সন্তানকে যেসব কথা বলা উচিত নয়।

সন্তানের আচার-আচরণের ধরণ অনেকাংশেই নির্ভর করে বাবা-মায়ের আচরণের ওপর। শৈশবে তাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়, ঠিক তেমন মানসিকতা নিয়েই সে বড়ো হয়ে ওঠে। আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান পালনের দায়িত্ব মায়েদেরই পালন করতে হয়। তবে বাবার আচরণও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে।

কিছু আচরণ বংশগত কারণেই পেয়ে থাকে শিশুরা। শিশুদের জন্য সঠিক আচরণ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা যেন যুদ্ধের মতো মনে হয়। কিন্তু আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং সঠিকভাবে তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে।

শাসন করা তারই সাজে, যে আদর করে। এই বাক্যটি মনে রেখে বাচ্চাদের শাসন করতে হবে। কিন্তু এই শাসন করতে গিয়ে মা-বাবা বা পরিবারের গুরুজনরা এমন সব কথা বা বাক্য ব্যবহার করেন, যা শিশুদের মনে ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আপাতদৃষ্টিতে বাক্যগুলো সহজ-সরল হলেও আপনার ব্যবহৃত এই বাক্যগুলোই অন্য শিশুদের থেকে পিছিয়ে দিবে আপনার শিশুকে।

এবার, জেনে নেওয়া যাক সন্তানকে যেসব কথা কখনোই বলা উচিত নয় সেই সম্পর্কে-

আমাকে একা থাকতে দাও:

প্রত্যেকেরই অন্তত কিছু সময় একা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। মা বাবা হওয়ার মানে সারাদিন বাচ্চার পেছনে সময় ব্যয় করা নয়। তবে শিশুকে কখনোই সরাসরি এটা বলা যাবে না যে আমাকে একা থাকতে দাও। এতে বাচ্চারা কষ্ট করবে এবং মন খারাপ করবে।

সবসময় বড়দের কথা শুনতে হয়:

সবসময় বড়দের কথা শুনতে হয়, প্রায়ই বাচ্চাদের এমন কথা বলা হয়। এ ধরণের কথা বলা উচিত নয়। এক্ষেত্রে তারা না বুঝেই অপরিচিত কোনো মানুষের কথা মেনে নিতে পারে।

এভাবে নয়, এভাবে করো:

বাচ্চারা নতুন কিছু করতে গেলে তারা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা ভুল করবে শিখবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি শুরু থেকেই এভাবে নয়, এভাবে করো বলতে থাকেন। তাহলে তারা কোন কিছু করতে মনোবল পাবে না।

যা বলার বাসায় গিয়ে বলব:

কথাটি শুনে বাচ্চারা ভাবে বাসায় গিয়ে মা-বাবা আমাকে বকা ঝকা করবে। তারা আমাকে ভালোবাসে না। আমি বাসায় যেতে চাই না। যা বলার বাসায় গিয়ে বলব এই কথাটি শুনার পর বাচ্চারা বাসাটাকে শাস্তির জায়গা হিসেবে মনে করতে থাকে।

দিনে দিনে বোকা হচ্ছ:

আপনার মন মতো কিছু করতে পারে নাই, কিন্তু তাই বলে বাচ্চাকে দিনে দিনে বোকা হচ্ছ এটা বলা যাবে না। এ কথা শুনে শিশু বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বে। কারণ এটা তার জন্য একটা নতুন পরিস্থিতি। বকাঝকা না করে তাকে পরিস্থিতি বুঝতে সহায়তা করুন।

কার কাছে শিখেছ:

এই কথাটি বলার কারণে আপনার বাচ্চা শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো শিখবে।

কান্নার মতো কিছু হয়নি:

শিশুরা অনেক সময়ই মন খারাপ বা তুচ্ছ কারণে কান্নাকাটি করে। যদি এমন হয় তার কান্নাকাটির কোনো কারণ নেই তারপরও তার কান্না থামাতে জোর করা যাবে না, জোর করলে শিশুরা বিব্রত হয়। কান্নাকাটির সময় শিশুকে ধমক না দিয়ে বরং সহানুভূতি দেখান।

অন্যের সঙ্গে তুলনা:

বাচ্চাকে মনের ভুলেও কখনও অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। বেশির ভাগ বাবা মা এই ভুলটা করে থাকেন। তুমি ওর মতো হতে পারোনা, ও কতো ভালো, দেখো, ও কতো নম্বর পেয়েছে আর তুমি কতো পেয়েছো, ওর আচরণ কতো ভালো আর তোমার আচরণ মোটেও ভালো না ইত্যাদি। এসব তুলনামূলক বাক্য সন্তানের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি করে।

বড় ছেলেরা কাঁদে নাকি:

কিশোর বয়সে পা দেওয়ার আগের মা বাবা শিশুদের প্রায় একটা কথা বলে থাকেন বড় ছেলেরা কাঁদে নাকি? বিষয়টি কিন্তু কঠোর পন্থায় তাদের আবেগ দমনের নির্দেশনা। এভাবে বললে তাদের মনে হতে পারে, বড় হয়ে গেলে আবেগের কোনো মূল্য নেই, তারা আবেগ-অনূভুতি শুন্য।

কর্তৃত্ব খাটানো:

আমরা অনেক সময় সন্তানের ওপর অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠি। তার সমস্ত কিছুর সিদ্ধান্ত বাবা-মা নিয়ে থাকেন। তার মতামতের কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। তাকে বাধ্য করা হয় আমাদের সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিতে। আমরা ভাবি, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আসলে এই ধারণাটি ভুল। কোনো বিষয়ে শিশুর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

তুমি খুব স্মার্ট:

“তুমি খুব স্মার্ট”- এ জাতীয় প্রশংসা শিশুকে কোনো কিছু করতে উৎসাহিত করে না বরং নতুন কিছু শেখা থেকে বিরত রাখে। কারণ তারা মনে করে আমি খুব স্মার্ট এবং সবই জানি।

আমি যখন তোমার বয়স ছিলাম তখন অনেককিছু করেছি:

একেক শিশুর বিকাশ একেকভাবে ঘটে। কারণ প্রত্যেক মানুষই আলাদা। আপনি নিজের ছেলেবেলার সঙ্গে যখন তাদের তুলনা করবেন, তখন তা আপনাকে কেবল হতাশই করবে। আপনার শিশুর প্রচেষ্টার প্রশংসা করুন। তাদের নিজের কাজগুলো করতে উৎসাহী করুন। তবে কখনোই নিজের ছেলেবেলার সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না।

  • 60 Things You Should Never, Ever Say to Your Kids