পেঁয়াজ হাড়ের ঘনত্ব, সর্দি-কাশি ও হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী।

যেকোনো খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের জুড়ি নেই। পেঁয়াজ এতটাই জনপ্রিয় যে প্রায় প্রতিটি রান্নাঘরে প্রতিদিন কোন না কোন রান্নাতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি পেঁয়াজের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে।

চানাচুর মাখা, মুড়ি মাখা আর সবার প্রিয় চটপটি ও ফুচকা এগুলিতে পেঁয়াজ ছাড়া কি চলে? আর রান্নার ক্ষেত্রে তো বলারই দরকার হয় না। ডিম ভুনা থেকে শুরু করে মাংস রান্না পর্যন্ত পেঁয়াজ ছাড়া অসম্ভব।

ডিম ভাঁজি খাবেন কিংবা আলু ভাঁজি খাবেন সাথে পেঁয়াজ তো লাগবেই। ভর্তা তো না বলেই নয়। পেঁয়াজ দিয়ে ভর্তা খুবই সুস্বাদু। খাবারের পাশাপাশি পেঁয়াজ অনেকে চুলেও ব্যবহার করে।

পেঁয়াজে দুটি ফাইটোকেমিক্যাল যৌগ (অ্যালিয়াম এবং অ্যালিল ডিসলফাইড) রয়েছে যা, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ নিরাময় করে।

পেঁয়াজের স্বাস্থ্য উপকারিতা

পেঁয়াজ ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ হওয়ায় আমাদের ঠান্ডা এবং জ্বর উপশমে বেশ ভালো। নিচে পেঁয়াজের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে:

সাধারণত দুধ জাতীয় খাবার হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়া পেঁয়াজও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

২৪ জন মধ্যবয়সী মহিলাদের মধ্যে একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, যারা আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৩.৪ আউন্স (১০০ মিলি) পেঁয়াজের রস খেয়েছেন তাদের হাড়ের ঘনত্ব অন্যদের তুলনায় ভালো ছিল।

পেঁয়াজ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করতে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের স্তরকে বাড়িয়ে তুলতে এবং হাড়ের ক্ষয় হ্রাস করতে সহায়তা করে যা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে পারে এবং হাড়ের ঘনত্বকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ক্যান্সাররের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

পেঁয়াজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি দুর্দান্ত উৎস। ২৫টিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে পেঁয়াজে।

গেল্ফ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণা অনুসারে, স্তন এবং কোলন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে লাল পেঁয়াজ খুবই কার্যকর।

দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত পেঁয়াজ খেয়েছে সেসব লোকদের মধ্যে ক্যান্সারের হার সর্বনিম্ন ছিল।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:

পেঁয়াজ ফাইবার এবং প্রিবায়োটিক (prebiotics) সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রিবায়োটিক হল ননডাইজেস্টেবল(nondigestible) ফাইবার যা উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অন্ত্র ভেঙে যায়।

যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে, আমাদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

হার্ট ভালো থাকে:

একাধিক জনসংখ্যার গবেষণায় দেখা গেছে যেসব লোকেরা অ্যান্থোসায়ানিন (anthocyanins) সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে তাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

৪৩,৮৮০ পুরুষের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১৩ মিলিগ্রামের অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার (লাল পেঁয়াজ) খাওয়ার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ১৪% কম ছিল।

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, পেঁয়াজে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে:

২১ শতকের সব থেকে ভয়ঙ্কর এই রোগকে দাবিয়ে রাখতে পেঁয়াজের কোনও বিকল্প হয় না। পেঁয়াজে উপস্থিত বেশ কিছু উপদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে বৃদ্ধি হতে দেয় না এবং ইনসুলিনের ঘাটতি যাতে না হয়, সেদিকেও ভূমিকা রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি হ্রাস পায়।

পেঁয়াজ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে যা ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। একটি সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পেঁয়াজের রস রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে পারে।

যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি করে:‌

মানুষের যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি করে পেঁয়াজ। এক টেবিল চামচ পেঁয়াজ ও এক চামচ আদার রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। দিনে তিনবার। এতে যৌন ইচ্ছা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

সর্দি-কাশিতে কাজ করে:

ঠান্ডা লাগার ফলে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি বা সামান্য গা ব্যথায় দারুণ কাজ করে। সামান্য পেঁয়াজের রসের সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন।

দেহের তাপমাত্রা কমায়:

জ্বরে দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকলে পাতলা করে কাটা পেঁয়াজ (onion) পা-র তালুতে দিয়ে রাখলে তা তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে:

পেঁয়াজ বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে পারে, যেমন এসচেরিচিয়া কোলি (ই কোলি), সিউডোমোনাস আরুগিনোসা, স্টাফিলোকক্কাস অরিয়াস (এস অরিয়াস) এবং ব্যাসিলাস সেরিয়াস।

পেঁয়াজ কাটতে গেলে চোখ থেকে পানি ঝরে, চোখ জ্বালা পোড়া করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পেঁয়াজ মাজ বরাবর কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এতে করে চোখ জ্বালা পোড়া কিছুটা হলেও কমবে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: হেলথলাইন