ত্বকে কি কি ধরণের সমস্যা হতে পারে।

অনেক সময় আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হতে পারে। আমরা সবাই কম বেশি ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যাই ভুগে থাকি৷ অন্যান্য সময়ের তুলনায় গরমকালে ত্বকের রোগ বেশি হয়ে থাকে৷ এছাড়া অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যার অন্যতম কারণ৷

যদিও বেশিরভাগ ত্বকের ব্যাধি ছোটখাটো, কিছু কিছু সমস্যা আরও গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। আসুন আজ জেনে নিই ত্বকে কি কি ধরণের সমস্যা হতে পারে।

ত্বকে কি কি ধরণের সমস্যা হতে পারে

ত্বকে কি কি ধরণের সমস্যা হতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হল:

ব্রণ (Acne):

বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন টেস্ট্রোরেন আর প্রোজেস্ট্রোরেনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি অধিক হারে তেল নিঃসরণ শুরু করে। কোনো কারণে সিবেসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণের বাধার সৃষ্টি হয় এবং তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে যা ব্রণ (Acne) নামে পরিচিত।

এর উপর জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে পুঁজ তৈরি হয়। অনেক সময় বাইরে থেকে ছোট দেখালেও বেশ গভীর হতে পারে। এজন্য ব্রণের সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে কাল দাগ থেকে যেতে পারে।

সাধারণত ১৩ বছর বয়স থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত শতকরা ৯০ জনের ব্রণ কমবেশি হয়ে থাকে। ২০ বছর বয়সের পর থেকে ব্রণের প্রকোপ কমতে থাকে।

জ্বরঠোসা (Cold sore):

ঠোঁট ও ঠোঁটের চারপাশে সৃষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরলে পূর্ণ ফুসকুড়িকে জ্বরঠোসা বলে। সাধারণত এই ফুসকুড়িগুলি একসাথে পুঞ্জাকারে হয়ে থাকে। এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ফিভার ব্লিস্টার বা কোল্ড সোর বলে।

জ্বর হলে বা দেহে কোনো সংক্রমণ হলে ঠোঁটের কোণে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেয়। কখনো ঠোঁটের কোণ ফেটে যায় ও লাল দেখায়। প্রচণ্ড ব্যথা করে ও অস্বস্তি লাগে। এ অবস্থাকে আমরা বলি জ্বরঠোসা (Cold sore)। যদিও এটি বড় কোনো সমস্যা নয়, তবে বেশ যন্ত্রণাদায়ক।

ফোস্কা (Blister):

ফোস্কা, যাকে চিকিৎসকেরা Blister বলে থাকে, এটি তরল দিয়ে পূর্ণ থাকে। ফোস্কা সাধারণত হাত পুড়ে গেলে বা হাত দিয়ে অনেক সময় ধরে কোন কিছু করলে এবং বেশি সময় ধরে খারাপ ফিটিং এর জুতা পরে থাকলে ফোস্কা ওঠে।

ফোস্কা বিরক্তিকর, বেদনাদায়ক বা অস্বস্তিকর হয়ে থাকে।

ঘামাচি:

গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা৷ দেহের ঘামের বা ঘর্ম গ্রন্থি গুলোর মুখ যখন ময়লা ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য আটকে যায়, তখন ঘাম বের হতে না পেরে সেখানে তৈরি হয় ঘামাচি। ঘামাচি শরীরের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়৷

চুলকানি:

বিভিন্ন কারণে শরীরে চুলকানির সমস্যা হতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। চুলকানি খুব প্রচলিত একটা রোগ। বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যার কারণেই চুলকানি হয়। যাদের ত্বক খুব শুস্ক, যখন ময়েশ্চার কমে যায়, তখন চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়।

ফোঁড়া:

ফোঁড়া হল ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা আপনার ত্বকে হয়। কার্বাঙ্কেল হল ফোড়া খুবই বেদনাদায়ক।

সোরিয়াসিস:

সোরিয়াসিস দীর্ঘস্থায়ী একটি ত্বকের ব্যাধি। এটি অটোইমিউন রোগ হিসাবে বিবেচিত হয়। যার মানে হল আপনার ইমিউন সিস্টেম শরীরকে রক্ষা করার পরিবর্তে ক্ষতি করে। সোরিয়াসিস আপনার ত্বকে আঁশযুক্ত দাগ তৈরি করে যা কখনো কখনো রূপালী বা লাল হয় এবং চুলকানি ও বেদনাদায়ক হতে পারে। প্যাচগুলি কয়েক দিন থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আসতে পারে এবং যেতে পারে। বিভিন্ন ধরণের সোরিয়াসিস রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে।

হাম:

এটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ যা গলা এবং ফুসফুসের আস্তরণের কোষগুলিতে বৃদ্ধি পায়। এটি একটি সংক্রামক রোগ। যখনই আক্রান্ত কেউ কাশি বা হাঁচি দেয় তখন বাতাসের সাথে ছড়িয়ে পড়ে। যারা এই রোগে আক্রান্ত হয় তাদের জ্বর, কাশি এবং সর্দির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। একটি টেলটেল ফুসকুড়ি রোগের বৈশিষ্ট্য। হামের চিকিৎসা না করা হলে এটি কানের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং এনসেফালাইটিস (মস্তিষ্কের প্রদাহ) এর মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

জল বসন্ত:

চিকেনপক্স, যাকে ভেরিসেলাও বলা হয়ে থাকে, সারা শরীরে চুলকানি লাল ফোসকা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। একটি ভাইরাস এই অবস্থার কারণ। এটি শিশুদের বেশি প্রভাবিত করে। একবারের বেশি চিকেনপক্স সংক্রমণ হওয়া খুবই বিরল। এবং ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি চিকেনপক্স ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পর থেকে, এটি কমে গেছে।

দাদ:

শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে৷ দাদ ত্বকে একটি লাল, খসখসে, বৃত্তাকার চুলকানি সৃষ্টি করে। সময়ের সাথে সাথে, এটি একটি বৃত্ত বা একটি রিং আকার নেয়। এখান থেকেই রিংওয়ার্ম (Ringworm) বা “দাদ” নামটি এসেছে।

একজিমা:

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা ত্বকের এক ধরণের প্রদাহ৷ এর ফলে ত্বক প্রচুর চুলকায়, লালচে হয়ে যায়, ফুলে উঠে, ত্বক ফেটে যায় এবং চুলকানোর ফলে আক্রান্ত স্থান থেকে কখনও কখনও পানির মত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে৷ পরবর্তীতে সেখানে কালো স্পট পড়তেও দেখা যায়৷

শিশুদের ক্ষেত্রে পুরো শরীরেই চুলকানি থাকে৷ বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর পিছনের অংশ, কনুইয়ের সামনের অংশগুলি বেশি আক্রান্ত হয়৷ প্রাপ্ত বয়স্কদের হাত ও পা বেশি আক্রান্ত হয়৷ এছাড়া শরীরের অন্যস্থানও আক্রান্ত হতে পারে৷

আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ:

আর্সেনিকযুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেমন ত্বকের গায়ে ছোটছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যেতে পারে৷