হলুদ চা বাতের লক্ষণ কমায়, হার্টের ক্ষমতা বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম গরম চা না খেলে যেন দিনটাই শুরু হয় না। শরীরকে চাঙ্গা, সতেজ ও ফুরফুরে রাখতে এক কাপ চায়ের জুড়ি মেলা ভার। অফিসে, আড্ডায়, অতিথি আপ্যায়নে চা দারুণ জনপ্রিয়।

চায়ের আলাদা স্বাদ পেতে কখনো এতে আদা, মধু, লেবু, তুলসী এরকম নানা জিনিস মিশিয়ে খেয়েছেন। এবার চায়ের সঙ্গে হলুদ মেশান। এতে স্বাদতো বদলাবেই পাশাপাশি আপনার শরীরের জন্যেও তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

হলুদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অনেক। হলুদ চা বানানো যেমন সহজ, তেমনি সুস্বাদু। তাই এই চা পান করলে এর নানা স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়।

আসুন এবার জেনে নিই, হলুদ চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে:

নিয়মিত হলুদ দিয়ে বানানো চা পান করা শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দেহের ভেতর জমে থাকা অতিরিক্ত মেদকে ঝরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই অল্প সময়ে যদি মেদ ঝরাতে চান, তাহলে রোজের ডায়েটে টার্মারিক টি কে জায়গা করে দিতে ভুলবেন না যেন।

ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে:

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে, হলুদে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ শরীরে যাতে ক্যান্সার সেল জন্ম নিতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখে। এটি ক্যান্সারের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং ছড়িয়ে পড়া হ্রাস করতে পারে।

হার্টের ক্ষমতা বাড়ায়:

নিয়মিত হলুদ দিয়ে বানানো চা খেলে হার্ট ভালো থাকবে। হলুদে থাকা কারকুমিন হার্টের রোগের অন্যতম কারণ এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন প্রক্রিয়াটি ভালো করে হার্টের রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি করছিলেন, তাদের সার্জারির কয়েকদিন আগে এবং পরে প্রতিদিন ৪ গ্রাম কারকুমিন দেওয়া হয়। হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কারকুমিন গ্রুপের ৬৫% হ্রাস পেয়েছিল।

turmeric tea recipe

আলঝাইমার রোগকে দূরে রাখে:

হলুদে পাওয়া কারকুমিন আলঝাইমার রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। কারকুমিন মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশের ক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে বুদ্ধির জোরও বাড়তে থাকে।তাই নিয়মিত হলুদ দিয়ে বানানো চা খাওয়া শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার এতটা বৃদ্ধি পায় যে মস্তিষ্ক সম্পর্কিত কোনও রোগই ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

স্কিনের উন্নতি ঘটায়:

নিয়মিত হলুদ চা খাওয়া শুরু করলে ভিতর থেকেই ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। ত্বক হয়ে ওঠে ভিতর থেকে মশ্রিন ও উজ্জ্বল।

রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে উপস্থিত কারকুমিন রক্তে জমতে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। ২০০৮ সালের একটি স্টাডিতে দেখা গেছে যে, কারকুমিন এলডিএল এবং মোট কোলেস্টেরলের মাত্রার সাথে সম্পর্কিত ছিল।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

হলুদ চা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

health wellness

বাতের লক্ষণ কমায়:

হলুদ চায়ের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বাতজনিত লোকদের মধ্যে প্রদাহ এবং ফোলাভাব কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে হলুদের একটি সক্রিয় যৌগ যা কারকুমিন নামে পরিচিত, অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের ব্যথা কমাতে কার্যকর ছিল।

যেভাবে বানাবেন হলুদ চা
প্রথমে একটি পাত্রে এক কাপের একটু বেশি পরিমাণ পানি নিয়ে গরম করুন। এবার গরম পানিতে অল্প পরিমাণে (এক চিমটে) হলুদ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর এটিকে ১০ মিনিট রেখে দিন। তারপর পানিটুকু ছেঁকে নিন। এবার ছেঁকে নেওয়া পানিতে গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। ব্যস, হলুদ চা তৈরি। তবে এটাকে অনেকে চা না বলে হলুদ পানীয়ও বলে থাকে।

সতর্কতা:

যাদের পিত্তথলি বা পিত্তথলির পাথর প্রদাহ, পাকস্থলীর ঘা, ডায়াবেটিস (হলুদের পরিপূরকগুলি রক্তে শর্করাকে কমিয়ে দিতে পারে) রয়েছে তারা হলুদ চা পানের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। হলুদ চা পানের ফলে পেটের আলসার হতে পারে, রক্ত পাতলা হতে পারে এবং অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ আগে হলুদ চা পান করা উচিত নয়।

যা কিছু খাবেন পরিমিত পরিমাণে খাবেন। অতিরিক্তি কোন কিছুই ভালো নয়। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: