গরমে ডায়রিয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায়।

ডায়রিয়া বা উদরাময় হল প্রতি দিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ হওয়ার রোগ।

এটা প্রায়শ কয়েক দিন স্থায়ী হয় এবং এর ফলস্বরূপ শরীর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে গিয়ে দেখা দেয় পানি শূন্যতা। এতে করে রোগী আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে।

গরম এলেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তাই এই সময় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-আক্রান্ত নানা বয়সের রোগীর ভিড় দেখা যায়।

ডায়রিয়া হওয়ার কারণ

সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণেই ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস, কখনো কখনো নোরো ভাইরাস।

তবে পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা গেলে বা প্রবল জ্বর দেখা দিলে তা ভাইরাস নয়, বরং ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

আর দুই বছরের নিচে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হলো, রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। নিচে ডায়রিয়া হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।

  • বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব।
  • সাধারণত গরমে প্রচণ্ড পিপাসায় অনেকেই রাস্তাঘাটের শরবত, পানি পান করে থাকেন। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না এবং ডায়রিয়ার কারণ।
  • অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা।
  • যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ করা।
  • সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া। অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা।
  • অপরিছন্ন দোকান বা অপরিছন্ন রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়া।
  • বাসি, পঁচা খাবার খাওয়া।

ডায়রিয়া হলে কী করবেন?:

আগেই বলেছি ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় এবং রক্তে লবণের তারতম্য দেখা দেয়। এ দুটোকে রোধ করাই ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা।

প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে।

(জন্ম থেকে দুই বছর: ৫০-১০০ মি.লি. দুই বছর থেকে ১০ বছর ১০০-২০০ মি.লি. ১০ বছর বা তার বেশি বয়সে পুর একটি বা অর্ধেক স্যালাইন পরিস্কার পানি দিয়ে গুলিয়ে খেতে হবে।)

খাবার স্যালাইন আমরা ঘরেই তৈরি করে নিতে পারি।

উপকরণঃ এক গ্লাস পরিষ্কার ফুটন্ত পানি ঠান্ডা করে নিতে হবে + তার মধ্যে একচিমটি লবণ +একমুঠো চিনি নিয়ে একটি পরিষ্কার চামচ দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে।

খাবার স্যালাইন ছাড়াও ঘরে তৈরি তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে।
বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধও খাবে।

এছাড়া পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করতে হবে।

যথেষ্ট প্রস্রাব হচ্ছে কি না সেদিকেও লক্ষ করতে হবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া বা জিভ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া পানিশূন্যতার লক্ষণ।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে বা বমির কারণে পর্যাপ্ত স্যালাইন না খেতে পারলে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকার উপায়:

  • খাবার আগে সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • মাছি থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং রান্না করা খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে।
  • রাস্তাঘাটের শরবত, পানি, খাবার ইত্যাদি পান পরিহার করতে হবে।
  • পঁচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
  • ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধু মায়ের দুধ।
  • খাবার তৈরির আগে এবং পায়খানার পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।