রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধী, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকরী।

রসুন হলো একটি ঔষধি বনজ লতা যেটা বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়ে চাষ করা হয়। পেঁয়াজের সাথে রসুনের মিল রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম – Allium Sativum এবং ইংরেজি নাম Garlic.

মাছ, মাংসের হাজারো মজাদার আইটেম থেকে শুরু করে মজাদার বিরিয়ানি, পোলাও, সূপ- রসুন ছাড়া ভাবাই যায় না। এছাড়া মজাদার রসুনের আঁচার আমরা ভর্তার সাথে খেয়ে থাকি।

কাঁচা অথবা অল্প একটু ভেঁজে রসুন খাওয়া ভালো। রসুন বেটে মিহি করে, তেলে কষিয়ে, এরপর অধিক তাপে কড়াইতে বা প্রেসার কুকারে রান্না করে খেলে এর উপকারিতা অনেকটাই কমে যায়- অথচ আমরা এটাতেই অভ্যস্থ।

কাঁচা রসুনে তীব্র গন্ধ থাকে বলে অনেকে কাঁচা রসুন খেতে চাই না। রসুনের কোঁয়ার খোসা ছাড়িয়ে একটু থেঁতো করে বা আস্ত কোঁয়া লেবুর রসে এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখলে ঝাঁঝালো গন্ধ একেবারেই থাকে না। এভাবে আপনি অনায়াসেই কাঁচা রসুন খেতে পারবেন।

বর্তমানে রসুন এথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীগুলি শক্ত করা), উচ্চ কোলেস্টেরল, হার্ট অ্যাটাক, করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং হাইপারটেনশন সহ বিভিন্ন রোগে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া অনেকে রসুনকে ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, পেটের ক্যান্সার, রেকটাল ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্যও ব্যবহার করে।

রিচার্ড এস রিভলিন নিউট্রিশন জার্নালে লিখেছেন যে, প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটস বর্তমানে “পাশ্চাত্য ঔষধের জনক” বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য রসুনের পরামর্শ দিয়েছেন।

হিপোক্রেটিস শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, পরজীবী, দুর্বল হজমশক্তি এবং অবসন্নতার জন্য রসুনের ব্যবহারের প্রচার করে।

রসুনের পুষ্টি উপাদান

রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম – Allium Sativum এবং ইংরেজিতে Garlic বলে। রসুনে ভিটামিন ও নিউট্রিয়েন্ট-এ ভরপুর যেমন- B1, B2, B3, B6, ফোলেট, ভিটামিন “সি”, ম্যাঙ্গানীজ, ক্যালসিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

রসুনের উপকারিতা

ঝাঝাঁলো গন্ধযুক্ত এই হার্বটি প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যান্সার কোলন, রেক্টাল, স্টোমাক, ব্রেস্ট ও প্রস্টেট ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিচে রসুন খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

মস্তিষ্কের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

রসুনে থাকা অর্গানো-সালফার (Organo-sulfur) গিলিওব্লাস্টোমাসের (glioblastomas) মতো মারাত্মক মস্তিষ্কের টিউমারের কোষ ধ্বংস করতে কার্যকর। ক্যান্সার জার্নাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, রসুনের তিনটি খাঁটি অর্গানো-সালফার যৌগিক – ডিএএস (DAS), ডিএডিএস (DADS) এবং ড্যাটস (DATS)- মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কোষ নির্মূল করতে পারে।

ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি:

চীনের একটি গবেষণা অনুসারে, ৭ বছরের অধ্যয়নের সময়কালে যারা কমপক্ষে সপ্তাহে দুবার কাঁচা রসুন খান, তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৪৪% কম ছিল।

অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১,৪২৪ ফুসফুসের ক্যান্সার রোগী এবং ৪,৫৪৩ জন সুস্থ্য ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তাদের ডায়েট এবং জীবনধারা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

এ থেকে জানা যায় যে, রসুন ফুসফুস ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমাতে পারে।

সর্দি এবং জ্বরে ভালো কাজ করে:

রসুনের পরিপূরকগুলি ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য পরিচিত। নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং সর্দি এবং জ্বর সহজে আপনাকে কাবু করতে পারবে না।

১২-সপ্তাহের একটি বড় সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন রসুন গ্রহণ করলে সর্দি-সংক্রমণের সংখ্যা ৬৩% হ্রাস পায়।

রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে:

মানব গবেষণায় দেখা গেছে রসুন উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়তা করে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৪ সপ্তাহের সময়কালে রক্তচাপ কমাতে ওষুধের মত রসুনের নির্যাস কার্যকর ছিল। প্রতিদিন রসুনের প্রায় ৪ কোয়া খাওয়া যাবে।

হার্টের রোগ প্রতিরোধে:

রসুনের উপকারিতার কথা বলতে গেলে প্রথমে যে উপাদানটির কথা বলতে হয় সেটা হলো এলিসিন।

অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিদিন দৈনিক রসুন গ্রহণ কলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সহায়তা করে।

রসুন LDL খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দিতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত ব্যক্তিদের LDL খারাপ কোলেস্টেরল প্রায় ১০-১৫% কমাতে পারে।

আলঝেইমার (স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া) চিকিৎসায়:

রসুনের পরিপূরকগুলির উচ্চ মাত্রা মানুষের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এনজাইমগুলি বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ হ্রাস করার সাথে সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে অ্যালঝাইমার ডিজিজ এবং স্মৃতিভ্রংশের মতো সাধারণ মস্তিষ্কের রোগগুলির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

আয়ু বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে:

রক্তচাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ রোগের ঝুঁকির কারণগুলো কমাতে সহায়তা করে। এ থেকে বোঝা যায় যে, রসুন আয়ু বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

বিশেষকরে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রামক রোগের সাথে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্স উন্নত করে:

এটি “পারফরম্যান্স বর্ধনকারী” খাবার গুলোর মধ্যে একটি। এটি প্রাচীনকালে ঐতিহ্যগতভাবে ক্লান্তি দূর করতে এবং শ্রমিকদের কাজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো।

এটি প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের দেওয়া হয়েছিল। রোডেন্ট স্টাডিতে দেখা গেছে যে, রসুন ব্যায়ামের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে, রসুন ব্যায়াম করার পর ক্লান্তি দূর করতে পারে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে:

রসুন মহিলাদের মধ্যে এস্ট্রোজেন (estrogen) বাড়িয়ে হাড়ের ক্ষয় হ্রাস করতে পারে।

মেনোপজাসাল মহিলাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসুন এস্ট্রোজেনের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস করতে পারে। এস্ট্রোজেন মহিলাদের মধ্যে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করতে পারে।

রসুন এবং পেঁয়াজ জাতীয় খাবারগুলো অস্টিওআর্থারাইটিসের উপর উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: medicalnewstoday, healthline