ডায়াবেটিস রোগীদের যে পানীয়গুলি পান করা উচিত?

ডায়াবেটিস হওয়ার অর্থ খাওয়া বা পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কোন খাবারে কি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট আছে কতটুকু সুগার আছে।

কোন খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক কত এটা জানা খুব প্রয়োজন।

আপনি যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছেন তা কীভাবে আপনার রক্তে প্রভাব ফেলে তা জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবার খাওয়া ছাড়াও কিছু পানীয় আছে যেগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন ডায়াবেটিস রোগীদের জিরো-ক্যালোরি বা কম-ক্যালোরিযুক্ত পানীয় পান করার পরামর্শ দেয়। নিচে এমন কিছু পানীয় দেওয়া হলো যেগুলি পান করতে পারেন-

Diabetes methi

মেথি ভিজানো পানি:

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ও মেথি এই দুটি শব্দ যেনো সমার্থক হয়ে উঠেছে। মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য দুর্দান্ত।

এটি ইনসুলিন নিঃসরণে আরও প্রতিক্রিয়াশীল এবং সংবেদনশীল করে তোলে। এ কারণেই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের দ্বারা বেশি ব্যবহৃত হয়।

মেথির বীজে অ্যামিনো অ্যাসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায় যা দেহে রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১০ গ্রাম মেথির বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা পানি টাইপ-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

Diabetes green tea

গ্রীন টি:

গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রীন টি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।

জাপানি ব্যক্তিদের মধ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা গ্রীন টি পান করেছিলেন তাদের টাইপ-2 ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা ৪২% কমে গেছে।

Diabetes water

পানি:

হাইড্রেশন ডায়াবেটিস আক্রান্ত লোকদের জন্য জল সর্বোত্তম বিকল্প। কারণ হাইড্রেশন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান আপনার শরীরকে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ দূর করতে সহায়তা করতে পারে। শুধু পানি না পান করে এতে মাঝে মাঝে লেবু, পুদিনা, তুলসী পাতা দিতে পারেন।

Diabetes black tea

লাল চা:

গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টি আপনার সাধারণ স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আপনার রক্তচাপ হ্রাস করতে এবং ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে।

গ্রিন টির পাশাপাশি লাল চা ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। বিশেষত মিষ্টিযুক্ত পানীয় থেকে প্রচুর পরিমাণে চিনি গ্রহণ, রক্তে শর্করার মান এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

আমরা যদি আমাদের শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি গ্রহণ করি তবে অতিরিক্ত চিনি ফ্যাট হিসাবে সঞ্চিত হয়।

ব্ল্যাক টি হল একটি দুর্দান্ত অ-মিষ্টিযুক্ত পানীয় যা শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।

একটি টেস্ট-টিউব স্টাডিতে লাল চা এবং এর উপাদানগুলি ইনসুলিনের ক্রিয়াকলাপ ১৫-গুণ বেশি বাড়িয়েছে।

Diabetes Coffee

কফি:

কফি গ্রহণ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাসের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতি কাপ কফি পানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৭% হ্রাস পায়।

২০১২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কফি পান করা টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

গবেষকরা দেখেছেন যে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ পান করে এমন লোকদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম ছিল।

Diabetes milk

কম ফ্যাটযুক্ত দুধ:

প্রতিদিন দুগ্ধজাত পণ্যগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে তবে এসব খাবার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত করে। তাই সর্বদা স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দুধ বেছে নিন।

Diabetes horitoki

হরিতকীর পানি:

রক্তে উচ্চ গ্লুকোজের মাত্রা এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা হ্রাস টাইপ-2 ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।

হরিতকীর উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে।

তবে হরিতকী বা হরিতকী গুড়ি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা উচিত।

Diabetes chirta

চিরতা পানি:

চিরতা ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।

এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস যে কোন ধরণের ডায়াবেটিস রোগে চিরতা ভেজানো পানি খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের সাথে তিতা খাবারের একটা বন্ধুত্ব এমনিতেই হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চিরতার সাথে ডায়াবেটিস রোগীদের বন্ধুত্ব অনেক দিনের।

Diabetes bitter gourd

করলার রস:

করলাতে পলিপেপটাইড থাকে যাকে ইনসুলিন জাতীয় যৌগ বলা হয় এবং এতে ডায়াবেটিস বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উপাদানগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করে।

এটি বিপাক এবং শরীরের দ্বারা গ্রহণ করা চিনির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিনের মাত্রায় অপ্রত্যাশিত স্পাইক এবং ড্রপ প্রতিরোধে সহায়তা করে। করলা হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে।

এটি দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ উৎস এবং গ্লাইসেমিক সূচক কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

করলা অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে।

Diabetes spinach

পালংশাকের রস:

পালংশাকের রসে আলফা-লাইপোইক এসিড নামে পরিচিত একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। যা গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ফ্রী রাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

রেফারেন্স: