ডায়াবেটিস রোগীদের যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

ডায়াবেটিস এ কথাটির সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। এই রোগ সারানোর ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এজন্য খাবারদাবারে রাশ টানা হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়।

ডায়াবেটিস পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ ভাবে নিরাময় করা না গেলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।

ওষুধ সেবন, নিয়মিত ব্যায়াম করা নানা ভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবারে নিয়ন্ত্রণ না করেন।

পরিচিত অসুখ হলেও অনেক ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের নির্ধারিত খাবারগুলো মেনে চলেন না। ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু নির্দিষ্ট খাবার আছে যা একেবারেই খাওয়া উচিৎ নয়।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে-

সুপারশপ থেকে কেনা জুস:

ফলের জুস থেকে আস্ত ফল খাওয়াটাই অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর কারণ এতে থাকে ফাইবার। কিন্তু সুপারশপ থেকে কেনা যেকোন ফলের জুস কিনে খাওয়াটা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও নানা ধরণের কেমিক্যাল যা ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। ফলের জুস খেতে চাইলে বাড়িতেই চিনি ব্যবহার ছাড়া জুস বানিয়ে খেতে পারেন।

ক্যান্ডি:

শুধুমাত্র চিনিতে ভরপুর ক্যান্ডিই নয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির তৈরি কুকিস, সিরাপ বা যেকোন ধরণের পানীয় খুব ক্ষতিকর। এগুলো খেলে রক্তের সুগার অনেক বৃদ্ধি পায় এবং স্বাভাবিক ভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকেনা। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই খাবার গুলো সবসময় এড়িয়ে চলা উচিত।

কিশমিশ:

কিশমিশ খাওয়া খুব স্বাস্থ্যকর হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিশমিশ ভাল নয়। তবে অন্য যে কোন স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার থেকে কিশমিশের মত ড্রাইফ্রুট খাওয়া ভাল। তবে যেকোন ফল যখন ড্রাই করা হয় তখন তাতে চিনির পরিমান দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। তবে পরিমিত পরিমানে খেতে হবে।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস:

ডুবো তেলে ভাজা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ এই খাবার দেহের ওজন বৃদ্ধি করে এবং রক্তে প্রয়োজনীয় সুগারের মাত্রা নষ্ট করে দেয়। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, আলুর চিপস, ডোনাটস এই খাবার গুলো একজন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজের পরিমান কমিয়ে দেয়।

তাছাড়া অতিরিক্ত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস খেলে দেহে কোলেস্টোরল এর মাত্রা বেড়ে যায় এবং হার্ট এর সমস্যা হয়ে থাকে।

সাদা আটার রুটি:

শুধু সাদা আটার রুটি নয় সাদা ভাত, সাদা পাস্তা যেকোন জিনিস যা সাদা আটা দিয়ে তৈরি এই খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল নয়। এসব খাবার টাইপ 1 এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের রক্তের শর্করার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার না খাওয়াই ভাল।

ঘন দুধের তৈরি কোন খাবার:

দুধ খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল। কিন্তু কোন খাবার যাতে দুধের পরিমাণ খুব বেশি যেমন– দই, দুধের তৈরি ক্রিম, চিজ এই খাবার গুলো ডায়াবেটিস রোগীদের না খাওয়াই উত্তম।

চিপস:

বাজারে এখন অনেক রকম রিফাইনড তেল পাওয়া যায়। বলা হচ্ছে, এগুলোতে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যকর। কিন্তু মোটেই তা নয়। জানেন কি এই সব তেলে ভাজা চিপস বা স্ন্যাকস আপনার শরীরের বারোটা বাজাচ্ছে? সেই সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ব্লেন্ডেড কফি:

এক কাপ ব্লেন্ডেড কফির মধ্যে প্রায় ৫০০ ক্যালরি, ৯৮ গ্রাম কার্ব এবং ৯ গ্রাম ফ্যাট থাকে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই এর পরিবর্তে ফ্যাট ফ্রি কফি খেতে পারেন।

মধু, জ্যাম, জেলি:

প্রাতরাশে কি রোজ এগুলোই খান? তাহলেই এখনই ডায়েট চার্ট থেকে এদের বাদ দিন। বাজারচলতি মধু, জ্যামে থাকে ‘আর্টিফিশিয়াল সুগার’, যা স্বাস্থ্যের এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেই ভাল নয়।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রিডিবিটিস রোগীরা রক্তে শর্করার, ইনসুলিন এবং প্রদাহজনক চিহ্নিতকারীদের একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল যেহেতু তারা ৫০ গ্রাম সাদা চিনি বা মধু গ্রহণ করেছে।

ফ্লেভার্ড দই:

দই খেতে ভালবাসেন না এমন মানুষ বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দই খেতে হলে ঘরে পাতা দই খান। বাজার থেকে ক্রয় করা নানা রকম ফ্লেভার দেওয়া দই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

ট্রান্স ফ্যাট:

মন যতই চাক, অতিরিক্ত তেল মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। এই খাবারে থাকে ট্রান্স ফ্যাট যা ইনসুলিনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে এবং ওবেসিটির প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।

রেফারেন্স: