মুলা রক্তচাপ কমায়, ত্বক উজ্জ্বল করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

মুলা আপনার পছন্দের সবজির তালিকায় নাম নেই তো কি হয়েছে। এখন আপনার পছন্দের সবজির তালিকায় জায়গা করে নেবে। আপনার মনের মনিকোঠায় ঠাঁই পাবে কারণ আপনি আজ এই পোস্টে জানতে পারবেন মুলাতে বিদ্যমান একাধিক ভিটামিন ও মিনারেলস সম্পর্কে অর্থাৎ মুলার বহুবিধ স্বাস্থ্যসুবিধা সম্পর্কে।

শীতকাল মানেই বাংলার সবজি ক্ষেতে মুলার সমারোহ। মুলা সেটা লাল বা গোলাপী হোক বা সাদা মুলা নাম শুনেই অনেকেই নাক সিটকান, বিরক্ত হন। অনেকেই মুলা খেতে চান না। কিন্তু মুলায় রয়েছে ভিটামিন “সি”, জিংক, পটাশিয়াম, ফসফরাস এর মতো পুষ্টি উপাদান। ফাইবারও রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে। মুলার ভিটামিন “সি” দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

তরকারি হিসেবে, ভাজি করে বা সালাদে নানাভাবে মুলা খাওয়া যায়। তাই শীতকালে নিয়মিত মুলা খেলে অল্প খরচে আপনার পুষ্টির চাহিদা পূর্ণ হবে ষোলোআনা একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশ, ভারত, জাপান ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সমান জনপ্রিয় এই সবজিটি।

শীতকাল মানেই জীবাণুদের মধুচন্দ্রিমা। জীবাণুদের ভ্রমণকালে এই সময়ে আমরা সহজেই নানা রকম অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। এই সবজিটিতে উপস্থিত ফলেট, ফাইবার, রাইবোফ্লবেন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালসিয়াম যা আমাদের জীবাণুদের সাথে লড়াই করার উপযুক্ত করে তোলে।

সবজির জন্য সবথেকে ভালো সময় হলো শীতকাল। শীতের সকালে গরম ভাতের সাথে মুলা দিয়ে রান্না করা একবাটি ডাল, তরকারি বা মাছের ঝোল আপনার সকালটাকেই ভালো করে দিবে। অনেকে মুলার ছাতু খেতে পছন্দ করেন। মুলা সালাদে বা রস করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

Brassicaceae-পরিবারের এই সবজিটি বাংলায় মুলা, ইংরেজিতে Radish নামে পরিচিত। মুলা (Raphanus raphanistrum subsp. sativus)-একটি ভোজ্য মূল যা রোমান যুগের আগে এশিয়ায় চাষ হতো।

মুলার উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা

মূলা কি সুপারফুড? সুপারফুড হোক বা না হোক মূলার কেবলমাত্র এক কাপ পরিবেশন আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন “সি” প্রয়োজনীয়তার এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে। আপনি ভিটামিন বি-6, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং জিংকের একটি প্রাকৃতিক উৎসও পাচ্ছেন। 

অ্যাথলিটের ডায়েটের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ভিটামিন এবং খনিজ। এমনকি তাদের মধ্যে অল্প পরিমাণে প্রোটিনও রয়েছে।

ত্বক উজ্জ্বল করে:

একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে যে, মুলার রসে যে পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যাই সেটি আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করে। মুলার পেস্ট মুখে লাগালেও কিন্তু ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

রক্তচাপ কমায়:

মুলাতে রয়েছে পটাসিয়াম। আর পটাসিয়াম থাকা মানে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। এই মিনারেলটির প্রধান কাজ হলো রক্তচাপ কমানো।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

আমরা আগেই জেনেছি, এতে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকায়, সাধারণ সর্দিকাশি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত মুলা খেলে শরীরে ক্ষতিকর মুক্ত উপাদান তৈরি হয় না। এছাড়া প্রদাহ ও অকালবার্ধক্য দূর হয়।

লিভার ভালো রাখে:

মুলায় প্রচুর ফাইবার আছে। প্রতিদিন যদি সালাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মুলা খাওয়া যায় বা মুলার রস খাওয়া হয় তাহলে ফাইবারের পাশাপাশি শরীরের পানির ঘাটতি দূর হয়। ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পিত্তরসের উৎপাদন ঠিক থাকে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

কোষ্টকাঠিন্য সারায়:

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যেনো মানুষের দিন দিন বেড়েই চলেছে। কর্মব্যস্ত বর্তমান আধুনিক সমাজে ফার্স্ট ফুড, কোল্ডড্রিঙ্কস, চা, বিস্কুট, কফি খেয়ে তড়িঘড়ি করে দিন পার করছি। ফলে সকালে উঠে যন্ত্রণাদায়ক বার্থরুম।

অতিরিক্ত চিনি যুক্ত কার্বোনেটেড পানীয়, কফি, চা শরীরটাকে রুক্ষ করে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই ফাইবার ও জলীয় অংশযুক্ত শীতের সবজি মুলা এই শীতে আপনার বন্ধু হতে বাধ্য। আসলে এতে উপস্থিত ফাইবার ও মিনারেলস সমৃদ্ধ তরল অংশ কোষ্টকাঠিন্য রোধে দারুন কার্যকর।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

মুলার রসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন “সি” শরীরের ভিতরে ক্যান্সার সেলেরে জন্ম এবং বৃদ্ধি আটকায়।

বিশেষত কোলন, ইন্টেস্টিনাল,স্টমাক এবং কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে মুলার রস দারুনভাবে কাজে আসে।

ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে:

একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে, মুলা তো উপকারী কিন্তু মুলার পাতা আরো বেশি উপকারী অর্থাৎ মুলার পাতাতে ভিটামিন ও মিনারেলস মুলা থেকে বেশি।

নিয়মিত মুলার পাশাপাশি মুলার পাতা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে নানাবিধ ভিটামিনের পরিমাণ যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

ডায়াবেটিসেও উপকারি:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশীর্বাদ।

মূলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এই মূলা। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা এটি গ্রহণ করতেই পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবেন।

আজকাল অনেকেই গ্যাসের সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেকে মনে করেন, মুলা খেলে পেটের গ্যাস আরও বাড়ে। কিন্তু এমনটা সত্যি নয়, বরং মুলা খেলে পেটের গ্যাস কম হয়। এছাড়াও হজম প্রক্রিয়ার জন্যও সবজিটি খুবই ভালো।

সতর্কতা:

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ

ndtv, boldsky, healthline

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: