আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধক ও দাঁতের জন্য ভাল।

আপেল যে অতি স্বাস্থ্যকর একটি ফল সেটা বলা বা বোঝার জন্য পুষ্টিবিদ হওয়ার দরকার নেই। বাদ দিলাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলস এর কথা।

অপরূপ ও বিস্ময়কর রূপের অধিকারী, মনভোলানো মায়াবী রং সমৃদ্ধ ত্বক যেটা খাওয়া যায়। আকার, আকৃতি, বর্ণ, সুগন্ধ, পুষ্টি সর্বদিক দিয়ে এমন ইউনিক একটি ফল যা বলে বোঝানো যাবে না।

বর্তমান পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে চাষকৃত ও সবথেকে বেশি খাওয়া হয় কোন ফলটি?

অলৌকিক বা বিস্ময়কর গুণসম্পন্ন এবং টপ হেলথিয়েস্ট ফুড হিসাবে স্বীকৃত কোন ফলটি? সেটি আর কিছুই নয়, সেটি আমাদের সকলের প্রিয় ফল আপেল।

প্রকৃতি এতো সুন্দর প্যাকেজিং করে আপেলকে আমাদের জন্য পাঠিয়েছে যে, দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে অত্যন্ত পছন্দের এই ফলটি এখন সারা বছর জুড়ে পাওয়া যায়।

আপেলের পুষ্টিগুণ

আপেল খুবই জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। আপেল সম্পর্কে একটা প্রবাদ আছে যে ‘An apple a day, keeps the doctor away অর্থাৎ দিনে একটি আপেল খান, রোগ মুক্ত জীবন পান’। আপেলের উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেওয়া হলো:

  • পানি:৮০%
  • ক্যালরিঃ ৯৫
  • শর্করাঃ ২৫ গ্রাম
  • ফাইবারঃ ৪ গ্রাম
  • ভিটামিন “সিঃ” ১৪%(RDI)
  • পটাশিয়ামঃ ৬%(RDI)
  • ভিটামিন “কে”: ৫%(RDI)

আপেলের উপকারীতা

আপেলের উপকারীতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

ওজন কমায়:

আপেল ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলটিতে উপস্থিত পেকটিন নামক ফাইবার কোনও ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে এর ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

যারা ওজন কমাতে চান তারা দৈনিক তিনটি আপেল খেলে ভালো ফল পাবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধক:

আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান উপাদান।

আর এই উপাদান দুটি আমাদের শরীরের DNA এর ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যানসারও রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% কমে। কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকে।

আপেলের মধ্যে ট্রিটারপেনয়েডস উপাদান লিভার, স্তন এবং কোলোনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়।

তাছাড়া এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আপেলের মধ্যে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।

হার্ট ভালো রাখে:

প্রতিদিন আপেল খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যেমে আপনি আপনার হার্টকে ভালো রাখতে পারেন। আপেলের মধ্যে পেকটিন নামক ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রনালীতে কোলেস্টরেল জমতে দেয় না।

যার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে। এছাড়াও, আপেলের খোসার মধ্যে যে ফেনলিক উপাদান রয়েছে, যা রক্তনালীর থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।

এর ফলে হার্টে রক্তচলাচলা স্বাভাবিক থাকতে। এছাড়া আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস শতকরা ২০ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

দাঁতের জন্য ভাল:

আপেল মিষ্টি ফল হলেও দাঁতের জন্য খুব ভালো।

সাধারণত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়, আপেলের রস ৮০% পর্যন্ত দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। পাশাপাশি আপনার দাঁতকে করে তুলবে সাদা ও উজ্জ্বল।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

আপেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা কুয়েরসেটিন নামে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে।

হাড়ের জন্য ভালো:

আপেল হাড়কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়িয়ে তোলে এবং মস্তিস্ক সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।

পানিশূন্যতা দূর করে:

আপেল ৮০% পানি থাকাই এটা পানিশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। আপেলে প্রচুর পানি থাকে যার ফলে আপেল খেলে পানির তৃষ্ণা মেটে এবং শরীর ঠান্ডা থাকে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:

আপেল টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যারা প্রতিদিন আপেল খান, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ২৮% কমে যায়।

কারণ আপেলে থাকা পেকটিন নামক ফাইবার ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও আপেল খেতে পারে।

সতর্কতা

আপেল এমন একটি স্বাস্থ্যকর ফল যা সব মানুষের জন্য নিরাপদ। আজ পর্যন্ত আপেল বা আপেল জুস এর কোন ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে আপেল এর বীজ এ সায়ানাইড থাকায় এটি না খাওয়া ভালো।