প্রোস্টেট ক্যান্সার কী? প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও লক্ষণ।

ক্যান্সার শব্দটিই ভীতিকর! ক্যান্সার অনেক ধরণের হতে পারে যেমন- ওরাল ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার ইত্যাদি। আজ আমরা প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা করবো।

প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের হয়ে থাকে। ইউরোলজি কেয়ার ফাউন্ডেশনের মতে আমেরিকার পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারজনিত সমস্ত মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ প্রোস্টেট ক্যান্সার। প্রায় ৭ জনের মধ্যে ১ জনের এই ক্যান্সার হয়ে থাকে।

প্রোস্টেট ক্যান্সারে মৃত্যু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ঘটে।

প্রোস্টেট ক্যান্সার কী?

পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সারকেই প্রস্টেট ক্যান্সার বলে। শুধুমাত্র পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। প্রোস্টেট পুরুষদের মূত্রাশয়ের নীচে অবস্থিত একটি ছোট গ্রন্থি এবং প্রজনন ব্যবস্থার অংশ। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান।

মুত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মুত্রনালী বের হয়েছে সেটির চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটি বিদ্যমান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়।

পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এর চাইতে কম বয়সেও প্রস্টেট ক্যান্সার হতে পারে, কিন্তু সেটা সচরাচর দেখা যায় না।

বয়স যতো বাড়তে থাকে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততোই বেড়ে যায়। যদি প্রস্টেট গ্রন্থিতে ক্যান্সার হয় তবে এটি সম্ভবত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আপনার দেহের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে যেতে পারে।

প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার কারণ কী?

প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণ ঠিক কী তা এখনও জানা যায়নি। সব ধরণের ক্যান্সারের মতোই, প্রোস্টেট ক্যান্সারের সঠিক কারণ নির্ধারণ করা সহজ নয়।

অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক্স এবং কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক বা রেডিয়েশনের মতো পরিবেশগত টক্সিনের সংস্পর্শ সহ একাধিক কারণ জড়িত থাকতে পারে।

এছাড়া গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা প্রোস্টেট ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধূমপায়ীদের প্রোস্টেট ক্যানসার অধূমপায়ীদের তুলনায় বেশি। এমনকি উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েটের কারণেও হতে পারে।

প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ডায়েট একটি বড় ভূমিকা পালন করে। লাল মাংস এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার সমৃদ্ধ একটি খাদ্যও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হতে পারে, যদিও পর্যাপ্ত পরিমাণে গবেষণা নেই।

২০১০ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় প্রস্টেট ক্যান্সারের সাথে মাংস এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারের পারস্পরিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

লক্ষণগুলি কী কী?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোনও লক্ষণ দেখা দেয় না। প্রোস্টেট ক্যানসার অনেক ধীরে বৃদ্ধি পায়, তাই কয়েক বছর পর্যন্ত সব লক্ষণ অনুভব না–ও হতে পারে।

তবে প্রোস্টেট বড় হয়ে যখন মূত্রনালিকে আক্রান্ত করে তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। নিচে প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণগুলি দেওয়া হলো –

  • ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায়।
  • প্রস্রাবের প্রচন্ড বেগ পাওয়া, এমনকি মাঝেমাঝে বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্রস্রাব করে ফেলা।
  • কষ্ট হয় প্রস্রাব করতে।
  • প্রচুর সময় লাগে প্রস্রাব করতে।
  • প্রস্রাবে বেগ থাকে না।
  • প্রস্রাব করার পরো মুত্রথলিতে প্রস্রাব রয়েছে এমন অনুভব হওয়া।

এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ মাঝে মাঝে দেখা যায়:

  • প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা হওয়া।
  • বীর্যপাতের সময় যন্ত্রণা হওয়া।
  • অন্ডকোষে ব্যাথা।

এই লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর এক বা একাধিকটি যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে যাতে করে কি কারণে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেটা নির্ধারন করা যায়।

প্রোস্টেট ক্যান্সার শুরুতে ধরা পড়লে নির্মূল করা যায়। দেরি হলে রোগ সম্পূর্ণ সারানো না গেলেও রোগ বেড়ে যাওয়া আটকানো যায়।

র‍্যাডিক্যাল প্রোস্টেকটমি অপারেশন হলো এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। এছাড়া প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, কেমোথেরাপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

রেফারেন্স: