মধু দিয়ে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা।

মধু এবং লেবু দুটি শক্তিশালী এবং প্রাকৃতিক উপাদান। মধু প্রক্রিয়াজাত চিনির প্রাকৃতিক বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর কিছু থেরাপিউটিক ব্যবহার রয়েছে যেমন ত্বকের ক্ষত এবং পোড়া এর চিকিৎসা করার ক্ষমতা রয়েছে।

লেবু সাইট্রাস ফল। লেবুর বেশিরভাগ স্বাস্থ্য উপকারিতা এর উচ্চ মাত্রার ভিটামিন “সি” এবং অন্যান্য উপকারী উদ্ভিদ যৌগগুলি থেকে আসে।

ঘরোয়া টোটকা হিসেবে অনেকেই মধু এবং লেবু দিয়ে এক কাপ গরম পানিতে খেয়ে নিজের সকাল শুরু করেন। মধু এবং লেবু দুটি উপাদানের আলাদা আলাদা স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস রয়েছে যা প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটির গ্লাইসেমিক সূচক কম এবং তাই ক্যালোরিও খুবই কম। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন “সি”, তাই এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। লেবুতে থাকা পেক্টিনের ফাইবার চিনি এবং শর্করার পাচন কমিয়ে দেয় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে।

মধু স্বাস্থ্য উপকারিতা

প্রকৃতির অলংকার ছোট্ট পরিশ্রমী মৌমাছি নিজের মুখ দিয়ে ফুলের বুক চিরে রস সংগ্রহ করে এনে আপন মুখের যাদু মিশিয়ে তিলে তিলে মৌচাকে মধু তৈরি করে। অতি মিষ্টি মধু এইজন্য মনে হয় অন্য সকল প্রকার মিষ্টি থেকে আলাদা।

মধু বিশ্বের প্রাচীনতম খাবারগুলির মধ্যে একটি। এটি হাজার হাজার বছর ধরে খাদ্য এবং ওষুধ উভয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মধু কয়েকটি বিজ্ঞান-সমর্থিত স্বাস্থ্য সুবিধাদেওয়া হলো-

ক্ষত নিরাময়ে
মধুর প্রাচীন কাল থেকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্টের কারণে ক্ষত এবং পোড়া নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধু এবং ক্ষতের যত্ন নিয়ে ২৬ টি গবেষণার পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে, ক্ষত নিরাময়ে মধু সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিল। একটি গবেষণায়, মধু ডায়াবেটিস রোগীদের আলসার ৯৭% নিরাময় করেছে।

মধু সারা ইতিহাস জুড়ে ত্বকের ক্ষত এবং পোড়া চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী। প্রমাণ রয়েছে যে প্রাচীন মিশরীয়, গ্রীক এবং রোমানরা ত্বকের সমস্যায় মধু ব্যবহার করতেন।

শিশুদের কাশি কমাতে পারে
বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সর্দি-কাশির জন্য মধু একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। চা এবং অন্যান্য পানীয় এর সাথে মধু মিশিয়ে দিতে পারেন।

honey beats

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অসুস্থ বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো কাশি কমাতে পারে এবং ঘুমের মানের উন্নতি করতে পার। শিশুদের ওপরের শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ সহ ঘুমের উন্নতি করতে কাশির ওষুধের চেয়ে মধুর একটি ডোজ বেশি কার্যকর ছিল।

লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা

লেবু ভিটামিন “সি” এর একটি দুর্দান্ত উৎস এবং এতে ভিটামিন “বি” এবং পটাসিয়াম রয়েছে। এছাড়া লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো উপকারী উদ্ভিদ যৌগগুলিও রয়েছে। নিচে লেবুর কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা দেওয়া হলো-

কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে
লেবু কিডনি পাথর প্রতিরোধে বেশ কর্যকরী। কারণ, সাইট্রিক এসিডের লবণ সাইট্রেট ক্যালসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’ পাথর গঠনে বাধা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন আধা কাপ বা দুটি লেবুর রস পান করলে মূত্রের সাইট্রেট বৃদ্ধি করে এবং কিডনির পাথরের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

