ডায়াবেটিস হলে কি মাটির তলার সবজি খাওয়া যাবে?

মাটির তলার সবজি খাওয়া যাবে না তাহলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। মাটির তলার সব সবজিতে তো আর শর্করা ঠাসা থাকে না।

আর শর্করা বেশি যে সবজিতে সেটা পরিমাণমতো খেলে হলো। তাই ডায়াবেটিস হলেও মাটির তলার সবজি খাওয়া যাবে।

মাটির তলার সবজির মধ্যে যেটি বেশি বা সারাবছর খাওয়া হয়, সেটি হলো আলু। অনেক ডায়াবেটিস রোগীকে দেখা যাই আলু খান না এবং কর্তা যদি সুগার বা ডায়াবেটিসের রোগী হন তাহলে বাড়ীর গৃহিণীরা তাকে আলু বাদে অন্য সবজি খেতে দেন। ভূল একটি ধারণা।

এইরকম আরো অনেক ভুল ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে।  আলু নিয়ে গবেষণালব্ধ বিভিন্ন ফলাফল আলোচনা করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।

এটা ঠিক বা মেনে নিচ্ছি যে, আলুতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা বেশি। কিন্তু আলু ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসাবে পরিমিত পরিমানে এগুলি খেতে পারেন।

স্টার্চিবিহীন খাবার খাওয়া থেকে পরিমিত পরিমানে আলু খাওয়া তাদের জিআইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। টাইপ 2 ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের ভিত্তিতে আলু খাওয়া এড়ানো উচিত নয়।

অনেকে বলবেন আলু খাই না বা কোনোমতে অল্প একটু খাই। মিষ্টি আলু খেতে বলছেন, ওতো খাওয়াই যাবে না।

তাহলে শুনুন, বিজ্ঞান কিন্তু অন্যরকম বলছে। মিষ্টি আলু রক্তের সুগার বা ডায়াবেটিস কমায়। কি অবাক হলেন? আসলে তাই।

মিষ্টি আলুতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। আর ফাইবার রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম রক্তে শর্করা বাড়তে বাঁধা দেয়।

একজন ডায়াবেটিস রোগীর কতটা পরিমাণ মিষ্টি আলু খাওয়া উচিত?

মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ½ কাপ অর্থাৎ ৬৮গ্রাম অর্থাৎ ১০০ গ্রামের কম একটি সাধারণ পরিবেশনে থাকবে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য।

কাউফম্যান সুপারিশ করেন,ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের জন্য মাঝারি আকারের মিষ্টি আলুর অর্ধেক ডায়েটে রাখতে পারেন কারণ এটি ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেটের সমতুল্য।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন আলু সবচেয়ে ভাল?

মিষ্টি আলু হল ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অন্যতম সেরা আলু, কারণ এগুলি লো-জিআই এবং সাদা আলুর চেয়ে বেশি ফাইবারযুক্ত থাকে।

মিষ্টি আলু ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ এর একটি ভাল উৎস। Carisma আলু, এক ধরণের সাদা আলু, অন্য একটি নিম্ন-জিআই বিকল্প।

এবার আসি মাটির তলার সবজি গাজর, মূলা, বিট ও কচু সম্পর্কে:

অন্যান্য অ-স্টার্চি শাকসব্জির মধ্যে গাজর হল ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যের এক দুর্দান্ত সংযোজন।

এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়তে দেয় না।

ডায়াবেটিস রোগীদের গাজর কি এড়ানো উচিত?

না, গাঁজর খেতে পারেন। গাজরকে ব্রোকলি এবং লেটুসের মতো বিকল্পগুলির সাথে একটি স্টার্চিবিহীন সবজি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ গাজর নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

আপনি যদি গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে চান তবে রান্না না করে গাজর কাঁচা উপভোগ করুন।

মুলা কি ডায়াবেটিক ব্যক্তির পক্ষে ভাল?

মুলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভাল সহায়তা করে। অনাদিকাল থেকেই এটি সুবিদিত যে কীভাবে মূলা কম গ্লাইসেমিক সূচককে নিয়ে গর্ব করে, যার অর্থ মুলা খাওয়া রক্তে চিনির মাত্রাকে প্রভাবিত করে না।

Taro root বা কচু:

প্রতিরোধী স্টার্চ এবং ফাইবারের এই সমন্বয়টি Taro রুটকে একটি ভাল কার্ব বিকল্প হিসাবে তৈরি করে – বিশেষত ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য।

Taro মূলটিতে ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ রয়েছে, যা উভয়ই ধীরে ধীরে হজম হয় এবং খাবারের পরে রক্তে শর্করার স্পাইক কমায়।

Taro বা কচুতে ডায়েট্রি ফাইবার, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি 6, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ বেশি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমাণমতো খেতে পারেন।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার চাহিদা মেটাতে এসব সবজি খাওয়া উচিত।

তাই আলু-গাজর এসব খাওয়া যায় ডায়াবেটিস হলেও। কিন্তু সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমানমত।

 পেঁয়াজ কি সুগারের রোগীর পক্ষে ভালো?

হ্যা ভালো। পেঁয়াজ খাওয়া রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে যা ডায়াবেটিস বা প্রিডিবিটিস রোগীদের জন্য বিশেষত তাৎপর্যপূর্ণ।

টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪২ জনের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে তাজা লাল পেঁয়াজের ৩.৩ আউন্স (১০০ গ্রাম) খাওয়া রোজা রক্তে শর্করার মাত্রা চার ঘন্টার পরে প্রায় ৪০ মিলিগ্রাম / ডিএল হ্রাস করে।

তদুপরি, পেঁয়াজে ফাইবার এবং ফলিক অ্যাসিড(বি৯) থাকে। ফলিক অ্যাসিড একটি বি ভিটামিন যা শরীরকে স্বাস্থ্যকর নতুন কোষ তৈরি করতে সহায়তা করে।

বিবিসি অনুসারে-পেঁয়াজগুলি কাঁচা বা রান্না করা হোক না কেন স্বাস্থ্যসম্মত, যদিও কাঁচা পেঁয়াজে উচ্চ স্তরের জৈব সালফার মিশ্রণ রয়েছে যা অনেকগুলি সুবিধা দেয়।

এমন কী শালগম, রসুন ও আদায় কিন্তু শর্করার পরিমানও কম। তাই মাটির নিচের সবজি মানেই তা বিপজ্জনক নয়।

তবে যাদের ডায়াবেটিস অনেক বেশি তারা কি করবেন? চিকিৎসকদের মতে, সবজি সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিলে অতিরিক্ত শর্করার বেশির ভাগ বেরিয়ে যায়। সেই সবজি খেলে ভয় থাকে না।

মাটির তলার বেশ কিছু সবজি অ্যান্টিইনফ্লেমটরি ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হওয়ায় তা আরো শর্করা প্রতিরোধ করতে পারে। তাই পরিমানে কম ও সিদ্ধ করে এই সবজি খেলে অন্য কোনো অসুখের ভয় থাকে না।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

সূত্রঃ