রসুন ব্রণ দূর করতে খুবই কার্যকরী। জেনে নিন ত্বকের যত্নে রসুন এর ব্যবহার সম্পর্কে।

অসাধারণ পুষ্টিগুণে ভরপুর রসুন। রসুন সাধারনভাবে মসলা হিসেবে ব্যবহার হলেও রসুনের উপকারিতা সকল ক্ষেত্রে রয়েছে। রসুন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওষধি হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হার্ট সুস্থ রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত রসুনের ভূমিকা রয়েছে।

রসুনে বিদ্যমান জিঙ্ক এবং কপার মাথার তালুর রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং খুশকির সমস্যা দূর করে দেয় চিরতরে। ফলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রতিদিন এক কোয়া রসুন দেহকে ক্যান্সারসহ আরো জটিল রোগ থেকে দূরে রাখে। রসুন ব্যাক্টেরিয়ানাশক ও ত্বকের বার্ধক্য দূর করার একটি ভালো উপাদান। তাছাড়া ত্বক উজ্জ্বল, নিখুঁত ও সজীব করতে সহায়তা করে এটি।

আপনি হয়ত অবাক হবেন রূপচর্চায় রসুনের বিরাট অবদান রয়েছে। ত্বকের যত্নে রসুনের জুড়ি নেই। ব্রণ এবং ব্রণের দাগ নিমিষে দূর করে দিতে পারে রসুন। শুধু ত্বক থেকে ব্রণ দূর করে না। রসুন ত্বকের যে কোন সমাধানে বেশ উপকারি। চুলের যত্নেও রসুনের রয়েছে বড় গুণ।

ত্বকের যত্নে রসুন

আসুন জেনে নিই, ত্বকের যত্নে রসুনের নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে-

ব্রণ কমায়:

রসুন বহু শতাব্দী ধরে ঔষধিভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রসুনের অ্যালিসিন, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল এবং এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অ্যালিসিন ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলতে সহায়তা করে। এটি ফোলা এবং প্রদাহ হ্রাস করতে এবং রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়তা করে। এই উপকারী প্রভাবগুলি ত্বককে আরও পুষ্টি গ্রহণ করতে সাহায্য করে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এটি ত্বক পরিষ্কার করে।

রসুন ভিটামিন “সি” ও ভিটামিন বি-6 এ ভরপুর। যা কিনা ব্রণের সমস্যা দূর করা সহ ত্বকের আরও অনেকগুলো সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রসুনের রস ব্রণের লাল ও ফোলাভাব কমিয়ে দিতে পারে খুব কম সময়েই। ব্রণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে এক কোয়া রসুনের খোসা ছাড়িয়ে রস বের করে নিন। এবার রসটুকু ব্রণের ওপর মাখিয়ে নিন। ৫-১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দিনে দুই-তিনবার এভাবে রসুনের রস মাখালে ব্রণ ছোট হয়ে আসবে। রসুনের অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান দ্রুত ব্রণ দূর করে দিতে সাহায্য করে।

ব্ল্যাক হেডস দূর করে:

২-৩টি রসুনের কোয়া কুচি, ১ চামচ ওটস, ২-৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েলের সাথে আধা চা চামচ লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। রসুন কঠিন হোয়াইট হেডস এবং ব্ল্যাক হেডস দূর করে দেয় নিমিষে।

লোপকূপ পরিষ্কার করে:

অনেকের ত্বকের কোষ গহ্বর বড় হয়ে যায় যা ওপেন পোরস হিসাবে পরিচিত। যাদের মুখে ওপেন পোরস আছে তাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয় কারণ ছিদ্রগুলির মধ্যে ধুলো-ময়লা ইত্যাদি জমে থাকে। ফলে ব্রণের সমস্যা বাড়ে৷ এ পোরসের সমস্যা কমাতে একটা রসুন অর্ধেক টমেটোর সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। এবার পেস্টটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিটের মত। তারপর ধুয়ে ফেলুন ভালো করে। এটা ত্বক পরিষ্কারের পাশাপাশি ও লোমকূপ সংকুচিত করে।

বয়সের ছাপ ধীর করে:

নিজের যৌবন চিরকাল ধরে রাখতে চান? তা হলে রসুন খান। কারণ রসুনে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা স্কিনকে সতেজ রাখে। রিঙ্কেল, ফাইন লাইনস, এজ স্পট, ডার্ক স্পট থেকে স্কিনকে দূরে রাখে রসুন। শুধু কাঁচা রসুন ১ কোয়া মধু ও লেবুর সাথে চিবিয়ে খেতে হবে।

চুল পড়া কমায়:

রসুন যেমন চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তেমনই অতিরিক্ত চুল পড়াও নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েকটা রসুনের কোয়া কেটে নিয়ে রসও করে নিন। এই রস সপ্তাহে দুদিন লাগান। এক মাসের মধ্যেই ফল পাবেন। এছাড়া অলিভ অয়েলের মধ্যে রসুন ভালো করে ফুটিয়ে সেই তেলটা স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। চুল পড়া বন্ধ হতে বাধ্য।

ত্বকের ইনফেকশন নিরাময়ে:

সম্ভব হলে প্রতিদিন কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান। এতে ত্বকের নানা ধরণের স্কিন ইনফেকশন থেকে মুক্ত থাকবেন।

স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ:

নারীদের গর্ভকালীন সময়ে ও স্থূলতাসহ নানা কারণে টান পড়ে ত্বক ফেটে দাগ হয়ে যায়। এ দাগ সহজে মুছে না। তবে আগের চেয়ে দাগ অনেক হালাকা করে দিতে রসুনের বিকল্প নেই। রসুনের রস ও জলপাইয়ের তেল গরম করে দাগে মালিশ করতে হবে। কয়েক দিন ব্যবহার করলেই এর সুফল পাওয়া যাবে।

সতর্কতা

রসুন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। যেমন, Asthma রোগীরা রসুনের ব্যাপারে অনেক সতর্ক থাকবেন। তাদের রসুন গ্রহণ না করাই ভালো। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তাই ২-৩ কোয়ার বেশি দিনে গ্রহণ না  করা ভালো। সার্জারি বা অপেরেশনের আগে ব্যবহার না করাই ভালো।

রেফারেন্স: