আপনি কি ভাইরাস জ্বরে ভুগছেন? আনারস বা আনারসের জুস খান।

এই সময়ে ভাইরাসজনিত জ্বরে অনেকেই ভুগছেন। বর্ষাকালের এই সময়টায় আমরা অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ি।

সাধারণতঃ জুন- জুলাই মাসে ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জাঘটিত এই জ্বর বেশি দেখা যাই। তবে ভয় পাবার কিছু নেই। এই জ্বর ৪-৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাই।

জ্বর আমাদের প্রত্যেকেরই হয়। আমার কোনোদিন জ্বর হয়নি-এই কথা কেউ বলতে পারবে না। আমরা অনেকেই একাধিকবার জ্বরে ভুগেছি।

জ্বর কোনো রোগ নয়। রোগের লক্ষণ মাত্র। জ্বর যদি তিন সপ্তাহের মধ্যে না সারে তখন এটি ভয়ানক। কিন্তু আমরা ঐ আলোচনায় যাবো না।

এই বর্ষাকালেরই একটি ফল হলো আনারস। সুমিষ্ট, সুগন্ধ, ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ এক কথায় অসাধারণ। জুন-জুলাই মাসে এটি বেশি পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় এই ফলটি এখন সারাবছর পাওয়া যায়। বর্ষাকালের এই ফল আনারস বর্ষাকালের এই জ্বর সারাতে দারুন কার্যকর।

ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে যা হতে পারে :

  • ঠান্ডা অনুভব করা
  • মাথাব্যাথা
  • শরীরে ও গিরায় ব্যাথা
  • খাওয়ায় অরুচি
  • ক্লান্তি, দুর্বলতা
  • নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া
  • চুলকানি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে

আনারস বা আনারসের জুস কেন খাবেন?

আনারস স্বতন্ত্র উপাদান ইউনিক এনাটমি এর জন্য বিখ্যাত। আনারসে বেশি থাকে:

  • ভিটামিন “সি” ও ম্যাঙ্গানিজ
  • এনজাইম( ব্রোমেলিন)
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস  এছাড়া—-
  • ক্যালোরি কম
  • ফ্যাট খুবই কম, নেই বললেই চলে
  • যথেষ্ট ফাইবার বিদ্যমান

রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান:

আনারসে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এই সময়ের জ্বরে এই সময়ের আনারসতো খেতেই হবে।

সুমিষ্ট স্বাদের আনারস মুখের অরুচী দূর করার পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের প্রতিদিনের গ্রহণকৃত খাবার থেকে আইরন শোষণে সহায়তা করে।

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য যে কোনো কারণে জ্বর হোক না কেনো, ঔষুধতো আমরা খাবো। তবে এর পাশাপাশি জ্বর হলে যেহেতু ডাক্তাররা প্রচুর তরল ও সাহজপাচ্য খাবার খেতে বলে সেহেতু এই জ্বরে আনারসের জুস সর্বোত্তম একটি খাবার।

আনারসে ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “বি” ও রয়েছে। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি চোখের জন্য ভালো এবং ভিটামিন বি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:

একটু অন্যভাবে বা মজা করে বলি। আনারস বলছে, আমি অন্য অনেক ফল অপেক্ষা শ্রেষ্ট। কারণ আমার ভেতর রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি।

পেয়ারা বলছে, আমার ভেতরেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। লেবুতে রয়েছে। আমলকিতে এদের সবারথেকে বেশি রয়েছে। তাহলে আনারসের কি মূল্য থাকলো।

কিন্তু না। আনারসের ভেতরে এমন কিছু আছে যা অন্য ফলে নেই। কিছু স্বতন্ত্র উপাদান এক একটি ফলকে একে অপরের থেকে আলাদা করেছে।

যেমন আনারসে রয়েছে “ব্রোমেলিন” নামক একটি এনজাইম। এটি প্রোটিনকে সহজে ভেঙ্গে দেয়।

কেন জানিনা প্রোটিনের সাথে ব্রোমেলিনের এতো ভাব। এতো ভালোবাসে প্রোটিন, ব্রোমেলিন নামক এনজাইমকে, সংস্পর্শে আসামাত্র মিলেমিশে একাকার।

এই এনজাইম আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। জ্বর হলে পেটের সমস্যা, বমি, ডায়রিয়া খুবই সাধারণ একটা ঘটনা। তাই আনারস খান এবং পেটের সমস্যা দূর করুন।

হাড়ের ক্ষয়রোধ করে ও ব্যাথা কমায়:

স্বতন্ত্র একটি উপাদান যেটা আনারসে বেশি পরিমানে পাওয়া যাই, সেটা কি ? সেটি হলো ম্যাংগানিজ।

আনারসে বিদ্যমান ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম হাড়ের বৃদ্ধি ঘটায় ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

আমরা অনেকেই হাড়ের ক্ষয়রোগে ভুগছি। বয়স ৫০ বা ৬০ পেরোনো arthritis রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই শত শত বাড়ছে।

এছাড়া ছোটবেলা থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ-এর অভাবজনিত কারণে হাড়ের গঠন ঠিকঠাক না হওয়া, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটা বড় সমস্যা।

এরপর আসি ব্যাথার সমস্যায়। “ব্যাথা”- শব্দটির সাথে আমরা একটু বেশি পরিচিত। প্রত্যেকেই আমরা এই সমস্যায় ভুগে থাকি।

উপকরণঃ

আনারস একটি, চিনি স্বাদমতো, লবণ স্বাদমতো, বরফ অপশনাল, পানি এক কাপ। আনারস বেশী মিষ্টি হলে চিনি কম দিলেই হবে।

অনেকে সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খান।

প্রস্তুতপ্রণালীঃ

আনারস ভালোভাবে কেটে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। এরপর ঐ টুকরো করা আনারস, চিনি, পানি একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।

এরপর ছেঁকে নিয়ে ফ্রিজে রেখে একটু ঠান্ডা করে খেতে পারেন বা অল্প পরিমানে বরফকুঁচিও মেশাতে পারেন।

সতর্কতাঃ

  • গর্ভাবস্থায় আনারস না খাওয়াই ভালো। গর্ভপাত হতে পারে। এ বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • দুধ ও আনারস একসঙ্গে খাবেন না। বিষক্রিয়া হতে পারে।
  • আনারস খেয়ে কারো এলার্জি জনিত সমস্যা হলে খাবেন না। অল্প খাবেন। আস্তে আস্তে শরীর মানিয়ে নিবে।