হার্টের রোগ কমাতে সাহায্য করে
লেবু ভিটামিন “সি” এর খুব ভাল উৎস। আমরা জানি ভিটামিন “সি” যুক্ত যে কোনো খাবার হার্টের রোগ এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমায়। লেবুর রস রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে দিয়ে হার্টকে ভালো রাখে। ১০,০০০ জন বেশি লোকের এক গবেষণায় দেখা গেছে লেবু হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।

লেবুতে উপকারী যৌগ রয়েছে
লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ভিটামিন “সি” এবং অন্যান্য উদ্ভিদ যৌগ থাকে যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করতে সহায়তা করে। শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি র‌্যাডিকেল কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, ক্যান্সার এবং হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারে।

মাত্র ২৮ গ্রাম লেবুর রসের মধ্যে ২১% ভিটামিন “সি” থাকে। ভিটামিন “সি” এর উচ্চমাত্রার ডায়েট হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

lemons limes

লেবু ও মধু এক সাথে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়

লেবু ও মধু এক সাথে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় নীচে সেগুলো দেওয়া হলো-

ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে:

মধু ও লেবু এক সাথে পানির সাথে পান করলে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশি পানি পান করা বিপাক বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আপনাকে পেট ভরে রাখতে সহায়তা করে।

১০,০০০ জন অংশগ্রহণকারী সহ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যথাযথভাবে হাইড্রেটেড অংশগ্রহনকারীদের তুলনায় যারা সঠিকভাবে হাইড্রেটেড ছিলেন না তাদের ওজন বেশি বা স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এক চামচ মধুতে প্রায় ২৫ ক্যালোরি এবং ৬ গ্রাম চিনি থাকে। যদি মধু পানিতে মিশিয়ে পান করা হয় সেক্ষেত্রে কম চিনি থাকে তবে এটি আপনাকে কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে এবং ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। তবে এটি আপনি পানিতে কত মধু যোগ করেন তার উপর এটি নির্ভর করে।

তবে অবশ্যই খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানি, লেবুর রস, মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এতে পাকস্থলী পরিষ্কার থাকবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

লেবু ও মধু এক সাথে খাওয়ার সব থেকে প্রশংসনীয় গুণাবলী হল ভিটামিন “সি”। আপনি যখন আবহাওয়ার কারণে ঠান্ডা লেগে থাকে তখন পানির সাথে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন।

লেবুতে ভিটামিন “সি” প্রচুর পরিমাণে থাকে। ভিটামিন “সি” এমন একটি পুষ্টি যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া ভিটামিন “সি” শ্বেত রক্ত কোষের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে, যা আমাদের শরীরকে সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে মধু। কারণ মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে।

হজম স্বাস্থ্য উন্নতি করতে পারে:

হজম সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা খুবই গুরত্বপূর্ন। অর্থাৎ হাইড্রেট থাকা খুবই প্ৰজনীয়। ডিহাইড্রেশন এর ফলে শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং বয়স্কদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা হতে পারে। মধু ও লেবু একসাথে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে পান করার মাধমে শরীর হাইড্রেট রেখে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে পারি।

কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। মধু পেটের অম্লভাব কমিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু কিন্তু খুবই উপকারী।

মধু ও লেবু পানি কীভাবে তৈরি এবং ব্যবহার করবেন

এক গ্লাস গরম বা উষ্ণ পানিতে একটি লেবুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন। সাধারণত এই পানীয়টি উষ্ণ গরম খাওয়া হয় তবে এটি আপনি বরফের কিউব দিয়েও ঠাণ্ডা করে পান করতে পারেন।

মধু ও লেবু পানি কি পেটের মেদ কমাতে পারে?

সকালে উষ্ণ গরম পানির সাথে লেবু ও মধু যোগ করুন। এটি পেটের মেদ থেকে মুক্তি পেতে সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং খুব কার্যকর প্রতিকার।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নোই। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স:

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: