

পেঁয়াজের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা ফ্রুক্টোজ (fructose) নামে পরিচিত। রাফিনোজ (raffinose) এবং সরবিটলের (sorbitol) মতো, ফ্রুটোজ গ্যাস তৈরিতে অবদান রাখে।

তবে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার থেকে রান্না করে খাওয়া ভালো।

রসুন:

পেঁয়াজের মতো, রসুনে ফ্রুক্ট্যানস (fructans) রয়েছে, যা FODMAPs ফুলে যাওয়া কারণ হতে পারে। রসুনে পাওয়া অন্য যৌগগুলিতে যেমন ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং গ্যাসের মতো লক্ষণ রয়েছে। তবে রান্না করা রসুন এই প্রভাবগুলি হ্রাস পেতে পারে।

চিউইং গাম:

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে চুইংগাম চিবোনোর সময় পেটে অনেক বেশি বাতাস ঢোকে আর তা থেকেও অনেক সময় পেট ফাঁপতে পারে বা গ্যাস হতে পারে।

আপনার চিকিৎসক আপনাকে গ্যাস কমাতে চিউইং গাম বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারেন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার:

প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি হল প্যাকেটজাত পণ্য যেমন রুটি, স্ন্যাকস খাবার ইত্যাদি। এগুলিতে ফ্রুক্টোজ এবং ল্যাকটোজ সহ বিভিন্ন ধরণের উপাদান রয়েছে। এই সংমিশ্রণে গ্যাস বাড়তে পারে।

মসুর ডাল:

মসুর ডাললেবু। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর কার্বস পাশাপাশি আয়রন, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ জাতীয় খনিজ রয়েছে। উচ্চ ফাইবারযুক্ত সামগ্রীর কারণে এসব খাবার কিছু লোকেদের মধ্যে গ্যাস সৃষ্টি করে।

গম:

গম বেশিরভাগই রুটি, পাস্তা এবং পিজ্জার পাশাপাশি কেক, বিস্কুট, প্যানকেকস এর মতো বেকড পণ্যগুলির উপাদান। কিছু লোকদের জন্য গম বড় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন গ্যাস, ডায়রিয়া এবং পেটের ব্যথা ইত্যাদি।

গমও FODMAPs এর একটি প্রধান উৎস, যা অনেক লোকের হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক বেদনাদায়ক হতে পারে তবে এটি সাধারণত বিপজ্জনক নয়। যদি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বা ফোলাভাবের জন্য সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমরা ডায়েট এবং জীবনযাত্রার দিকে নজর দিতে পাড়ি। অনেক সময় জীবনযাত্রা এবং ডায়েটের পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা যায়।

রেফারেন্স:
এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: