হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা জেনে রাখা উচিত।

কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র হাত ধোয়ার অভ্যাস পেটের অসুখ কমাতে পারে ৩৯ ভাগ এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগবালাই কমে ৫০ ভাগ। সিডিসির অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাবার এবং পানির মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায়, তার প্রতি চারজনের একজন আক্রান্ত হন শুধু হাত না ধোয়ার কারণে।

তাই হাত ধোয়ার মতো সহজ অভ্যাস গড়ে তোলার মাধম্যে অধিকাংশ রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে পারি। স্বাস্থ্যের জন্য যত ভালো অভ্যাস আছে তার মধ্যে হাত ধোঁয়া অন্যতম। কিন্তু অনেকেই এতে সচেতন নন। খাবারের শুরুতে যেমন হাত ধোয়া দরকার, তেমনি খাবার তৈরি বা পরিবেশনার সময়ও হাত ধোয়া জরুরি।

ভিয়েনার একটি হাসপাতালে কাজ করতেন বিশিষ্ট চিকিত্সক ইগনাল সেমেলউইজ। এই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে মাতৃমৃত্যুর হার হঠাত্ করেই বেড়ে যায়। আতঙ্কিত রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে থাকেন। ডাঃ সেমেলউইজ এর কারণ খুঁজতে লাগলেন। তিনি অনুসন্ধান করে দেখলেন, নবীন চিকিৎসকগণ এনাটমি ক্লাসে মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে হাত ভাল ভাবে না ধুয়েই প্রসূতি ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা করছেন। তিনি মতামত দিলেন যে এভাবে অপরিষ্কার হাত দিয়ে রোগীদের সংস্পর্শে আসায় সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর হার।

তিনি উদ্যোগ নিয়ে হাত ধোয়া কর্মসূচী শুরু করেন, যার ফলে জীবাণু সংক্রমণ কমে যায় এবং মৃত্যুর হার ৫ গুণ কমে আসে। যদি আমরা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় নাকে মুখে হাত দিই বা হাত ভাল ভাবে না ধুয়ে খাদ্য খায় তাহলে আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু প্রবেশ করবে। ফলে সাধারণ ঠাণ্ডা বা ফ্লু থেকে শুরু করে ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, টাইফয়েড সহ বিভিন্ন পানি ও খাদ্য বাহিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।

হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম

বাড়িতে বা স্কুলে শিশুদের শেখানো হয় হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা। রোগ বা জীবাণু সম্পর্কে শিশুর ধারণা তৈরি না হলেও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ছোট থেকেই প্রচেষ্টা শুরু করা প্রয়োজন। তবে কেবল হাত ধুলেই হবে না, বরং হাত ধুতে হবে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক সময়ে।

সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া যায়। তবে পানি বা সাবানের অভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাগে সব সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের একটা ছোট্ট বোতল রেখে দেওয়া ভালো। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে শুকানোর আগে সেই হাতে খাবার স্পর্শ করা ঠিক নয়। এছাড়া ছাই বা মাটি দিয়েও হাত ধুতে পারেন।

কখন হাত ধোবেন

খাওয়ার আগে তো হাত ধোবেনই। খাবার তৈরির আগে, কোটাবাছা করার আগে এবং খাবার পরিবেশনের আগেও হাত ধুয়ে নিন। টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধুতে হবে। শিশুকে স্পর্শ করার আগে এবং শিশুকে পরিষ্কার করানোর পরে হাত ধুতে হবে।

শিশুর জন্য

শিশুর সুস্থতায় হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণের পাশাপাশি কৃমি সংক্রমণের বড় একটি কারণ হাতের অপরিচ্ছন্নতা। কৃমি সংক্রমণের কারণে শিশুর রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টি হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া হলেও শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। তাই খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে শিশুর হাত ধোয়ার অভ্যাস করা জরুরি।