কুমড়ো বড়ি কিভাবে তৈরী করবেন?

কুমড়ো বড়ির প্রধান উপাদান ভাল জাতের মাষকলাই ডাল ও পাঁকা চালকুমড়া। চাল কুমড়ো একটি পুষ্টিকর সবজি এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা ও ফাইবার রয়েছে তাই চাল কুমড়োর উপকারীতা অনেক। যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অনেক শারীরিক সমস্যা দূর করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাষকলাইয়ের ডালে শতকরা ২০ থেকে ২৩ ভাগ আমিষ থাকে। প্রোটিন ও ভিটামিন বি-এর সমৃদ্ধ উৎস হলো এই ডাল। এ ডাল রুচিকর ও বলবর্ধক। মাষকলাই ডাল খেতে সুস্বাদু ও প্রচুর পুষ্টি গুণ সম্পন্ন।

কুমড়ো বড়ি তৈরির উপকরণ:

কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ হলো চালকুমড়ো (Ash gourd) ও ডাল। এই ডালটি মাষকলাইয়ের ডাল, বিউলির ডাল, উরোদের ডাল-বিভিন্ন নামে পরিচিত।

কুমড়ো বড়ি যেভাবে তৈরী করবেন:

মাষকলাই ডাল সংগ্রহ করে প্রথমে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে ওই ডালকে পানিতে ৫/৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে হাত দিয়ে চটের ছালায় ঘষে ডালের খোসা ছড়ানো হয়, তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়।

শুকানো ডাল (শীল-পাটা বা জাতার দ্বারা) পেস্ট এ পরিণত করা হয়। খুব সকালে পাঁকা কুমড়োকে দুভাগ করে কেটে কুরানি দিয়ে চিকন করে নিয়ে কুমড়োর বীচ আলাদা করে নিতে হয়। ওই কলাইয়ের পেস্ট ও কুরানো কুমড়ো একটি পাতিলে মিশিয়ে দীর্ঘ নাড়াচাড়া করতে হয়।

মিশ্রণ ঠিকভাবে হয়েছে কি না তা দেখার মহিলারা মাঝে মাঝে বড়ির আকৃতি করে পানির পাত্রে ছেড়ে দিলে তা যদি ডুবে যায় তবে আরও ফেনাতে (নাড়াচাড়া করতে) হয়, আংশিক ভাসলে বড়ি তৈরি উপযোগী হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

বাড়ির রমণীরা সুতি কাপড়/মশারী কিংবা প্লাস্টিকের জ্বাল দড়ির খাটের উপর বিছিয়ে দিয়ে এর উপর, ওই মিশ্রণ, বড়ি আকৃতি করে লাইন করে দেয়া হয়। ৩/৪ দিন ভাল করে রোদে শুকাতে হয়।

মেঘলা ও ঘন কুয়াশা থাকলে বড়ি গন্ধ ও লাল হয়ে যায়। সে গুলি সহজে সিদ্ধ হয় না। খেতেও ভাল লাগে না। ভালোভাবে শুকিয়ে মুখ আটানো পাত্রে সংরক্ষণ করলে ১ থেকে দেড় বছর পর্যন্ত খাওয়া যায়।

অনেকে বাড়িতে চাল কুমড়ার চারা লাগান কুমড়ো বড়ি দেয়ার জন্যই। উৎপাদিত চাল কুমড়া সংরক্ষণ করে শীতের কোন এক সুবিধাজনক সময়ে বাজার থেকে কলুর ডাল সংগ্রহ করে গ্রামীণ নারীরা লেগে যান কুমড়ো বড়ি দিতে।

আগে কুমড়ো বাড়ি, বাড়ি বড়ি দেয়ার উৎসব হতো। কিন্তু এই যুগে মহিলাদের মধ্যে সেই উৎসাহ দেখা যায় না। আবার চাল কুমড়া প্রাপ্তিও দুঃসাধ্য। তাই বড়ি দেয়ার রেওয়াজও কমে গেছে।

আজকাল বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে কুমড়ো বড়ি। সুস্বাদু বড়িগুলো স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কারিগর বলছেন, সুস্বাদু হওয়ায় কুমড়ো বড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কুমড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব।