পর্যাপ্ত পানি পান মাথাব্যথা প্রতিরোধে, ব্রেইনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও ত্বকের জন্য ভালো।

ঘুম থেকে উঠার পর শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে পানির প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি শরীরের ভিতরে প্রতিটি ক্ষেত্রে পানি অতি গুরুত্বপূর্ণ। পানি আমাদের জীবনের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ তাইতো পানির আরেক নাম জীবন।

আমাদের দেহের ৭৫% পানি দিয়ে গঠিত। তাই শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য পানির গুরুত্ব কতটা তা বোঝার বা অস্বীকার কোনও উপায় নেই।

একটি মেশিন চালাতে যেমন তেলের প্রয়োজন পরে ঠিক তেমনি পানি আমাদের দেহ নামক যন্ত্রের তেল হিসাবে কাজ করে।

আমাদের শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার কোন বিকল্প নাই। রক্ত ৯২% পানি থাকে। তাই পানি রক্তের সব দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমানে পানি গ্রহণ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, চোখ, নাক এবং মুখের টিস্যু আর্দ্র করে তোলে, শরীরের অঙ্গ এবং টিস্যু রক্ষা করে।

পানি প্রতিটি কোষে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পৌঁছে দেয়, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে কিডনি এবং লিভার ভালো রাখে।

প্রতিনিয়ত প্রস্রাব এবং ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বের হয়। আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করি তাহলে পানিশূন্যতা অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন দেখা দেবে।

প্রতিনিয়ত ডিহাইড্রেশন থেকে কিডনির সমস্যা, মাথায় ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যতা, রক্তে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ডিহাইড্রেশন রোধ করতে পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির (পুরুষ) প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।

পানি পান করার উপকারিতা

পানি আমাদের শরীরের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝানো যাবে না। নিচে পানি পান করার উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো –

মস্তিষ্কের জন্য ভালো:

গবেষণায় দেখা গেছে যে হালকা ডিহাইড্রেশন শক্তি স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে, মেজাজকে দুর্বল করতে, স্মৃতিশক্তি অর্থাৎ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।

অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের মধ্যেও ডিহাইড্রেশন মেজাজ, স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

ক্রীড়া পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারে:

অ্যাথলিটদের হাইড্রেশন বা ডিহাইড্রেশনের প্রভাবগুলির বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিহাইড্রেশন ক্রীড়া পারফরম্যান্স হ্রাস করতে পারে।

মাসিকের ব্যথা কমায়:

ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় পেটে ব্যথা মেয়েদের একটি কমন বিয়ষ। এই পেটে ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গরম পানি খুবই উপকারী।

ত্বকের যেকোন সমস্যা দূর করে:

আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করেন তাহলে আপনার শরীরের পিএইচ লেভেল ঠিক থাকবে। এতে ব্রণ হ্রাস পাবে, ত্বক দাগ মুক্ত হবে, বয়সের ছাপ কমে গিয়ে ত্বকের যেকোন সমস্যা দূর হয়ে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়।

মাথাব্যথা প্রতিরোধ করতে পারে:

ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা আমাদের দেহের বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে সবথেকে বড় সমস্যা হলো মাথাব্যথা।

৩৯৩ জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪০% ডিহাইড্রেশন এর কারণে মাথা ব্যাথার শিকার।

১০২ জন পুরুষের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন অতিরিক্ত ১.৫ লিটার পানি পান করার ফলে মাথা ব্যথা কমে গেছে।

কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে:

কোষ্ঠকাঠিন্যতার সবথেকে সাধারণ সমস্যা হলো পানি কম খাওয়া। প্রতিদিন আমাদের অন্ত্রের গতিবিধির ঠিক রাখার জন্য অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান প্রয়োজন।

যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করে থাকেন তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন বা অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করুন।

এতে করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক থাকার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হবে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য:

গর্ভবতী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি কম পক্ষে ২-৩ লিটার পান করা খুবই প্রয়োজনীয়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি মাতৃগর্ভের তরল (amniotic fluid) তৈরি করতে, অতিরিক্ত রক্ত উৎপাদন করতে, নতুন টিস্যু তৈরি করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।

তাই গর্ভবতী মায়েদের অন্য লোকেদের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হবে।

কিডনিতে পাথর নিরাময় করতে সহায়তা করে:

কিডনিতে পাথর, যা কিডনিতে হয়। সীমিত প্রমাণ রয়েছে যে, বেশি করে পানি পান করা কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করতে পারে।

বেশি পরিমান তরল গ্রহণ কিডনির মধ্য দিয়ে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এতে পাথরগুলির প্রাথমিক গঠন রোধ করতেও সহায়তা করতে পারে তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য আরো অধ্যয়ন প্রয়োজন।

ওজন হ্রাস সাহায্য করতে পারে:

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। কিছু প্রমাণ থেকে জানা যায় যে বেশি পরিমাণে পানি পান করা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে করে ওজন হ্রাস করতে পারে।

একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, যারা খাবারের আগে ০.৫ লিটার পানি পান করেছিলেন, তাদের ১২ সপ্তাহের মধ্যে ৪৪% এর বেশি ওজন হ্রাস পেয়েছিল।

আমাদের যতটা সম্ভব নিজেদের হাইড্রেট রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আমরা আমাদের শরীরকে বেশির ভাগ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবো।

শরীরে পানির মাত্রা যত বাড়তে থাকে, তত প্রস্রাবের মাত্রাও বেড়ে যায়। ফলে দেহের অন্দরে কোনও ধরনের ক্ষতিকর জীবণু বাসা বাঁধার সুযোগ পায় না। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত ২-৩ লিটার পানি পান করতে ভুলবেন না।

রেফারেন্স: