খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।

দিন দিন আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে। প্রতিদিনকার কাজের চাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা সব কিছুই আমাদের চুলের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। মানুষের সৌন্দর্যের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো চুল। বর্তমানে চুল সুন্দর রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেক মানুষ চুলকে তাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে। সুন্দর চুল সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে।

চুলের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে খুশকি। প্রকৃতিতে শীতের হাওয়া লেগে গেছে। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেছে খুশকির প্রকোপ। শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে তাই এই সময় ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়।

শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়া পাশাপাশি অতিরিক্ত দূষণের ফলে মোটামুটি সারা বছর খুশকির সমস্যা লেগেই থাকে। চুল ঝরে পড়া, রুক্ষ চুলের জন্য দায়ী এই খুশকি।

খুশকি কেন হয়?

মাথার ত্বকের শুষ্কভাবের কারণে খুশকি হয়ে থাকে। অনেক কারণেই খুশকি (dandruff) হতে পারে। যেমন ঠিক মতো চুল পরিষ্কার না করলে, পানি কম খাওয়ার অভ্যাস, খাদ্যভাসের কারণে, ভিটামিন “বি” ও জিংক গ্রহণ না করা, ভেজা চুল বেশিক্ষণ বেঁধে রাখলে, মানসিক দুশ্চিন্তা ইত্যাদি কারণে খুশকি হতে পারে।

শুষ্ক ত্বকও খুশকির একটা সাধারণ কারণ। এছাড়া আরও একটি কারণ হলো এক ধরনের ছত্রাক যার নাম মেলাসেজিয়া। সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার তালুতেই এই মেলাসেজিয়া ছত্রাক থাকে। মেলাসেজিয়া ত্বকে নতুন কোষ জন্মাতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত ত্বকের কোষগুলি মারা যায় এবং ঝরে পড়ে। কিন্তু পুরনো কোষগুলো যখন ঠিকঠাক মতো ঝরে যেতে পারে না তখন সেগুলো জমে যায় এবং ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়ে তৈরি হয় খুশকি।

খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

এই খুকশি জন্য আমরা কত কিছু যে করি। খুকশি দূর করার শ্যাম্পু ব্যবহার করি, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকি ইত্যাদি। কিন্তু আমরা ভুলে যায় এগুলো ছাড়া আরো একটি উপায় আছে সেটা হলো প্রাকৃতিক উপায়। নিচে প্রাকৃতিক উপায়গুলো দেওয়া হলো-

লেবুর রস:

খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক উপকরণের কথা বলতে গেলে প্রথমে আসবে লেবু। ২ টেবিল-চামচ লেবুর রস অল্প পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ২-৫ মিনিট ম্যাসাজ করার পর চুল ধুয়ে নিন। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে দুবার এভাবে চুলে লেবু ব্যবহার করা যাবে। টাটকা লেবুর রসে অ্যাসিড রয়েছে যা ছত্রাককে ভেঙে ফেলতে সহায়তা করে যা খুশকি তৈরি করতে পারে।

টকদই:

এক কাপ টক দই নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার ফেটানো টক দই চুলে ভালো করে লাগান। এরপর ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন গোসল করার আগে এটি করতে পারেন। টক দই চুল উজ্জল এবং খুশকি মুক্ত করবে।

এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু এটি প্রোবটিক্স এর একটি ভালো উৎস তাই এটি খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরের মধ্য থেকে যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সহায়তা করে।

নারিকেল তেল:

নারকেল তেল প্রায়শই খুশকির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নারকেল তেল উষ্ণ গরম করে মাথার তালুতে ভালো করে লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা মাসাজ করে রেখে দিন। পরের দিন গোসলের সময় শ্যাম্পু করুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের শুস্কতা দূর করে চুল মোলায়েম হবে। সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

মেথি:

খুশকি দূর করতে মেথি খুবই কার্যকর। মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে ভালো করে বেটে নিন। ছেঁকে নেয়া পানি ফেলে দেবেন না। এবার বেটে নেয়া মেথি চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১ ঘন্টা রেখে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর মেথি ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে আরও একবার চুল ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে দুবার করুন ভালো ফলাফল পাবেন।

নিমপাতা:

এক চা চামচ আমলকির রস, এক চা চামচ নিমপাতার রস, এক চা চামচ লেবুর রস, প্রয়োজন অনুযায়ী টকদই মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন চুলে লাগাতে হবে। লাগানোর পর আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন তারপর চুলে শ্যাম্পু করুন। এতে চুল খুশকি মুক্ত হবে। পাশাপাশি নিমতেল ব্যাবহার করতে পারেন।

আমলকী:

আমলকী চুল পরিচর্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাচীন যুগ থেকেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে। ২-৩টি আমলকী বেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্টর সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুল ঘন ও কালো করে। সপ্তাহে ২ বার লাগালেই খুশকি দূর হয়ে যাবে।

অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরা চুলের খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুল মোলায়েম করে। শ্যাম্পু করার আগে অ্যালোভেরা জেল, শসা রস ও লেবুর রস দিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। অ্যালোভেরাতে থাকা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য খুশকি দূর করতে পারে। এতে মাথার ত্বক ঠাণ্ডা থাকবে, চুলকানি দূর হবে এবং খুশকির সমস্যার সমাধান হবে।

কর্পূর ও নারকেল তেল:

নারকেল তেল ও কর্পূ‌রের তেল নানা ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। আধা কাপ নারকেল তেলের মধ্যে ১ চা-চামচ কর্পূ‌রের তেল নিয়ে একটা বোতল রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বোতলের মুখ ভালো করে লাগানো থাকে যাতে ভেতরে বাতাস না ঢোকে। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বোতল থেকে কিছুটা কর্পূর মেশানো তেল নিয়ে মাথায় দিন। সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

ভিনেগার:

খুশকির প্রাকৃতিক সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিনিগার। আধা কাপ ভিনেগার দুই কাপ পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার ভিনেগার মেশান পানি ভালো করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

এছাড়া ২ চামচ ভিনেগার ১ চামচ নারকেল তেল এবং ৪ চামচ পানি মিশিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। ভিনেগার এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।