থানকুনি পাতা পেটের অধিকাংশ রোগ দূর করে ও যৌবন ধরে রাখে।

গরীবের বিনা পয়সার দামি ঔষধ হলো এই থানকুনি পাতা। দামে খুবই সস্তা বা একটু ইচ্ছা থাকলে বিনামূল্যেও সংগ্রহ করা যায়। রাস্তা ঘাটে, ক্ষেতের আইলে, পুকুর পাড়ে, খালবিলের পাড়ে আমাদের হাতের নাগালে এই শাকটি পেয়েও গরজ করে খাওয়া হয় না।

অনেক দামি দামি ঔষধ খাচ্ছি। পার্শপ্রতিক্রিয়া যুক্ত এসব ঔষধ থেকে ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি পুষ্টিকর ও ঔষধি গুনে ভরপুর। এককথায় মহৌষধ।

কথায় বলে, পেট ঠিক তো জগৎ ঠিক অর্থাৎ পেট ভালো থাকলে মনও ফুরফুরে থাকে। পেটের পীড়ার মহৌষধ অর্থাৎ পেটের রোগ নিরাময় করতে থানকুনি পাতার কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো পেটের ব্যাথা থেকে পরিত্রান পেতে আপনি এটা নিয়িমিত খেতে পারেন।

Fountain of youth অর্থাৎ যৌবনকে ধরে রাখতে প্রাকৃতিক মহৌষধ থানকুনি পাতা আয়ুর্বেদ অনুসারে কয়েক হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।

শাক বা পাতা যেটাই বলুন না কেনো অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণেই থানকুনি পাতা অতিপরিচিত একটি নাম। সাধারণতঃ অঞ্চলভেদে এটিকে টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, থুলকুড়ি, ধূলাবেগুন, মানামানি, আদাগুনগুনি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।থানকুনি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। কোনো প্রকার যত্ন ছাড়াই জন্মে।

থানকুনি পাতার সবচেয়ে উপকারী দিকগুলোর একটি হলো এটি মনোযোগ ক্ষমতা বাড়ায় ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। এর ইংরেজি নাম Indian Pennywort। এর ল্যাটিন নাম Centella asiatica এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica Urban।

সংস্কৃতে থানকুনি ‘ব্রাহ্মী’ নামে পরিচিত। তবে আয়ুর্বেদে একে বলা হয় ত্বাষ্ট্র। উৎপত্তিস্থল ভারত। হিন্দিতে ব্রহ্ম মান্ডুকি নামে পরিচিত, এটি সাধারণত এশিয়া জুড়ে বেশ কয়েকটি দেশে দেখা যায়।

ছোট্ট এই উদ্ভিদটিকে আমরা অল্প পরিমান জায়গাতে লাগিয়ে কাজে লাগাতে পারি। আজকাল শহরে বাড়ির ছাদে, টবে, বিভিন্ন পাত্রে এই গাছ লাগিয়ে অনেকে উপকার পাচ্ছেন।

মাটিটা একটু প্রস্তুত করে নিয়ে অল্প কয়েকটা গাছ লাগালে তার থেকে আপনাআপনি বেড়ে শত-শত গাছে ভরে যায়। ফেলনা এই থানকুনি শাকটিকে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। বিশ্বাস না হয় করে দেখুন, এটি আপনার বাড়ির ডাক্তারের কাজ করবে।

থানকুনি পাতা বা শাকের উপকারিতা:

থানকুনি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। থানকুনি পাতা দেশের সর্বত্র কম-বেশী পাওয়া যায়। চিকিত্‍সার অঙ্গনে থানকুনি পাতার অবদান অপরিসীম। ভেষজ চিকিৎসায় থানকুনির স্থান রয়েছে অনেক উপরে।

বলা হয় যে, ভারতীয় পেনিওয়ার্ট বা Gotu Kola-র ক্ষুদ্র পাতাগুলি ছোট পদ্মের পাতার মতো দেখতে। এটি রক্তকে শুদ্ধ করে, ডায়াবেটিস, আলঝাইমার, হাঁপানি, উদ্বেগ, চর্মরোগ এবং অন্যান্য অসুস্থতা নিরাময়ে সহায়তা করে।

আসুন থানকুনির কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক –

আমাশয় দূর করে:

থানকুনি পাতা সকল ধরনের পেটের রোগের মহৌষধ। থানকুনি পাতা বেটে খাওয়া সবথেকে ভালো। পাতা বেটে মিহি করে একটু লবন ও সর্ষের তেল সহযোগে গরম ভাতের সঙ্গে খান।

এছাড়া থানকুনি পাতা কাচ কলা বা দয়া কলা ও আলু দিয়ে ঝোল রেঁধেও খেতে পারেন। এভাবে খেলে বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটব্যথা সেরে যায়। মুখে রুচি আনে।

হজম শক্তি বাড়ায় :

আমাদের বাঙালিদের নিজস্ব কিছু খাবারের পদ রয়েছে যেগুলো খুবই স্বাস্থ্যকর। নিয়মিত বেগুন, পেঁপে অথবা কাচকলার সাথে থানকুনি পাতা মিশিয়ে শুক্ত রান্না করে খেলে হজম শক্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

বাচ্চাদের কথার অস্পষ্টতা দূর করে:

অনেক বাচ্চারা মুখে কথা ফুটে যাবার পরেও স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না।

যে সকল বাচ্চাদের কথা বলতে দেরি হয় অথবা কথা অস্পষ্ট হয়, তাদের ১ চামচ থানকুনি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে তাতে ২০/২৫ ফোটা মধু মিশিয়ে ঠান্ডা দুধের সাথে কিছুদিন খাওয়ালে সমস্যার উপশম হয়।

ডায়াবেটিস কমায় :

এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। তাই ডায়বেটিস-এর চিকিৎসায় এটি সহায়তা করে থাকে।

জ্বর সারায়:

এক চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চামচ শিউলি পাতার রস একসাথে মিশিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন খেলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।

চুল ও দাঁতের যত্নে:

চুলের ক্ষেত্রেও থানকুনির গুণ অপরিসীম। থানকুনি চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

দাঁতের নানান রোগ ভাল করার পেছনে থানকুনি পাতার বিকল্প নেই। রক্তপাত, মাড়ি ও দাঁত ব্যথার ক্ষেত্রেও পাওয়া যাবে সুফল। যদি থানকুনি পাতার রস নিয়ে পানি কুলি করা হয়, দাঁতের ব্যাথা অনেক কমে যাবে।

যৌবন ধরে রাখে:

দীর্ঘায়ুজীবীদের “ভেষজ” হিসাবে চিহ্নিত, থানকুনি বা Indian pennywort বা গোটু কোলা চিরাচরিত আয়ুর্বেদিক, চীনা এবং ইন্দোনেশিয়ান ওষুধের প্রধান উপাদান।

আপনার যদি বয়স বাড়ার ফলে নিজেকে দুর্বল অনুভূত হয়, সেই ক্ষেত্রে থানকুনির রস প্রতিদিন পান করলে তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন।

চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দুধ এর সাথে এক গ্লাস থানকুনি পাতার রস পান করতে হবে, যার ফলে আপনার কনফিডেন্স আরো বেড়ে যাবে।

লিভার ভালো রাখে :

প্রতিদিন সকালে থানকুনির রস ১ চামচ ও ৫/৬ ফোঁটা হলুদের রস সামান্য চিনি বা মধুর সাথে খেলে লিভারের সমস্যার উপশম হয়।

রক্ত পরিষ্কার করে:

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪ চা চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ৭ দিন খেলে রক্ত দূষণ ভালো হয়।এটি রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি করে।

ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় :

থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ফলে স্বাভাবিকভাবে ত্বকের উজ্বলতা বৃদ্ধি পায়। কম বয়সে আপনাকে বয়স্ক দেখাবে না।

এছাড়াও বিভিন্ন চর্মরোগ থানকুনি দ্বারা নিরাময় করা সম্ভব। স্কিনের মৃতপ্রায় কোষের জন্য থানকুনি অনেক উপকারী। থানকুনির রস মৃতপ্রায় কোষ পুনরায় সংগঠিত করতে পারে এবং শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়, যার ফলে শুষ্ক ত্বক মসৃণ হয়ে যায়।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে:

স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য থানকুনি পাতার রসের কোনো তুলনা হয় না। আধা গ্লাস দুধের মধ্যে দুই থেকে তিন চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খান।স্মরণশক্তি ভালো হবে।

কিছু গবেষণায় অনুশীলনকারীরা এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, থানকুনি পাতার মস্তিষ্ক শক্তি বাড়ানো, ত্বকের সমস্যাগুলি নিরাময় এবং লিভার এবং কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতি করার ক্ষমতা রয়েছে।

কাশি কমায়:

থানকুনি পাতার রস কফ ও কাশি কমায়। ফ্লুঘটিত সমস্যায় ভালই কাজ দেয়। নিয়মিত কয়েকদিন থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু বা চিনি মিশিয়ে খেলে কাশি সেরে যায়।

সতর্কতা

সবকিছু পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো নয়। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: