মাশরুম ক্যান্সার প্রতিরোধী, হাড়ের ক্ষয় রোধ করে ও হার্টের জন্য ভালো।

মাশরুম বিভিন্ন আকার এবং রঙের হয়। মাশরুম বেশ স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদুও। বহু বছর ধরে মাশরুম বিভিন্ন সংস্কৃতির রান্নায় ব্যবহার করা হয়। মাশরুম মাংসোর মতো করে রান্না করে খেতে পারি এছাড়া সবজিতে দিয়ে খেতে পারি।

প্রাচীন রোমানরা মাশরুমকে “ফুড ফর দি গড” মনে করতো। চীন, রাশিয়া ও মেক্সিকোর মানুষের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মাশরুম অতিমানবীয় শক্তি প্রদান করতে সক্ষম। মাশরুম ইংরেজিতে: mushroom বৈজ্ঞানিক নাম: Aggaricus bisporus.

মাশরুম ভিটামিন “ডি” এর একটি ভালো উৎস। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

মাশরুমের অনেক প্রজাতি রয়েছে এবং সব প্রজাতি মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। মাশরুম বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মাশরুম প্রজাতির শতকরা ৫০ ভাগ খাওয়ার যোগ্য আর বাকি ৫০ ভাগই খাওয়ার অযোগ্য।

মাশরুমের স্বাস্থ্য উপকারিতা

মাশরুম ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, রোগ প্রতিরোধে ও ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং ফাইবার বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো খাবার। নিচে মাশরুমের মানুষের খাওয়ার উপযোগী স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

মাশরুম ভিটামিন “বি” সমৃদ্ধ:

মাশরুমে রিবোফ্লাভিন (বি-২), ফোলেট (বি-9), থিয়ামিন (বি-1), পেন্টোথেনিক অ্যাসিড (বি-5), নিয়াসিন (বি-3) আছে।

ভিটামিন “বি” খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি ভিটামিন “বি” গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও মাশরুমে থাকা কোলাইন পেশীর গতিবিধি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধী:

জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অনুসারে, মাশরুমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুস ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং অন্যান্য অনেক ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে

কিছু সূত্র বলেছে যে, মাশরুমে থাকা সেলেনিয়াম (selenium) ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়:

ডায়েট্রি ফাইবার টাইপ-2 ডায়াবেটিস সহ বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভালো করতে সহায়তা করতে পারে। ২০১৮ এক পর্যালোচনা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, যে লোকেরা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাই তাদের মধ্যে টাইপ-2 ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

কারণ ফাইবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। ৭০ গ্রাম মাশরুম প্রায় ১ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।

হার্টের জন্য ভালো:

মাশরুমে থাকা ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন “সি” কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে। পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ডায়েটে লবণের পরিমাণ কমাতে এবং পটাসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

বর্তমান নির্দেশিকা অনুসারে, লোকদের প্রতিদিন প্রায় ৪,৭০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। মাশরুম পটাসিয়াম এর একটি ভালো উৎস। তাই মাশরুম হার্টের জন্য ভালো।

কপার সমৃদ্ধ:

কপার আমাদের শরীরে লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে, যা সারা শরীর জুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।

হাড়ের স্বাস্থ্য, স্নায়ুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্যও খনিজটি গুরুত্বপূর্ণ।

রান্না করার পরেও, ১ কাপ মাশরুম প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কপারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভালো:

অনেক মহিলা ভ্রূণের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড (ফোলেট) পরিপূরক হিসাবে গ্রহণ করেন।

মাশরুম ফোলেটের একটি ভালো উৎস। এক কাপ মাশরুমে ১৬.৩ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে। এজন্য মাশরুম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভালো।

হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

নিয়মিত মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস অস্থি সংক্রমণের, অস্থিসন্ধি ব্যথা এবং হাড়ের ক্ষয়জনিত অন্যান্য অসুবিধাগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে। প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকার জন্য মাশরুম আমাদের হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

মাশরুম খাওয়ার সুবিধা কী?

সব ধরণের ভোজ্য মাশরুমে বিভিন্ন প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে। এগুলিতে ভিটামিন “বি” এর পাশাপাশি সেলেনিয়াম নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে এবং কোষ ও টিস্যুগুলির ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে।

সতর্কতা:

কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো না। তাই পরিমাণ মতো আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা বুঝে খাবেন। কিছু কিছু বন্য মাশরুম বিষাক্ত হয়। এজন্য মানুষের খাওয়ার উপযোগী প্রজাতি দেখে মাশরুম খেতে হবে।

রেফারেন্স: