গোলাপ ফুল ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে, ত্বকের যত্নে ও ব্রনের সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকরী।

গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। গোলাপ দেখতে যতটাই সুন্দর ততটাই মনোমুদ্ধকর এর ঘ্রাণ। প্রাচীনকাল থেকে নানান প্রেমের গল্প, কবিতা এবং জীবনের সব ধরণের শৈল্পিক ও সৃষ্টিশীলতায় গোলাপ ফুল অবধারিত ভাবে তার জায়গা করে নিয়েছে। গোলাপ তার সৌন্দর্য ও সুগন্ধ দিয়ে মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে বারবার। গোলাপ শুধুমাত্র ভালোবাসার ফুলই নয়।

কিন্তু জানেন কি, গোলাপ ফুল আপনাকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কত রকমের উপকার দিতে পারে। প্রাচীনকাল থেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্যও গোলাপের চর্চা হয়ে আসছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই গোলাপ ফুল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। গোলাপের পাপড়ি হোক বা কুড়ি সবই খাদ্য গুণে ভরপুর। এই সুন্দর ফুলের নির্যাস ত্বকের যত্নে নানান প্রসাধনী যেমন- লোশন, তেল ও টোনার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

প্রায় ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ ফুল রয়েছে। যেমন- কাঠগোলাপ, লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কালগোলাপ প্রভৃতি। গোলাপ পাঁপড়ির গড়ন ও বিন্যাসে একরূপ নান্দনিকতা রয়েছে যা মানুষকে আকৃষ্ট করে।

সুগন্ধী গোলাপের ঘ্রাণও মানুষের প্রিয়। চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী গোলাপের রয়েছে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার। গোলাপজল “রিলাক্সিং এজেন্ট” হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা স্নায়ুগুলোকে সতেজ করে।

গোলাপ পাপড়ির চা আলসার, অ্যাজমা, ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে। জ্বর,র্যাশ প্রতিরোধ করে। গোলাপ চা পিত্তথলি ও যকৃতকে ভালো রাখে। গোলাপজল চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী। এছাড়া সৌন্দর্যের উপাদান হিসেবে গোলাপের ব্যবহার সুপরিচিত হলেও গোলাপ যৌনজীবনে তৃপ্তি দেয়, চাপ-ধকল ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।

গোলাপ ফুলের উপকারিতা

ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চারটি প্রজাতির গোলাপ নিরাপদ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় R. alba (White rose), R. centifolia (Cabbage rose), R. damascena (Damask rose), and R. gallica (French rose). ঐতিহ্যবাহী চীনা ঔষধে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় Rosa rugosa ব্যবহৃত হয়। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, গোলাপ ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে-

মানসিক চাপ এবং হতাশা দূর করে:

হতাশা এবং মানসিক চাপ সাধারণত আসে অনিদ্রা এবং বিশ্রামহীনতার অভাবে। গোলাপ এই ধরনের সমস্যা দূর করনে কার্যকরি। গোলাপ দারুণ মিষ্টি গন্ধে মানসিক চাপ কমে হয় এবং মন ভালো থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে:

গোলাপের পাঁপড়িতে ৯৫% জল আছে। তাই এর ক্যালোরি কাউন্ট অত্যন্ত কম। এছাড়া গোলাপের পাপড়িতে বিদ্যমান যৌগ মেটাবলিজমকে উন্নত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় যা ওজন কমাতে খুবই কার্যকরি।

এক গ্লাস গরম পানিতে ১০-১৫টি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে অপেক্ষা করুন পানি গোলাপি রং ধারন করা পর্যন্ত। এবার সামান্য মধু এবং এক চিমটি দারুচিনি গুড়া মিশিয়ে নিন। তারপর এই পানি পান করুন। এতে দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমে যাবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এমন যৌগ যা ফ্রি র‌্যাডিকালের প্রভাব কমাতে সহায়তা করে। ফ্রি র‌্যাডিকাল সেলুলার ক্ষতির কারণ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের দিকে পরিচালিত করে। গোলাপে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

গোলাপ বিশেষত গ্যালিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যৌগটি চায়ের মোট ফিনোল (phenol) সামগ্রীর ১০-৫৫% অবদান রাখে এবং অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যানালজেসিক প্রভাব হিসাবে পরিচিত।

কামশক্তি বৃদ্ধিতে:

আয়ুর্বেদ মনে করে কামভাবনাকে আরো প্রশান্তিদায়ক করতে গোলাপের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে গোলাপের পাপড়ি খেতে পারেন এতে আপনি শুধু শক্তিশালী এবং সতেজই অনুভব করবেন না পাশাপাশি আপনাকে সেক্সুয়ালি সক্রিয় রাখবে।

পাইলস সমস্যা দূর করে:

গোলাপের পাপড়ী পাইলস দূরি করনে খুবই সহয়ায়তা করে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার এবং পানি। এছাড়াও রয়েছে হজম শক্তি বৃদ্ধিকারি যৌগ যা দেহে বিষ বের করে দিতে সাহায্য করে। ব্লিডিং পাইলস দূরি করনে এবং তৎক্ষণাৎ ব্যাথা দূর করনে এটি খুবই কার্যকরি।

একমুঠ গোলাপ পাপড়ি নিন এবং ৫০ml পানি মিশিয়ে হামান দিস্তায় পিষিয়ে নিন। এইবার খালি পেটে খেয়ে ফেলুন। এইভাবে ৩ দিন সেবন করুন তাতে আপনি ব্লিডিং পাইলস থেকে মুক্তি পাবেন।

হজমশক্তি বর্ধন:

শরীরে জন্য হজমশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে গোলাপ। ওজন কমানোর জন্য পরিপাকতন্ত্র ঠিকমতো কার্যকর রাখা জরুরি। গোলাপ আপনার পাচনতন্ত্রে ভাল ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়ারোহিয়ার হার্বাল প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ত্বকের সুরক্ষায়:

গোলাপের পাপড়ি ত্বকের যত্নে খুবই কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র‌্যাডিকেলসের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এক চা চামচ গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করে ত্বকে লাগান।

মধুও ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ত্বকের সুরক্ষায় গোলাপ পানি অনেক উপকারী বিশেষ করে সেনসিটিভ ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে, ত্বকের তৈলাক্ততা সমাধানে, ত্বককে সফট করতে খুবই কার্যকরি।

ঠোঁটের কালার উজ্জ্বল করে:

গোলাপের মতো গোলাপি ঠোঁট কে না চাই। গোলাপি ঠোঁটের জন্য গোলাপই একমাত্র ভরসা। গোলাপ শুধু ঠোঁটের উজ্জ্বলতাই বৃদ্ধি করবে না পাশাপাশি ঠোঁটকে অনেক সফট তুলবে। এছাড়াও গোলাপের পাপড়ি ঠোঁট ফাটা দূর করতে সাহায্য করে।

এজন্য গোলাপের পেস্টের সাথে দুধের সর এবং কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট রাখুন এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক বার করাতে আপনি নিজেই তফাৎটা বুঝতে পারবেন।

ব্রনের সমস্যা দূর করে:

ব্রনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে একমাত্র গোলাপজল এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। গোলাপের পাপড়ির অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল যৌগ ব্রন সমস্যা দূরীকরণে অতীব কার্যকরী। সারা রাত ধরে মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেই মেথি ও গোলাপ জল দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।

মুখে লাগিয়ে নিন এবং ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।