শঙ্খের গুঁড়া ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে, ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে ও ব্রণের দাগ দূর করতে কার্যকরী।

সামান্য যত্নে চেহারা হয়ে উঠতে পারে সতেজ, পরিপাটি ও আকর্ষণীয়। আর এই পরিপাটি করে তোলার জন্য কত কিছু দিয়েই না রূপের চর্চা করতে হয়।

শঙ্খ কাটার সময় হাত দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শঙ্খের গুঁড়া। সেই সাদা ধবধবে চক পাউডারের মতো দেখতে গুঁড়াই হতে পারে রূপচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ।

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় রূপচর্চার জন্য শঙ্খ প্রায় সব ত্বকেই দারুণভাবে মানিয়ে যায়।

শঙ্খতে রয়েছে জিংক অক্সাইড যেটি রোদ থেকে বাঁচায়। এছাড়া কালচে ছোপের হাত থেকে বাঁচাতেও এটি দারুণ কার্যকর।

কিন্তু সব ধরনের ত্বকের জন্য এটি ভালো হলেও ধরন অনুযায়ী প্যাক তৈরি ও প্রয়োগে ভিন্নতা থাকবে।

রূপচর্চার সামগ্রী হলেও যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল তাঁদের কিছুটা সাবধান থাকা ভালো শঙ্খ গুঁড়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

পাউডার জাতীয় হলেও যেহেতু এই গুঁড়া শক্ত শামুকের খোল থেকে তৈরি তাই ত্বকে ব্যবহারের সময় জোরে ঘষাঘষি না করাই ভালো।

শঙ্খ গুঁড়া (conch powder) বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করে প্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগালে তা ত্বকের জন্য দারুণ উপকারের।

বাতাস ঢুকবে না এমন কৌটায় শঙ্খ গুঁড়া সংরক্ষণ করে ফ্রিজে রেখে দুই থেকে তিন দিন অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। এতে এর গুনাগত মানও অটুট থাকবে।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, রূপচর্চায় শঙ্খের গুঁড়ার উপকারিতা-

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে:

ব্রণ ও ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা থাকলে তাঁরা ২ টেবিল চামচ তুলসী পাতার রস, ১ টেবিল চামচ শঙ্খের গুঁড়া মিশিয়ে নিন ভালোভাবে।

এবার সাথে মিশিয়ে নিন সামান্য লাল চিনি। এবার এই মিশ্রণটি মুখে লাগাতে হবে।

৫ মিনিট পর একটু ঘষে তুলে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকে সপ্তাহে ১ দিন ও ব্রণযুক্ত ত্বকে সপ্তাহে প্রতিদিন প্যাকটি লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

রোদ থেকে বাঁচাতে:

সামান্য পরিমাণ শঙ্খের গুঁড়ো ও মুলতানি মাটির গুঁড়া ভালভাবে মিশিয়ে নিন। বাইরে যাওয়ার সময় নিয়মিত পাউডারের মতো করে ব্যবহার করুন।

রোদে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে এটি ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে:

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে শঙ্খের গুঁড়া দারুণ কার্যকরী।

তাই ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে ও রিঙ্কেল দূর করতে প্রতিদিন গোসলের সময় শঙ্খ গুঁড়া আর সমপরিমাণ মুলতানি মাটি পানিতে মিশিয়ে মুখে আর ঘাড়ে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।

ব্রণ কমাতে:

আপনি বাড়িতে যে বিভিন্ন প্যাক ব্যবহার করেন তার সাথে এক চিমটি করে শঙ্খ গুঁড়া যোগ করে তারপর ব্যবহার করুন।

এতে ত্বকের কালো ভাব দূর হওয়ার সাথে সাথে ব্রণের উপদ্রপও কমবে। শঙ্খ গুঁড়া ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে:

শঙ্খ গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য পরিমান গোলাপ জল মিশিয়ে চোখের নিচে সাবধানে লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার আগে ধুয়ে ফেলুন।

এতে আপনার চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর হয়ে যাবে।

স্ক্রাবার হিসাবে:

মিহি করে বাটা আধা চামচ চালের গুঁড়ার সাথে সমপরিমাণ শঙ্খ গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।

ভালো স্ক্রাবের সাথে সাথে এটা আপনার সানট্যান দূর করে আপনাকে দেবে ফর্সা ত্বক।

ত্বকে শ্বেতি রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে:

পরিষ্কার শঙ্খের ভেতরে রাখা পানি দিয়ে প্রতিদিন সকালে আপনার ত্বক ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে বিভিন্ন চর্মরোগ ও আল্যারজি সারাতে সাহায্য করে এটি।

এছাড়া নিয়মিত একমাস ধরে এভাবে মুখ ধুলে ত্বকের শ্বেতি রোগের প্রাদুর্ভাব পর্যন্ত কমে যায়।

ব্রণের দাগ দূর করতে:

সানট্যান, ব্রণের দাগ ও শ্যামলা ত্বক থেকে মুক্তি পেতে আধা চামচ মুলতানি মাটি, আধা চামচ শঙ্খ গুঁড়া, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া আর আধা চা চামচ লেবুর রস।

একসাথে ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

কখনো কখনো শঙ্খগুঁড়া ব্যবহারের ফলে জ্বালাপোড়া, ফুসকুড়ি হতে পারে।

তাই কোনো প্রকারের সমস্যা হলে শঙ্খ গুঁড়া ব্যবহার বন্ধ করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।