ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতা।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ত্বক পরিচর্যায় কিংবা রোগ নিরাময়ে একটি অন্যতম উপাদান হলো নিম পাতা। নিম একটি ওষধিগুণ সম্পন্ন, চির হরিত, বহু বর্ষজীবি বৃক্ষ। নিম গাছের ডাল, পাতা সবই খুব উপকারী। নিমের আছে ১৩০টি ঔষধি গুণ।

ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে নিম খুবই কার্যকরী। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও নিমপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

নিম পাতার রস ত্বকের রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। ত্বকচুলের যত্নে ভেষজ নিম হতে পারে চমৎকার একটি উপাদান। এটি ত্বকের ব্ল্যাকহেডস ও রোদে পোড়া দাগ দূর করে। এছাড়া ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর করতেও নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন নিমপাতার ফেসপ্যাক।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ত্বক ও চুলের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা ও কিভাবে ব্যবহার করবেন সেই সম্পর্কে-

ব্রণ দূর করে:

নিম পাতা অ্যান্টিফাংগাল ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি মেলা ভার। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তাদের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল ব্রণব্রণ নিরাময়ে নিমপাতা খুবই কার্যকরী। ব্রণের সংক্রমণ হলেই নিম পাতা থেঁতো করে ব্রণের ওপর লাগালে ভালো ফলাফল নিশ্চিত।

এছাড়া ৭-৮ টা নিম পাতা বাটা, ২ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, পরিমাণ মতো দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিটের মতো। ব্রণ হওয়া জায়গায় একটু বেশী করে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের কালো দাগ দূর করে:

সব বাড়িতেই তুলসী গাছ থাকে। এর অ্যান্টিসেপটিক গুণ যখন নিমপাতার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মেশে তখন যে কোনো ত্বকের জন্য তা খুবই উপকারী হয়ে ওঠে। একমুঠো নিম ও তুলসী পাতা, ১ চামচ মধু ১ আর তেলতেলে ত্বক হলে ১ চামচ চন্দন পাউডার বা মুলতানি মাটি মিশিয়ে ভালো করে বেটে নিন।

তারপর আপনার মুখে আর গলায় এই প্যাক লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন। ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:

নিমপাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে খুবই কার্যকরী। আর তার সঙ্গে যদি যোগ করা হয় বেসন তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে, বেসন ৪ চামচ, ৫-৬ টা নিমপাতার পেস্ট একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন একটা ইন্সট্যান্ট গ্লো পাচ্ছেন।

মাথার চুল পড়া কমায়:

নিমে আছে প্রদাহ ও অ্যান্টিফাংগাল বিরোধী উপাদান যা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। নিমপাতা বেটে প্রতি সপ্তাহে একদিন চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর তা ধুয়ে ফেলুন এভাবে নিয়মিত লাগালে ধীরে ধীরে মাথার চুল পড়া কমে আসবে। তবে আপনি নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।

খুশকি দূর করে:

চুল নষ্ট হওয়ার এবং অতিরিক্ত চুল পড়ার অন্যতম বড় কারণ হল খুশকির সমস্যা। এই সমস্যাটি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে পারলে ও দ্রুত তাড়াতে পারলে চুলের বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান।

নিমপাতা বাটার সাথে সমপরিমাণ টকদই মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটি মাথার ত্বকসহ চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ২০-২৫ মিনিট রেখে এরপর ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে একবার এই নিয়মে নিম পাতা ব্যবহারে উপকার পাওয়া যাবে।

চুলের বৃদ্ধিতে:

চুলজনিত অন্য কোন সমস্যা না থাকলেও চুল সহজে বৃদ্ধি পেতে চায় না। এক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চুলের যত্নে সঠিক ও প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারের ভূমিকা অনেক খানি। চুলের ত্বকের মরা চামড়া, বায়ু দূষণ, রোদের ক্ষতিকর আলোর প্রভাবেও চুলের বৃদ্ধি কমে যায়। সেক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার অনন্য উপকারিতা এনে দেবে।

এটি ব্যবহারের জন্য আধা কাপ নারিকেল তেল, এক চামচ মেথি, এক চামচ অলিভ অয়েল এবং ১৫-২০টি নিমপাতা একসাথে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তৈরিকৃত তেলটি রাতে চুলে ম্যাসাজ করে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই বার এই তেল ব্যবহারে ২ মাসের মাঝে লক্ষণীয় পরিবর্তন পাওয়া যাবে।