অড়হর ডাল রক্তাল্পতা দূর করে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

খাবারের পাতে ডাল না থাকলে সেই খাবার একেবারেই যেন অসম্পূর্ণ লাগে। ভাত-রুটির সঙ্গে অন্যতম সঙ্গীই হল ডাল। ডালে থাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি।

তাই ডাল যে খাবার হিসেবে শুধু পেটই ভরায় এমন নয় বরং পাশাপাশি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতেও ডাল ভীষণ সাহায্য করে। এরকমই একটি ডাল হল অড়হর ডাল।

জন্ডিস রোগের ঔসুধ হিসাবে অড়হর ডালের পাতার রস ২/৩ চামচ একটু লবণ দিয়ে হালকা গরম করে খেতে হবে। এর পাতা খেলে অরুচি দূর হয়। জিহ্বার ক্ষত দূর করার জন্য এর পাতা বেশ উপকারী।

অবাঙালিদের কাছে এটি তুর ডাল নামে পরিচিত। অনেকেই বলে থাকেন এবং মনে করেন যে, অড়হর ডাল বেশ কিছু রোগের হাত থেকে আমাদের দূরে রাখতে এবং কিছু রোগের উপসর্গ কমাতেও সাহায্য করে।

এর ইংরেজি নাম: pigeon pea এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Cajanus cajan.

অড়হর ডালের পুষ্টি উপাদান

নিচে অড়হর ডালের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • প্রোটিন: ৬.৭৬ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ২৯.৮২ গ্রাম
  • ফাইবার: ৬.৭ গ্রাম
  • আয়রন: ০.৪৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন “সি”: ৪৩ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি-1: ০.৫৩৬ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস: ১৮১ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি-9: ১৫৩ মিলিগ্রাম

অড়হর ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর। এই ডালে ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন “ই”, “কে” রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে।

এছাড়াও উচ্চ আঁশ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ যা পেটভরা রাখে, ক্ষুধা কমায়, ওজন কমায় ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

অড়হর ডালের উপকারিতা

এবার জেনে নিই, অড়হর ডালের উপকারিতা সম্পর্কে-

ওজন কমাতে সাহায্য করে:

এই ডালে অন্যান্য ডালের মতো পুষ্টিগুণ থাকলেও এটিতে ফাইবার ভরপুর থাকে। আর আমরা সকলেই জানি ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমাদের পেত ভরা থাকতে সাহায্য করে।

পাশাপাশি তা আমাদের অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতাও কমায়। এইভাবেই বাড়তে থাকা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ফাইবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তবে ওজন কমাতে অড়হর ডাল সরাসরি ভাবে ঠিক কতটা উপকারী, তা নিয়ে এখনও বেশ কিছু গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

হার্ট রোগের হাত থেকে রক্ষা:

হার্টের রোগের জন্য যে কারণগুলি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন- ডায়াবেটিস, মোটা হয়ে যাওয়া কিংবা উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ সেগুলি কমাতে সাহায্য করে অক্সিডেটিভ উপাদান।

সেভাবেই অড়হর ডালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেটিভ উৎসেচক ফ্রি রেডিকেলসের প্রভাব কমিয়ে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ কমাতে বাড়ায়:

এই ডাল খেলে যে কেবলমাত্র আমাদের শরীর সুস্থ থাকে তাইই নয় বরং তা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে।

অড়হর ডালে থাকে ইমিউনোমডুলেটরি (Immunomodulatory) গুণ। এই গুণ আমাদের শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রুখতে সাহায্য করে:

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা জারণ চাপ কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণে ভরপুর কোনও খাবার খেলে তা লাভজনক হতে পারে। সেই জায়গায় অড়হর ডালে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে।

তাই এটি ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের ভীষণ সাহায্য করে।

সেই গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে, হাইপারগ্লেসেমিয়াকে (উচ্চ রক্ত শর্করা) নিয়ন্ত্রণ করতে অঙ্কুরিত অড়হর ডাল খুবই উপকারী।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী একটি রোগ রুখতে অড়হর ডালের ব্যবহার বেশ কিছু ক্ষেত্রে উপকারী প্রমাণিত হয়ে থাকে।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউট্রিশন এর একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অড়হর ডাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি অন্যতম উৎস।

আর এই গুণের কারণে এটি আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা জারণ চাপের কারণে হওয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

সেই গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে, অড়হরের মূলে থাকে অ্যান্টিক্যান্সার গুণ। অড়হরের মূলে পাওয়া যায় কেজোনল নামের একটি উপাদান। সেই উপাদানই অড়হরে পাওয়া যাওয়া অ্যান্টিক্যান্সার গুণের উৎস।

রক্তাল্পতা দূর করে:

অড়হর ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা রক্তাল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। একক কাপ অড়হর ডালে ০.৪৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে।

এই ডালে থাকা উচ্চ পরিমাণের আয়রন যা আপনার সিস্টেমে রক্ত ​​প্রবাহের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

নিয়মিত সেবন করলে হিমোগ্লোবিনের স্তরকে উন্নত করতে এবং আপনার রক্তকে বিশুদ্ধ করতে পারে, ফলস্বরূপ আপনার রক্ত ​​প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে উন্নত করে।

রক্তচাপ বজায় রাখে:

পটাসিয়াম অড়হর ডালে পাওয়া যায় যা রক্তচাপ হ্রাস করে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের উচিত প্রতিদিনের ডায়েটে অড়হর ডাল যুক্ত করতে পারেন।

শক্তি বৃদ্ধি করে:

এই ডালে ভিটামিন “বি” উপস্থিত রয়েছে। ভিটামিন বি-1 এবং ভিটামিন বি-9 বিপাক উন্নত করে, ফ্যাট স্টোরেজ রোধ করে এবং শক্তির স্তর বাড়ায়।

এটি শুষ্ক জলবায়ুতে বাসকারী মানুষের জন্য উপযুক্ত, শারীরিক পরিশ্রম যা দ্রুত শক্তি হ্রাস করে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

এ ডালের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে বলতে গেলে শুরুতেই বলতে হয় এই ডালে থাকা অ্যান্টিনিউট্রেটিভ উপাদানের কথা।

এই উপাদানটি আমাদের শরীরে পুষ্টি উপাদানের প্রবেশে বাধা দেয়। তাই জন্য পরিমিত মাত্রায় অড়হর ডাল খাওয়া উচিত।

এছাড়া কারও কারও শরীরে অড়হর ডাল আবার অ্যালার্জির সৃষ্টিও করে। তাই যাঁদের ফুড অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাঁদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই অড়হর ডাল খাওয়া।

রেফারেন্স: