কাঁচা হলুদ ব্রণ সারাতে, ত্বক ফর্সা করতে ও তারুণ্য ধরে রাখতে কার্যকরী।

পুষ্টি গুনে ভরপুর হলুদ। প্রাচীন কাল থেকেই হলুদ রান্নার পাশাপাশি রূপচর্চায়ও ব্যবহার হয়ে আসছে। সৌন্দর্যের দুনিয়ায় রাজত্ব করে বেড়ায় হলুদ। রূপচর্চার ইতিহাসে এই নামটি চিরন্তন। তাই হলুদকে ‘মিরাকল হার্ব’ বা অলৌকিক ভেষজ বলা হয়ে থাকে।

অনেকে শুকনো গুঁড়ো হলুদ ব্যবহার করে, তবে শুকনো গুঁড়ো হলুদের তুলনায় রূপচর্চায় কাঁচা হলুদ অনেক বেশি উপকারী ও নিরাপদ। কাঁচা হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এর অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ ও ব্রণের ক্ষত সারাতে অতুলনীয়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে যে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, খাবার ঠিকমতো হজম হয়, এসব কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। আধা কাপ হলুদের রসের সাথে আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের বিষাক্ত টক্সিনও দূর হয়ে যায়।

শুধু হলুদ মুখে লাগালে ত্বক ভীষণ হলদে দেখায় তাই তার সঙ্গে মেশাতে পারেন বেসন বা চন্দন তাহলে হলুদের ভাবটা একটু কমবে।

ত্বকের যত্নে হলুদের উপকারিতা

তেল তেলেভাব কাটিয়ে আর ত্বকের আর্দ্রতা বাড়িয়ে তুলে ত্বক কোমল, উজ্জ্বল রাখতে তাই বেছে নিন হলুদ দিয়ে তৈরি কিছু দুর্দান্ত ফেসপ্যাক।

ব্রণ সারাতে:

হলুদ অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে চমৎকার কাজ করে, তাই ব্রণ দূর করতে বা ক্ষত সারাতে অতুলনীয়। কাঁচা হলুদ বাটা, মুলতানি মাটি ও নিম পাতার রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে গোলাপ জল বা পানি দিয়ে ম্যাসেজ করে ধুয়ে ফেলুন।

এছাড়াও কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগান। কিছুক্ষন পর ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ মিলিয়ে যাবে এবং ইনফেকশন দূর হবে।

ত্বক ফর্সা করতে:

কাঁচা হলুদ দুধের সঙ্গে খেলেই যে আপনার ত্বক ফর্সা হবে তা নয়। ভিতর থেকে হলুদ ত্বকের রঙ ফর্সা করতে সহায়তা করবে। এজন্য লাগবে দুধ ৩ চামচ, লেবুর রস ১ চামচ, এবং কাঁচা হলুদ বাটা ১ চামচ। তারপর একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে নিন।

এটি ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে ফর্সা, কোমল, দাগমুক্ত।

তেলতেলে ভাব দূর করতে:

১ টেবিল চামচ হলুদের রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এর সঙ্গে পুদিনা পেস্ট, ১ চামচ তুলসী পাতা পেস্ট দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগান। তারপর ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে তেলতেলে কমে যাবে।

প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসাবে:

হলুদ ও ময়দা দিয়ে তৈরি স্ক্রাব যেকোন ত্বকের জন্য উপকারী। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল দূর করে। উজ্জ্বল ও কোমল ত্বক পেতে এটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের প্রদাহ কমাতে:

সেনসিটিভ ত্বকের জন্য হলুদের প্যাক একদম পারফেক্ট। এই প্যাকটি প্রদাহ কমিয়ে ত্বক শীতল রাখে। ১ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ও হাফ চামচ পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল এবং ১ চামচ গোলাপজল মিশিয়ে মুখে আলতো করে লাগিয়ে নিন।

তারপর ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে মিশ্রণটিতে কয়েকফোঁটা অলিভ বা নারকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন এতে ত্বকে হলদেটে ভাব আসবে না।

তারুণ্য ধরে রাখতে:

১/৪ চামচ হলুদের গুঁড়ো, ১ চামচ অ্যাভোকাডোর পেস্ট এবং ১ চামচ টকদই নিয়ে একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি ত্বকে ভালো করে লাগান। ১০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যাভকোডোতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে:

রোদে পোড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে হলুদের তৈরি ফেসপ্যাক গুলো দ্রুত কাজ করে। কাঁচা হলুদ বাটা, কাঁচা দুধ অথবা টকদই একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগাল। ১৫ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।

ফাটা দূর করতে:

নারকেল তেলের সাথে হলুদ বাটা মিশিয়ে ফাটা অংশে মেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিলে ত্বক কোমল-মসৃণ হবে এবং ত্বকের ফাটার সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন। এই মিশ্রণটি পা ফাটা দূর করতেও কার্যকরী।

মনে রাখবেন, অনেকেই হলুদ ব্যবহারের পর মুখে ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন, যা একেবারেই ঠিক না। এতে হলুদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই হলুদ ব্যবহারের পর মুখে কিছু লাগাবেন না।