ডেউয়া ফল বা ঢেউয়া ওজন কমায়, মুখে রুচি আনে ও ক্ষুধা বৃদ্ধি করে।

গ্রাম-গাঁয়ের পোলাপাইন ডেউয়া পেড়ে খাই, বিকালে খেলতে গিয়ে আনন্দ করে খাই। গাঁয়ের খেলার মাঠের পাশে বাগান।

আর বাগানে বড় বড় ডেউয়া গাছ। দেশি টক মিষ্টি ফল ডেউয়া। এটি ভেষজ গুণ সম্পন্ন।

আগে গ্রামে অনেক ডেউয়া পাওয়া যেতো। বর্তমানে বাগান ধংসের ফলে গাছ কমে যাওয়াই অপ্রচলিত ফল এর তালিকায় এখন ঢেউয়া বা ডেউয়া ফল।

দিন দিন দেশে অপ্রচলিত ফলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে দেশি এসব ফলের পুষ্টি ও ভেষজ গুণ বিদেশী দামি ফলের থেকে কম নয়।

এটি মোরাসিই পরিবারভুক্ত ক্রান্তীয় চিরসবুজ বৃক্ষ।

বন কাঁঠাল বা মানকি জ্যাক সংস্কৃত নাম `লকুচ` ও হিন্দী নাম ডেহুয়া। ইংরেজি নাম- Monkey Jackfruit. ডেউয়ার আদি জন্মস্থান বার্মা। বার্মায় এ ফলের নাম মাইয়াক লুয়াং।

অঞ্চলভেদে এই ফল মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ঢেউয়া, ডেলোমাদার, ডেউয়া ফল, ঢেউফল ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।

ডেউয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Artocarpus lacucha বা Artocarpus lakoocha Roxb । দেখতে এবড়োখেবড়ো এবং কিছুটা কাঁঠালের মতো।

এ ফলের ভেতরে হলুদ রঙের কোষ থাকে। পাকলে ফলটি অতি নরম বা মোলায়েম হয়।

কাঁচা অবস্থায় ফলটি সবুজ। পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। ভেতরের শাঁস লালচে হলুদ। কাঁচা ফল টক টক স্বাদ। রান্না করেও খাওয়া যায়।

কিন্তু পাকলে আবার অন্য স্বাদ। সেটা টকও নয়, আবার মিষ্টিও নয়। বিশাল আকৃতির ডেউয়াগাছ চিরসবুজ বৃক্ষ। পাতাগুলো বড় ও খসখসে, অনেকটা ডুমুরের পাতার মতো।

একেকটি গাছ ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়। এর কাঠ বেশ উন্নত মানের, বড় বড় জিনিসের কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গাছে মার্চের দিকে ফুল আসে এবং আগস্টে ফল পাকে।

ঢেউয়া ফলের উপকারীতা

ডেউয়া ফলটি গোলাকৃতির পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। প্রতিটি ফলের মধ্যে ২০ থেকে ৩০টি বীজ থাকে। বীজের গায়ের ‘মাংসল’ অংশটাই খাওয়া হয়।

ভিটামিন “সি” এর ভান্ডার বলা হয় ডেউয়া ফলকে। এছাড়া ডেউয়া ফলে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। নিচে ডেউয়া বা ঢেউয়া ফলের উপকারীতা দেওয়া হলো –

ওজন নিয়ন্ত্রণে:

ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওজন বেড়ে যাওয়ার লাগাম যদি টেনে ধরতে না পারেন তাহলে একটু বয়স বাড়লেই আপনার শরীরে নানারকম প্রাণঘাতী অসুখ বাসা বাঁধতে পারে।

টক মিষ্টি স্বাদের ডেউয়া ফল ওজন কমাতে খুব কার্যকর। ঠান্ডা পানিতে ডেউয়া ফলের রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:

কাঁঠালের মতো ছোটো ছোটো রোয়া। পাকা ফল আপনি সরাসরি খেতে পারেন।

অত্যধিক মাংস, তেলেভাজা, ফার্স্ট ফুড ইত্যাদি  খাওয়ার বদভ্যাসের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বড় সমস্যা।

মুখে রুচি আনতে:

মুখে রুচি নাই। খাবার খেতে ইচ্ছা করে না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

আমরা জানি, ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ টক ফলগুলি মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে সর্বদা কার্যকর।

মুখের রুচি ফেরাতে খেতে পারেন টক মিষ্টি স্বাদের এই ফল। এতে কয়েক দিনের মধ্যেই মুখে রুচি ফিরে আসবে।

হাড় ও দাঁত ভালো রাখে:

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে।

প্রস্রাব এবং মলত্যাগের মাধ্যমে শরীরকে উদ্দীপিত করে। কারণ এটি শরীরের নিখুঁত পিএইচ ভারসাম্য তৈরি করতে এবং হজমে উন্নতি করতে সহায়তা করে।

বমির ভাব দূর করতে ডেউয়া খান, এর টক মিষ্টি স্বাদ অচিরেই বমি বমি ভাব দূর করবে।

রোগ প্রতিরোধ করে:

ঢেউয়া ভিটামিন সি -তে পরিপূর্ণ, যা শরীরের টিস্যুগুলির নিয়মিত বৃদ্ধি, বিকাশ এবং মেরামতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ভিটামিন “সি” শরীরের অনেক কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। যেমন: কোলাজেন তৈরি করা, ইমিউন সিস্টেম তৈরি করা, আঘাত নিরাময় ইত্যাদি।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়:

ফলটিতে ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। যেহেতু বন কাঁঠাল বা monkey জ্যাক পটাসিয়ামের খুব ভালো উৎস তাই এটি হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

অনেক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, ডেউয়া রক্তাল্পতা রোধ করে এবং সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে সাহায্য করে।

এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতেও সাহায্য করে, কারণ এর পটাসিয়ামের ইলেক্ট্রোলাইটিক ফাংশন আমাদের রক্ত-কোষকে আরও সক্রিয় করে তোলে।

ত্বকের সমস্যা দূর করে:

ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে ডেউয়াগাছের ছালের গুঁড়া অনেক উপকারী এবং এই গুঁড়া ব্রণের দূষিত পুঁজ বের করে দেয়। ডেউয়া খেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে।

অত্যধিক তৃষ্ণা নিবারণে কাজ করে টকজাতীয় এই ফল। পাকা ফল ক্ষুধাবর্ধক হয়। আবার পাকা ডেউয়া পিত্ত ও যকৃতের জন্য উপকারী।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

সূত্রঃ