মাষকলাইয়ের ডাল পেশি গঠনে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো।

ভোজনরসিক কারা? এককথায় উত্তরঃ বাঙালিরা। বাঙালিরা যে ভোজনরসিক তা অনেক আগে থেকেই প্রমাণিত। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে অভ্যস্ত আমরা। নিত্য নতুন সৃষ্টিতে, অভিনব স্বাদের পদ রান্নায়, নতুন নতুন উপকরণে বাঙালি একেবারে সিদ্ধহস্ত। যতই মাছ, মাংস খাওয়া হোক না কেনো ডাল না হলে আমাদের চলে না। থালা ভরে কব্জি ডুবিয়ে ডাল-ভাত খেতে না পারলে অনেকের খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না। বাঙালি সমাজে ডালের কদর হাজার-হাজার বছর ধরে। রুচিবদলে ডালের মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য। স্বাদবর্ধক ফোড়ন দিয়ে রান্না করা এক বাটি মাষকলাইয়ের ডাল খেয়ে বলতেই হবে আহঃ আহঃ কি খেলাম রে!

বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই মাষকলাইয়ের ডাল। এটি বিউলির ডাল বা Urad ডাল নামেও পরিচিত।ইংরেজিতে Split black gram এবং এর আয়ুর্বেদিক নাম ‘মাশা’। শীত এলে মাষকলাইয়ের ডালের কুমড়ো বড়ি চাই-ই চাই। শীতকালে লাউ দিয়ে বা রুই মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল, সাথে ডিম ভাজা। একেবারে জমে যাবে।

প্রোটিন, আয়রণ এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ মাষকলাইয়ের ডাল অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারীতা সরবরাহ করে। তদুপরি, মাষকলাইয়ের ডাল প্রোটিন এবং ভিটামিন “বি” এর অন্যতম উৎস এবং এটি মহিলাদের জন্য উপকারী। এই ডালটি আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামে পূর্ণ ফলে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই ডাল খুবই স্বাস্থ্যকর।

মাষকলাইয়ের ডালের উপকারীতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা :

মাষকলাইয়ের ডাল খুব পুষ্টিকর এবং আয়ুর্বেদিক ঔষুধেও ব্যবহৃত হয়। হজমের ক্ষেত্রে সহায়তা করার ক্ষমতা, শক্তি বাড়ানো, ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং আরও অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারীতা রয়েছে।

হজমের উন্নতি করে :

মাষকলাইয়ের ডাল দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আমাদের হজমের উন্নতি করে। মাষকলাইয়ের ডালের ডায়েট্রি ফাইবার হজমের উন্নতি করে মলের পরিমান বৃদ্ধি করে। আপনি যদি ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাধা বা ফোলা রোগে ভুগছেন তবে এই সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আপনার ডায়েটে মাষকলাইয়ের ডাল অন্তর্ভুক্ত করুন।

হার্টকে সুরক্ষা দেয় :

মাষকলাইয়ের ডাল প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম থাকে যা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রেখে এথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধ করে এটি আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে সুস্থ্য রাখে। পটাশিয়াম আপনার দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে। রক্তচাপ হ্রাস করে এবং হার্টকে সুস্থ্য রাখে।

শক্তি বাড়ায় :

মাষকলাইয়ের ডালতে আয়রণের পরিমাণ বেশি থাকে যা আমাদের দেহে সামগ্রিক শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং সক্রিয় রাখে। আয়রণ একটি খনিজ যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন প্রবাহকে বাড়িয়ে তোলে, এর ফলে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি হ্রাস করে। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে আয়রণের ঘাটতি পূরণ করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে :

ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে মাষকলাইয়ের ডালে যা হাড়ের ঘনত্বকে বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মাষকলাইয়ের ডাল খাওয়া আপনাকে হাড় সম্পর্কিত সমস্যা রোধ করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

নার্ভ সিস্টেমকে শক্তিশালী করে :

আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ করে তোলে মাষকলাইয়ের ডাল। এটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধে নার্ভাল ডেবেলিটি, আংশিক পক্ষাঘাত, ফেসিয়াল পক্ষাঘাত এবং অন্যান্য রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে :

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিয়ন্ত্রিত ডায়েটের মাধ্যমে রক্তে গ্লূকোজের মাত্রা ঠিক রাখা। মাষকলাইয়ের ডাল প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত, এটি রক্তে চিনি এবং গ্লূকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

ত্বক এবং চুলের জন্য ভাল :

মাষকলাইয়ের ডাল খনিজ এবং ভিটামিনে প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ যা ত্বকের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত আনতে সহায়তা করে যা উজ্জ্বল এবং আলোকিত ত্বক দেয়। মাষকলাইয়ের ডাল চুলের জন্যও উপকারী, কারণ এটি খনিজ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা আপনার শুষ্ক এবং ভঙ্গুর চুল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ব্যথা কমাতে :

প্রাচীন কাল থেকেই, ব্যথা এবং প্রদাহজনিত উপশমের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধে মাষকলাইয়ের ডাল বা ব্ল্যাক gram ব্যবহার করা হয়। মাষকলাইয়ের ডাল -এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির উপস্থিতি শরীরে ব্যথা এবং প্রদাহ হ্রাস করতে পরিচিত। সন্ধি ও পেশীগুলিতে ব্যথা হওয়ার জন্য কেবল এটির একটি পেস্ট লাগালে তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি পাওয়া যায়।

মাষকলাই ডাল শুক্রাণু বর্ধক হিসেবে কাজ করে। ‘প্রাকৃতিক উদ্দীপক’ হিসেবে এই ডাল শুক্রাণু সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।

সতর্কতাঃ

যেকোনো খাবার খান না কেনো পরিমাণমতো ও আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। মাষকলাইয়ের-ডাল আমাদের দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। তাই কিডনিতে পাথর, পিত্তথলি বা গাউট রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের উচিত মাঝারি পরিমাণে খাওয়া। আপনি যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে আপনার চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা সর্বদা ভাল।