ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গু হলে কি খাবেন। জেনে নিন।

ডেঙ্গু জ্বর কি?

ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল রোগ যা বেশিরভাগই বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক রোগ যা এডিস এজেপ্টি প্রজাতির মশা দ্বারা বিস্তৃত হয়।

পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। ডেঙ্গু জ্বর সারা বিশ্বে বিস্তৃত – বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ণ দ্বারা ডেঙ্গু ভাইরাস প্রভাবিত হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী হলো এডিস মশা। এই জেন্টেলম্যান সাধারণতঃ সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে তৎপর হয়ে ওঠে।

এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। ভয় পাবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিন।

ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকেউ আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গু জ্বরে। এডিস মশা ভদ্র মশা হিসাবে পরিচিত। এরা স্বচ্ছ পানিতে ডিম্ পাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না।

সাধারণতঃ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। কারণ এই সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট বা রক্ত কণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছেন।

ডেঙ্গুজ্বর হলে কি খাবেন?

শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু হলে খাবার-দাবার ও পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা কম জরুরি নয়। খাবার ব্যাপারে বড়দের নিয়ে ঝামেলা কম হয়।

কঠিন পরিস্থিতি ও টেনশনের মধ্যে পড়তে হয় বাচ্চাদের নিয়ে। জ্বর হলে বাচ্চারা কিছুই খেতে চাই না। খাওয়াদাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেয়।

আমরা হয়তো অনেকেই জানি, জ্বর হলে তরল খাবার খেতে হয়। তরল খাবার মানে -সরাসরি খাবার পানি, ডাবের পানি ও ফলের রস।

fever food

বিশিষ্ট চিকিৎসকের মতে:

মেডিসিনের চিকিৎসক উইলিয়াম শ্যাফনারের মতে, জ্বর প্রতিরোধের সেরা উপায় হল প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণ করা। পানি, ডাবের পানি এবং ১০০ শতাংশ ফলের রস, জ্বরের জন্য খাবারের তালিকায় রাখুন।

জ্বরের জন্য আপনার তরল সমৃদ্ধ খাবার যেমন খাওয়া উচিত তেমনি লো-সোডিয়াম, শতভাগ ফলের রস এবং পাতলা স্যুপ।

কমলা, স্ট্রবেরি, তরমুজ, আনারস, কিউই এবং বেদানা ইত্যাদি জ্বরের জন্য উপকারী খাবার। এই ফলগুলি ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ। এই সব ফলের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

প্রোবায়োটিক খাবার:

২০০৯-এ পেডিয়াট্রিক্সে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ জানিয়েছে যে, নিয়মিত প্রোবায়োটিক খাবার গ্রহণ করুন যাতে উপকারী লাইভ ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ নিশ্চিত হয়।

প্রোবাইয়টিক খাবার বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার অসুস্থ বাচ্চাদের জ্বর দারুণভাবে হ্রাস করতে পারে।

কিছু শিশুদের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শিশুদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল।

লাইভ ব্যাকটিরিয়া যুক্ত দই জ্বরের জন্য সেরা খাবারগুলির মধ্যে একটি। কম ফ্যাটযুক্ত টক দই সবসময়ের জন্য ভালো।

প্রোটিন খাবার:

জ্বর হলে প্রোটিন খাওয়া বাদ দিলে চলবে না। প্রোটিন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তি দিতে সহায়তা করে।

ডিমের সাদা অংশ, মুরগী বা টার্কির মাংস। এছাড়া কম বা ননফ্যাট দুধ, দই বা টোফু এবং দুধ দিয়ে তৈরি তরল খাবার।

জ্বরের সাধারণ খাবার:

জ্বর হলে ডাবের পানি, আখের রস, লেবুর রস, বেদনার রস, আনারস, স্ট্রবেরি, তরমুজ, পাকা পেঁপে ইত্যাদি খান।

চিকেন স্যুপ, সবজির স্যুপ অর্থাৎ বড়রা তরলজাতীয় অনেক খাবারই খেতে পারেন। বাচ্চাদের বুকের দুধ, চিকেন স্যুপ, ডাবের পানি, মধু, তাঁজা ফল এবং ওটমিল খেতে দিন।

বাচ্চাদের ক্যাফেইনটেড বেভারেজ, প্রসেসেড ফুডস একেবারেই দিবেন না। উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট এন্ড সুগার- এই খাবারগুলি বাচ্চাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ডেঙ্গু জ্বর ও প্লাটিলেট:

ডেঙ্গু জ্বর হলে যেহেতু রক্তের প্লাটিলেট কমে যাই এবং কোনোরকম আঘাত ছাড়াই চোখ, নাক, খাদ্যনালী, মূত্রনালী, চামড়ার নিচে, মাড়িসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ হয়, পেটব্যথা ও অনেক সময় যকৃৎ বড়ো হয়ে যাই।

তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে খাবারের বিষয়ে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। যেসব খাবার রক্তক্ষরণ কমায় এবং প্লাটিলেট বাড়ায় সেগুলো বেশি করে খেতে হবে।

ভিটামিন “কে” সমৃদ্ধ খাবারগুলো রক্তক্ষরণ কমায়।

ভিটামিন-K – সমৃদ্ধ খাবার:

ভিটামিন-K – সমৃদ্ধ খাবারগুলি কি কি?

  • সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন K পাওয়া যায়। সবুজ শাকসবজির মধ্যে পালংশাক, সর্ষেশাক, ধনেপাতা, লেটুস পাতায় ভিটামিন “কে” বেশি পাওয়া যায়। সবজি ভালোভাবে ধুয়ে জুস করেও খেতে পারেন।
  • ব্রকোলি, ফুলকপি, পাতাকপি, turnip green বা ওলকপি ভিটামিন K এর ভালো উৎস। সবজির স্যুপ খান। চিকেন ও সবজি একসাথে স্যুপ করেও খেতে পারেন।
  • মাছ, লিভার (গরু ও অন্যান্য), মাংস, ডিম এবং cereals- তে অল্প পরিমানে ভিটামিন K পাওয়া যায়।

ডেঙ্গুজ্বর হলে যেসব খাবার খাবেন না:

ডেঙ্গুজ্বর হলে যেসব খাবার না খাওয়া ভালো –

  • অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার।
  • অতিরিক্ত মশলা ও তেল-চর্বি যুক্ত খাবার।
  • কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজ খাবেন না। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত এসব খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • চা বা কফি না খাওয়ায় ভালো।