লেটুস পাতা হজমে সহায়তা করে, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ও হার্ট ভালো রাখে।

লেটুস পাতার সাথে মোটামুটি সবারই পরিচিত। ফাস্টফুড, সালাদে কিংবা রান্নায় এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেটুস ফাইবারযুক্ত সবজি বলে এটা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি হজমও হয় দ্রুত।

লেটুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” ও বিটা ক্যারোটিন থাকার কারণে কোলেস্টেরলের অক্সিডেশনকে বাধা দেয়। একারণে এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করে এবং হৃত্‍পিণ্ড ভালো থাকে।

লেটুস একটি বর্ষজীবি উদ্ভিদ যা মিশরীয়রা প্রথমে চাষ করে। বহু শতাধিক রোগের জন্য এটি ইউনানীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আপনি যদি আপনার ডায়েটে স্বাস্থ্যকর কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে চান তবে লেটুস পাতা একটি দুর্দান্ত পছন্দ।

লেটুস পাতার পুষ্টি উপাদান

নিচে লেটুস পাতার পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • ভিটামিন “এ”:১২৭% (DV)
  • প্রোটিন: ১ গ্রাম
  • ফাইবার: ১ গ্রাম
  • ভিটামিন “কে”:১৪৯% (DV)
  • ম্যাগনেসিয়াম:৩% (DV)
  • ম্যাঙ্গানিজ:  ৯%(DV)
  • ফোলেট: ৮%(DV)
  • আয়রন: ৬%(DV)
  • ভিটামিন “সি”:৫%(DV)

লেটুস পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

হার্ট ভালো রাখে:

ফলমূল এবং শাকসবজি আমাদের হার্ট এর জন্য খুবই উপকারী। লেটুসও এমনি একটি সবজি যা আমাদের হার্টকে সুরক্ষা প্রদান করে।

লেটুসে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্ত চাপকে হ্রাস করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও লেটুস ভিটামিন “সি” এর একটি ভালো উৎস।

এটি কার্ডিভাসকুলার (cardiovascular) রোগের চিকিৎসাও সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ায়। তাই লেটুস পাতা খেলে হার্ট এর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে:

লেটুসে রয়েছে ভিটামিন “এ” যা ত্বকের কোষের টার্নওভারকে সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন “সি” সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

এটি বার্ধক্য জনিত লক্ষণ দূর করে। সকাল বেলা লেটুসের রস দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হয়। লেটুসে থাকা ভিটামিন “কে” চুলের শক্তি বাড়িয়ে চুলকে ঝলমলে করে তোলে।

হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে:

কোলাজেন উৎপাদনে ভিটামিন “কে”, “এ” এবং “সি” খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেটুস এ তিনটি উপাদান আছে। ভিটামিন “কে” কার্টিলেজ এবং সংযোজক টিস্যু গুলি তৈরি করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন “এ” নতুন হাড়ের কোষ গুলির বিকাশে সহায়তা করে।

অনিদ্রা নিরাময়ে সহায়তা করে:

ল্যাক্টুয়ারিয়াম (Lactucarium) লেটুসের একটি বিশেষ উপাদান। যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে। লেটুস দেহের ভিতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।

এই হরমোনটির ক্ষরণ যত বাড়তে থাকে, তত ঘুম আসতে শুরু করে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূর করতে লেটুস পাতা খুব কার্যকরী।

হজমে সহায়তা করে:

লেটুসে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার রয়েছে যা হজমে সহায়তা করে।

তার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গ্যাস্ট্রিকের মতো অন্যান্য হজম রোগ গুলি কমে যায়। এটি পেটের ব্যথা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:

লেটুসে রয়েছে জেক্সানথিন যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও লেটুস যেহেতু একটি সবুজ সবজি তাই এতে লিউটিন এবং জেক্সানথিন উভয়ই থাকে। যা চোখের স্বাস্থ্য বাড়াতে এবং ছানি পড়া রোধ করতে সহায়তা করে থাকে।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

লেটুস পাতায় শক্তিশালী আন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই যৌগ গুলি টিউমার বৃদ্ধি এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে বাঁধা দেয়।

গর্ভাবস্থার জন্য ভালো:

গর্ভবতী মায়েরা কাঁচা লেটুসপাতা খেলে মা ও শিশু উভয়ের শরীরেই রক্তের মাত্রা বাড়ে।

সব ধরনের সবুজ পাতার সবজিতে কিছু না কিছু আয়রন রয়েছে। গর্ভবতী অবস্থাতেও আয়রনের প্রয়োজন পড়ে। তাই খাবারের সঙ্গে পছন্দমতো উপায়ে লেটুস ব্যবহার করুন।

পরিশেষে বলা যায়, লেটুস সব দিক থেকে আমাদের স্বাস্থ্যের কোনো না কোনো উপকার করে। এটি যেমন আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের জন্য একটি দূর্দান্ত সংযোজন।

তবে আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।