স্ট্রবেরী ত্বক ও হার্টের জন্য ভালো এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ।

সত্য খুবই আশ্চর্য একটি ফল স্ট্রবেরী (Strawberry)। সব ফলে বীজ থাকে ফলের ভিতরে কিন্তু স্ট্রবেরীর বীজ থাকে তার গায়ে অর্থাৎ স্কিনে। দেখতে কি সুন্দর পেঁকে পুরা লাল টুকটুকে হয়ে যায়। এতো সুন্দর একটা ফল কার খেতে মন না চাই।

কিন্তু আমাদের দেশে এটি সহজলভ্য নয় কারণ এটি শীত প্রধান দেশের ফল। তবে আমাদের দেশে যেসব অঞ্চলে শীতটা বেশি দিন ধরে থাকে সেসব অঞ্চলে চাষ করা হয়।

স্ট্রবেরীতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সামগ্রী থাকে এবং দ্রুত কোনও ব্যক্তির রক্তে শর্করাকে বাড়ায় না, যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য এগুলো আদর্শ খাবার। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) পরামর্শ দিয়েছে যে দিনে ৪০০ গ্রাম ফল এবং শাক সবজি খেলে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাই।

স্ট্রবেরী ৬০০ এরও বেশি প্রকারের রয়েছে। স্ট্রবেরীর আদি বাস ইতালির রোমে। দারুণ স্বাদ আর নানা উপকারীতার জন্য দ্রুত ফলটির কদর ছড়িয়ে পড়ে সারা ইউরোপে। এছাড়া ফ্রান্সেও স্ট্রবেরীকে বিশেষ কদর করা হয়।

দেখা মাত্র খেতে ইচ্ছা করে। স্বাদে হালকা টক ও মিষ্টি স্টবেরী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমায়, ডায়াবেটিস ও কোস্টকাঠিন্যতা দূর করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং রূপচর্চায়ও ব্যবহার করা হয়।

রঙের পাশাপাশি স্ট্রবেরীর ঘ্রাণ বা ফ্লেভারের কথা না বললে নয়, এর সুমিষ্ট ঘ্রাণের কারণে আইস্ক্রিম, জ্যাম, জেলি, সিরাপ, চকোলেট, কেক ইত্যাদিতে স্ট্রবেরীর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাচ্চাদের পেস্টেও স্ট্রবেরী ফ্লেভার ব্যবহার করা হয়।

স্ট্রবেরীর পুষ্টিগুণ

নিচে স্ট্রবেরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • পানি: ৯১%
  • কার্বোহাইড্রেট: ৭.৭%
  • ক্যালোরি: ৩২
  • পানি: ৯১%
  • কার্বহাইড্রেট:৭.৭ গ্রাম
  • চিনি:৪.৯ গ্রাম
  • ফাইবার:২ গ্রাম
  • ভিটামিন “সি”:৭১% (DV)
  • পটাশিয়াম:২৫৪ গ্রাম
  • ফোলেট:৪০(MCG)

স্ট্রবেরীর উপকারীতা

স্ট্রবেরী ফেনোলিক (phenolic) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সেরা উৎস। অন্যান্য ফলের তুলনায় স্ট্রবেরীতে ২-১১ গুণ বেশি ফেনোলিক আছে। এছাড়া এলাগিটান্নিনস (Ellagitannins) এবং এলজিক অ্যাসিড এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমান বেশ রয়েছে স্ট্রবেরীতে। নিচে স্ট্রবেরীর উপকারীতা দেওয়া হলো –

ত্বক ও চুলের জন্য:

ত্বক ও চুলের যত্নে স্ট্রবেরী ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ত্বকের জন্য স্ট্রবেরী দুর্দান্ত। স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “সি”। ভিটামিন “সি” ত্বককে ফ্রেশ রাখে এবং এটি বয়সের ছাপ কমাতেও দারুণ কার্যকর। এছাড়া স্ট্রবেরীতে থাকা ফলিক অ্যাসিড, বি-5, বি-6 চুলকে শক্ত ও মজবুত রাখে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ:

স্ট্রবেরীতে পানির পরিমাণ বেশি। তাই এই ফলে কার্বহাইড্রেটের পরিমাণ খুব কম ৭.৭ গ্রাম। এই কার্বহাইড্রেট বেশিরভাগ আসে – যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থেকে। স্ট্রবেরীর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ স্ট্রবেরী রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে না। এছাড়া ভিটামিন “সি” ও পরিমাণে বেশি আছে। তাই এই ফলটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ।

ফাইবার সমৃদ্ধ:

১০০ গ্রাম স্ট্রবেরীতে ২ গ্রাম ফাইবার থাকে। ডায়েট্রি ফাইবার অন্ত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং হজম স্বাস্থ্যে উন্নতি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি ফাইবার ওজন হ্রাস করতে ও কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

স্ট্রবেরীতে আছে প্রচুর ভিটামিন “সি” যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রকম সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। মাত্র এক কাপ স্ট্রবেরী প্রতিদিনের ভিটামিন “সি” এর চাহিদার ১০০% পূরণ করতে সক্ষম।

গর্ভবতীদের জন্য উপকারী:

গর্ভবতী নারীদের জন্য স্ট্রবেরী খুবই উপকারী খাবার। ফোলেট (ভিটামিন বি-9) টিস্যু বৃদ্ধি এবং কোষের ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ – এবং গর্ভবতী মহিলাদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ফোলেট অপরিহার্য মৌলিক উপাদান।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:

রক্ত ধমনীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু রক্ত ধমনীর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।স্ট্রবেরী পটাশিয়াম সমৃদ্ধ যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দেহের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে।

হার্টের জন্য ভালো:

স্ট্রবেরীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন রয়েছে। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। স্ট্রবেরীতে ২৫ টিরও বেশি বিভিন্ন অ্যান্থোসায়ানিন (anthocyanins) পাওয়া গেছে। এই অ্যান্থোসায়ানিন ফল এবং ফুলের উজ্জ্বল রঙের জন্য দায়ী। অ্যান্থোসায়ানিন সাধারণত ফলের স্কিন বা খোসাতে থাকে তবে স্ট্রবেরীর মাংসে অর্থাৎ স্ট্রবেরির ভিতরে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে। অ্যান্থোসায়ানিন সাধারণত ফল পেকে যাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে:

মরণ ব্যাধি ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বৃদ্ধি ছড়িয়ে পরে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বেরি জাতীয় ফল যেমন স্ট্রবেরী, ব্লুবেরি, ব্ল্যাক বেরি ইত্যাদি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। স্ট্রবেরি মুখের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সারের কোষগুলিতে টিউমার গঠনে বাধা দিতে পারে।

রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে:

কার্ব সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় স্ট্রবেরী শর্করা-সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় গ্লুকোজ হ্রাস এবং গ্লুকোজ ও ইনসুলিন উভয় ক্ষেত্রেই স্পাইক হ্রাস করে। বিপাক সিনড্রোম এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য স্ট্রবেরী বিশেষভাবে কার্যকর।

সূত্র:হেলথ লাইন