চুলের যত্নে মেথি: মেথি চুল পড়া, খুশকি কমায় এবং নতুন চুল গজাতে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সৃষ্টির শুরু থেকেই চুল নিয়ে মানুষের চিন্তাভাবনা ও গবেষণা চলে আসছে। অনেক সময় মানুষ এর পেছনে নষ্ট করেছে, কি করে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।  চুলের সুন্দর আকার দেওয়া যায়- এসব ভাবনা কিন্তু সবসময়ই ছিল।

চুল আভিজাত্য, সামাজিক অবস্থান ও সৌখিনতার প্রতীক। বাঙালী রমনীর কেশ সেতো এক মহাকাব্য। মেঘবরণ কেশ। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা। জীবনানন্দের কাব্যে মেঘবৌয়ের খোঁপা কিংবা কবিগুরুর নিদ্রিতার কেশরাশি—বাংলা কাব্যসাহিত্যে চুলের রূপবর্ণনার ধারা চলে এসেছে এ রকম কতভাবে তা বলা মুশকিল।

এর ওর কাছে জিজ্ঞাসা করছেন, ভাই কি করা যায়। চুলতো পরে যাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্রাউস করছেন সমাধানের আশায়। সমাধানও হয়তো মিলে  গেলো। কিন্তু ওতো সময় নষ্ট না করে, খরচ না করে নিজের রান্নাঘরের দিকে একটু নজর দিলে তো সমস্যা সমাধান।

ওজন কমানো, ডায়াবেটিস কমানো থেকে চুল পড়া। আপনার মসলার মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেনও। সেটি আর কিছুই নয়। সেটি হলো মেথি বা মেথি বীজ। হলুদাভ বাদামি বর্ণের বীজটি Fenugreek seeds নামে পরিচিত।

মেথির বীজে এমন যৌগ থাকে যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। সুতরাং, ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত থাকুক বা চুলে লাগানো হোক না কেন, এটি অত্যন্ত কার্যকর। নারকেল তেলে সারারাত ভিজানো সিদ্ধ মেথি বীজের সাথে নিয়মিত আপনার মাথায় মাসাজ করা চুল পড়ার জন্য একটি দুর্দান্ত সমাধান হতে পারে। মেথি খুশকির জন্যও একটি দুর্দান্ত প্রতিকার।

সঠিকভাবে চুলের প্রকার ও সমস্যা চিহ্নিত করে উপযুক্ত সমাধান বেছে নিতে পারলে এই সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব। চলুন তবে চুলের যত্নে মেথির ব্যবহারগুলো জেনে নেই।

চুল পড়া দূর করতে:

চুল পড়া সত্যিই একটি বিব্রতকর সমস্যা। বহুবিধ কারণেই চুল পড়তে পারে। তবে দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত চুল পড়াকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে বেশী করে চুল পড়া শুরু করলে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এর জন্য চিন্তার ভারটা মেথির উপর ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়। চুল পড়া সমস্যায় এবং চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী।

৫০ গ্রাম মেথি ২০০-৩০০ মিলি পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানিটুকু ছেঁকে নিন। এ থেকে এক গ্লাস পানি খালি পেটে পান করুন।

মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড রয়েছে যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে মজবুত করে। মেথি ভেজানো জল প্রতিদিন পান করলে পেটের যাবতীয় পীড়াজনিত ও পরিপাকজনিত সমস্যা দূর হয়। দেহের অতিরিক্ত ওজন ও কমে। বাকী পানিটুকু একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে নিন। এবার মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এই পানি স্প্রে করুন। এবার আঙুলের ডগার সাহায্যে সারা মাথা ৭-১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলুন। চাইলে সারারাত এটা মাথায় রাখা যেতে পারে। চুল পড়া কমাতে এবং চুলের ভিত্তিকে মজবুত করতে এর জুড়ি নেই।

চুলের খুশকি দূর করতে:

খুশকি হল শুকনো মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলির ফলে চুলের একটি সাধারণ সমস্যা। এই ঝামেলা মোকাবেলা করার জন্য প্রাচীন কাল থেকেই মেথি ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথি মাথার পুষ্টি যোগায়। এই বীজগুলি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এগুলি সকালে পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন। আরও ভাল ফলাফলের জন্য আপনি একইভাবে পেস্টে দই যোগ করতে পারেন। আপনার পেস্ট প্রস্তুত হওয়ার পরে এটি আপনার মাথার ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং আপনার চুলের গোড়াটি ঘষুন। ৩০ মিনিট পরে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন এবং খুশকিকে বিদায় জানান।

কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে মেথির নির্যাসযুক্ত টপিকাল অ্যাপ্লিকেশনটি মাথার ত্বকের জ্বালা এবং খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। তবে আরও গবেষণা দরকার।

চুলের অকালপক্কতা রোধে:

চুল পাকা নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভোগেন। বিশেষ করে অল্প বয়সেই যাদের চুল পাকা শুরু হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপুষ্টি ও অযত্নের জন্যও চুলে অকালপক্কতা দেখা দিতে পারে। শরীরে আয়োডিন ও ভিটামিনের অভাবে চুলের যে স্তরে রঙের কোষ তৈরী হয়, সেই স্তরের রঞ্জক কোষ তৈরী বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল সাদা হতে শুরু করে। অনেক সময় তীব্র মানসিক আঘাতে, জটিল অসুখেও কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। নারিকেল তেলে কমপক্ষে ২দিন মেথি ডুবিয়ে রাখুন।

এবার এই তেল কুসুম গরম করে মাথায় ত্বকে ম্যাসাজ করুন। চুলের ফলিকলের যেকোন সমস্যা সমাধানে এই তেল যাদুর মতো কাজ করে। এটি চুলে টনিকের মতো কাজ করে চুলের হারানো রঙ ফিরিয়ে আনে। চুলকে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুষ্টি যুগিয়ে চুলের অকালপক্কতারোধে এটি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সমানভাবে কাজ করে।

 চুলের বৃদ্ধি এবং নতুন চুল গজাতে:

মেথির বীজগুলি আয়রন এবং প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস – চুলের বৃদ্ধির জন্য দুটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

এগুলিতে ফ্লেভোনয়েডস এবং স্যাপোনিন সহ উদ্ভিদ যৌগগুলি রয়েছে। এই যৌগগুলি তাদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টিফাঙ্গাল এফেক্টসএর কারণে চুলের বিকাশকে প্ররোচিত করে।

কয়েকটি ছোট ছোট মানবিক ও প্রাণীর সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে, মেথির বীজ চুলের বৃদ্ধিতে কার্যকর হতে পারে, যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন।

ময়েশ্চারাইজার ও কন্ডিশনার হিসেবে:

৩ টেবিল চামচ মেথি ১ কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে সকালে পানিটুকু ছেঁকে নিন।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন ও ব্যবহার করবেন পরিমাণমত করবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন বা চিকিৎসকের দেওয়া কোনো ওষুধ খাচ্ছেন তাহলে খাওয়ার আগে বা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন।

সূত্রঃ

healthline, ndtv