গর্ভবতী অবস্থায় আমি কি চিংড়ি মাছ খেতে পারি।

গর্ভবতী অবস্থায় আপনি চিংড়ি মাছ খেতে পারেন। আমাদের দেশের নদী, খাল, বিল, ঘের, পুকুরে প্রচুর পরিমানে চিংড়ি(গলদা,বাগদা, হরিনা, বালাম কুচো ইত্যাদি) মাছ উৎপাদন হয় বা পাওয়া যায়। সমুদ্র থেকেও প্রচুর চিংড়ি আহরিত হয়।

দূষিত উৎস থেকে উৎপাদিত না হলে কোনো সমস্যা নেই। সমুদ্রের মাছে কোনো কোনো সময় ক্ষতিকর মার্কারি পাওয়া যাই বলে সমুদ্রের চিংড়ি খেতে নিষেধ করা হয়।

আমাদের সহজলভ্য উৎস নদী, খাল, বিল, ঘের থেকে প্রাপ্ত মাছ অল্প বা পরিমিত পরিমাণে খেলে কোনো ক্ষতি নেই।

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা চিংড়ি খান চেটেপুটে তবে কিছু নিয়ম মেনে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে মানে প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে অনেক মায়ের ঘন ঘন বমি হয়, খাবার খেতে পারে না।

অন্য অনেক মাছ গর্ভবতী মা খেতে চান না কিন্তু চিংড়ি হলে রাজী মানে একটু ডাব নারকেলের নরম সাদা অংশ দিয়ে রান্না করে বা মাখন লাগিয়ে সেঁকে চিংড়ি মাছ খেতে অনেকেই পছন্দ করেন।

গর্ভাবস্থায় চিংড়ি মাছ খাওয়ার উপকারীতা:

প্রোটিনের উৎস:

চিংড়ি মাছে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান আছে, যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। চিংড়ি মাছ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। গর্ভাবস্থায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে হবু মায়ের ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বাচ্চার চোখ ও স্নায়ুর উন্নতিতে:

চিংড়ি মাছ ওমেগা ৩ (Omega 3)-এর অন্যতম উৎস।এই ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভস্থ বাচ্চার চোখ ও স্নায়ুতন্ত্র তৈরিতে সাহায্য করে। ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম হওয়ায়, এই চিংড়ি মাছ শরীরের অতিরিক্ত ওজন বাড়ায় না কিন্তু যথেষ্ট পুষ্টি সরবরাহ করে।

চিংড়ি মাছে সেলেনিয়াম (Selenium) নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরে কোষের ক্ষতি রোধ করে। অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino acids) ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তোলে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

মস্তৃষ্কের জন্য ভালো:

চিংড়িতে আসাক্সান্থিন (astaxanthin) নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। অ্যাস্টাক্সেথিন শৈবালের একটি উপাদান যা চিংড়ি খাই। এই কারণে, চিংড়ি অস্ট্রাক্যানথিন এর প্রধান উৎস। অ্যাস্টাক্সাথিন কোষের ক্ষতি থেকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

আয়রনের অভাব দূর করে:

প্রতি ১০০ গ্রাম চিংড়িতে ১৫% আয়রন আছে।নিয়মিত চিংড়ি মাছ খেলে আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দূর হয়ে যায়। আয়রনের অভাবে অনেক সময় আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই চিংড়ি মাছ আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে পারে খুব সহজেই। এছাড়া চিংড়ি আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বা রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে পারে।

থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:

চিংড়ি মাছে এমন অনেক ভিটামিনও আছে, যা হবু মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। ভিটামিন ডি (Vitamin D), ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12), ক্লোরিন, আয়োডিন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার; এগুলো সবই চিংড়ি মাছে উপস্থিত।

এইসব ভিটামিন ও খনিজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় আর থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরে হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো করতেও এইসব উপাদান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে।

সতর্কতাঃ

আপনি যদি স্বাভাবিক অবস্থায় চিংড়ি মাছ খেয়ে থাকেন এবং তাতে আপনার এলার্জি না হয়, তা হলেও গর্ভাবস্থায় খাবার আগে ডাক্তারকে জানান। যদি আপনার নির্দিষ্ট কোনও খাবার বা খনিজ থেকে এলার্জি হবার সম্ভাবনা থাকে, ডাক্তার সেটা জানিয়ে দেবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন।
প্রথমে একদম অল্প পরিমাণে চিংড়ি মাছ খেয়ে দেখুন, আপনার শরীরে কোনও অসুবিধা হয় কি না। যদি অসুবিধা না হয় বা ডাক্তারও বলেন, তবে আপনি চিংড়ি মাছ খেতেই পারেন। তবে কোনও ভাবেই বেশি পরিমাণে বা ঘন-ঘন নয়। গর্ভাবস্থায় কোনও খাবারই অতিরিক্ত বেশি খাওয়া ভালো নয়।

যে চিংড়ি মাছ কিনে আনছেন, সেটা যেন অবশ্যই পরিষ্কার জলের মাছ হয়, সে বিষয়ে সতর্ক হন। মাছ বাড়িতে এনে খুব ভালো করে পরিষ্কার করুন এবং ভালো করে রান্না করুন। তারপরেই খান।

কাঁচা চিংড়ি মাছ বা আধসেদ্ধ চিংড়ি মাছ খেলে ফুড পয়েসনিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় পেটের সমস্যা হবু মাকে নাজেহাল করে দিতে পারে। ঠিকমতো রান্না না হলে সামুদ্রিক মাছে থাকা বিভিন্ন পরজীবি বা প্যারাসাইট নষ্ট হয় না এবং শরীরের ক্ষতি করে।

সূত্রঃ

https://www.healthline.com/health/pregnancy/can-pregnant-women-eat-shrimp