আলু বোখরা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, হজম শক্তি ও রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে।

আলু বোখারা শক্তির একটি ভাল উৎস এবং এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না। এতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, যা এগুলিকে গাঁজন ছাড়াই শুকাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা আপনাকে আপনার অন্ত্র এবং মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে।

যেকোনো রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে অনাহাসে ব্যবহার করা যায় এই ফলটি। রসালো আর টক স্বাদের এই ফলটি বোটানিক্যালি Rosaceae পরিবারের অন্তর্গত। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Prunes এবং ইংরেজিতে: Common plum.

কাটিংকা, ফ্লাউমেন, হানিটা, আওয়াবাখার, প্রেজেন্টাসহ নানা নামে বিশ্ব জুড়ে পরিচিত ফলটিকে বাঙালিরা চেনেন আলুবোখারা হিসেবে। সারা বিশ্বে মোট দুই হাজার প্রকারের আলুবোখারা পাওয়া যায়। জুলাই থেকে অক্টোবর এই ফলের মৌসুম।

রান্নায় আলু বোখারা ব্যবহার করা হয় খাবারে স্বাদ ও গন্ধ আনার জন্য। পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, ভুনা খিচুড়ি, কাবাব আলুবোখরা ছাড়া জমে না। এছাড়াও আলু বোখারা দিয়ে বোরহানি, আচার, শরবত, সালাদ, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি তৈরী করা যায়।

গরমের সময় আলু বোখারা শরবত অত্যন্ত উপাদেয়, শরিরের ক্লান্তি দূর করতেও এটি বিশেষ কার্যকরী। আলুবোখরা ভিটামিন “এ”, “সি”, “ই”, “ডি” এর উল্লেখযোগ্য একটি উৎস। তাছাড়া অসাধারণ পুষ্টিগুণে ভরপুর আলু বোখারায় রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন ও ফাইবার যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি।

আলু বোখরা পুষ্টিগুণ

নিচে আলু বোখরার পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –

  • খাদ্যশক্তি: ৪৬ কিলোক্যালরি
  • প্রোটিন: ০.৭০ গ্রাম
  • ফাইবার: ১.৪০ গ্রাম
  • ভিটামিন কে: ৬৫%
  • ভিটামিন এ: ১৪%
  • রিবোফ্লাভিন: ৯%
  • ভিটামিন বি-৬: ৯%
  • নিয়াসিন: ৮%

আলু বোখরার উপকারিতা

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, আলুবোখরা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী-

ভিটামিনের উৎস:

এই ফলটিতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন ও ফাইবার, যা একজন সুস্থ্য মানুষের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। বিশেষ করে আলু বোখারায় যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন “এ”, “বি”, “সি” এবং “ই” রয়েছে।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

কোলন ক্যান্সার সনাক্ত করা কঠিন। ডায়েট কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে, আলু বোখারা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:

আলু বোখারায় উপস্থিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বয়স্কদের একটি সাধারণ সমস্যা। ছয়টি আলু বোখারায় ৪ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে।

পটাশিয়াম এর উৎস:

আলু বোখারা পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস। পটাসিয়াম একটি ইলেক্ট্রোলাইট যা বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে। পটাসিয়াম হজম শক্তি বৃদ্ধি, হার্ট সুস্থ্য রাখতে, স্নায়ু প্রবণতা এবং পেশী সংকোচনের পাশাপাশি রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ১ কাপ আলু বোখারা ৬৩৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামের উৎস রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন প্রায় ৪,৭০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।

লৌহ রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে:

রক্তশূন্যতা দেখা দেয় যখন শরীরে পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা থাকে না, যা আয়রন তৈরি করতে সাহায্য করে। শ্বাসকষ্ট, বিরক্তি এবং ক্লান্তি সবই রক্তাল্পতার লক্ষণ। আলু বোখারা আয়রনের একটি দুর্দান্ত উৎস এবং এটি আয়রনের অভাব প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। ১ কাপ আলু বোখারাতে ০.৮১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:

চর্বি এবং কোলেস্টেরল আপনার ধমনী সংগ্রহ করে প্লাক নামক পদার্থ তৈরি করতে পারে। যখন ধমনীতে প্লাক তৈরি হয়, তখন এটি এথেরোস্ক্লেরোসিস (atherosclerosis) সৃষ্টি করতে পারে এবং ধমনী সংকুচিত হতে পারে। এ থেকে হার্ট ফেইলিওর, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, আলু বোখারা এথেরোস্ক্লেরোসিসের (atherosclerosis) বিকাশকে ধীর করতে সাহায্য করতে পারে। অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে আলু বোখারায় থাকা দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

রক্তচাপ কমায়:

আলু বোখারা তো আমরা সবাই চিনি। কিন্তু কখন কি ভেবে দেখেছি এই আলুবোখারা আমাদের স্বাস্থ্যের এত উপকার করতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে আলু বোখারা রক্তচাপকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালের একটি গবেষণা জানিয়েছে যে, যে গ্রুপগুলিকে প্রতিদিন আলু বোখারা দেওয়া হয়েছিল তাদের রক্তচাপ হ্রাস পেয়েছিল।

ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে:

এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনাকে পূর্নতা অর্থাৎ পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আলু বোখারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা ধীরে ধীরে হজম হয়। ধীরে হজম মানে ক্ষুধা লাগতে সময় নেয়।

এছাড়া আলু বোখরা মিষ্টি হলেও এর গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে। এর মানে ধীরে ধীরে আপনার রক্তে গ্লুকোজ (চিনির) মাত্রা বাড়ায়।

এমফিসেমা (emphysema) থেকে রক্ষা করে:

দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), এমফিসেমা সহ, একটি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ যা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ উদ্ভিদ পলিফেনল COPD এর ঝুঁকি কমাতে পারে। আলু বোখারাতে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা এমফিসেমা (emphysema) থেকে রক্ষা করে।

হাড়ের গঠনে সাহায্য করে:

বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে, নিয়মিত আলুবোখরা খেলে হাড়ের গঠন, সুস্থতা এবং মানসিক তীক্ষ্ণতা উন্নতি হয়। ২০১৬ সালের একটি প্রাণী অধ্যয়ন সূত্রে দেখা গেছে যে, আলু বোখারা হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস রোধ করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

অন্য একটি গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে আলু বোখারা অস্টিওপোরোসিস প্রবণ মহিলাদের পোস্টমেনোপজাল হাড়ের ভর ক্ষয় রোধ করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

আলুবোখারায় পাওয়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন “সি” আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। যখন তখন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকেও বাঁচাতে পারে আলুবোখারা।

সতর্কতাঃ

আলুবোখারা অতিরিক্ত খেলে পেটের নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভিতর দিয়ে যান তাহলে খাবার আগে অবশ্যাই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: